বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত যে একটা বড় শক্তি হতে চলেছে তার তথ্য বহুদিন আগেই সামনে এসেছে। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ২০২৫-এর মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়নে নিয়ে যাওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ব পর্যবেক্ষণ সংস্থা ম্যাকিনসে যে কথা শোনাল তা ফের একবার আশার আলো ছড়াল।
এই দশকটাই শুধু নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে পুরো শতকটাই ভারতের হতে চলেছে- এত বড় এক কথা বললেন বিশ্বখ্যাত মার্কিন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ম্যাকিনসের সিইও বব স্টারনফেলস। তিনি জানিয়েছেন ২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বের সম্পদ উৎপাদনের মধ্যে ভারতরে মানব সম্পদের অবদান থাকতে ২০ শতাংশ। বব মনে করছেন, ভারতের বিশাল কর্মক্ষম ও সম্পদ উৎপাদনে সক্ষম মানব সম্পদ এই ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা নিতে চলেছে। ভারতের এই বিশাল দক্ষ ও বুদ্ধিদীপ্ত মানবসম্পদকে দেখে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা এখন ভারতের দিকে ধাবমান। ভারতে এরা সাপ্লাই চেন খুলতে তৎপর হয়ে পড়েছে। আগামী দিনে এই তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পাবে। এর সঙ্গে তিনি আরও যোগ করেছেন যে ভারত যেভাবে ডিজিটাল লেনদেন সাফল্যের মুখ দেখেছে তা এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে। ভারত ডিজিটাল পেমেন্টকে শুধু নিজের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এর সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। এটা বিশ্ব অর্থনীতির কাণ্ডারি হতে ভারতকে সাহায্য করছে বলেও মনে করছেন বব।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই ভারতে তাদের শাখা খুলে রেখেছে ম্যাকিনসে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ভারতে আসার কথা ম্যাকিনসে-র সিইও বব স্টারনফেলসের। এই মুহূর্তে ভারতের বুকে ৫০০০ কর্মী রয়েছে ম্যাকিনসে-র। এই সংখ্যাকে ১০ হাজারে নিয়ে যেতে চাইছেন বব। অর্থনৈতিক সংবাদ পরিবেশনে সর্বভারতীয় স্তরে অগ্রণী সংস্থা ইকোনমিক টাইমসকে দেওয়া একটি বিশেষ সাক্ষারকারে এমনই কথা বলেছেন ম্যাকিনসের সিইও বব স্টারনফেলস।
এই সাক্ষাৎকারেই বব স্টারনফেলস-এর সামনে একটি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল যে অতিমারির মধ্যে এখনও পর্যন্ত ভারতের অর্থনীতি অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেকটাই ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষিতে কোন স্থানে রয়েছে বলে মনে করছেন বব? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বব জানান, ভারতের আর্থিক উন্নতির সবচেয়ে বড় মাপকাঠি হতে চলেছে এর বুদ্ধিদীপ্ত ও দক্ষ মানবসম্পদ। ভারত বিশ্বের সামনে এই মুহূর্তে ভবিষ্যতের প্রতিভাবান মানবসম্পদের পীঠস্থান হতে চলেছে বলে ছবিটাকে উজ্জ্বল করতে পেরেছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে মোট সম্পদ উৎপাদনের মধ্যে ২০ শতাংশ উন্নত মানব সম্পদের হাত ধরে ভারত সবধরনের উৎপাদনের সাপ্লাই-চেন-এর ধারনাকেই বদলে দিতে চলেছে। আর্থিক লেনদেনের পন্থাও সহজ হয়ে গিয়েছে জিডিটাল ইন্ডিয়ার জন্য। এর সঙ্গে রয়েছে কাঁচা মালের সরবরাহ। আর কাঁচা মালের সরবরাহ ভারতের বুকে খুব সহজেই এখন পৌঁছে যাওয়ার জায়গায় চলে গিয়েছে। সাক্ষাৎকারে এমনই সব উক্তি করেছেন ম্যাকিনসে কর্তা।
সম্প্রতি দেখা গিয়েছে যে বিগত দুই বছরে যেভাবে অন্যান্য উন্নত দেশ এবং উন্নয়শীল দেশগুলির অর্থনীতির হাল খারাপ হয়েছে সেই তুলনায় ভারত যথেষ্ট ভালো অবস্থানে রয়েছে। ভারতের তুলনায় আর্থিক বৃদ্ধির হারে বিশাল পতন ঘটেছে আমেরিকা, জার্মানি, রাশিয়া, ব্রিটেনের মতো দেশের। সেই তুলনায় ভারত ও চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হার অনেকটাই ভালো অবস্থায় রয়েছে। এমনকী, সম্প্রতি এই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক ফলাফল-এর রিপোর্ট সামনে এসেছে। তাতেও দেখা যাচ্ছে যে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমেছে। জিএসটি সংগ্রহেও রেকর্ড বৃদ্ধির ছবিটা প্রতিফলিত হয়েছে। এমনকি বেকারত্বের হারও বিশালভাবে কমেছে। এই মুহূর্তে বিশ্ব মন্দা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে প্রতিটি দেশ। কিন্তু, ভারতের অর্থনীতিবিদ ও বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা ভারতের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কাকে খুব একটা পাত্তা দিতে চাইছেন না। তাঁদের দাবি, ভারত ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা এবং জিএসটি উৎপাদন, এমএসএমই গুলোকে বাড়তি সুবিধা দিয়ে রেখেছে এবং যেভাবে আগে থেকেই উদ্যোগী হয়ে বাজারে ক্যাশ ফ্লো-কে বজায় রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তাতে বিশ্ব মন্দা এই দেশকে ছুঁতে পারবে না। সন্দেহ নেই যে বিশ্ব অর্থনীতির এই সঙ্কটের ক্ষণে ম্যাকিনসের সর্বোচ্চ কর্তার ভারতের অর্থনীতি নিয়ে বয়ান এক আশার আলো-কে আরও প্রসারিত করল।
আরও পড়ুন-
NDTV Vs Adani: আদানিদের শেয়ার কেনায় অনুমোদন নেই, জানিয়ে দিল এনডিটিভি
ফ্রি ফ্রি ফ্রি!এবার রেশন নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের, উপকৃত হবে দেশের ৮০ কোটি মানুষ
কতদূর এগোল বুলেট ট্রেনের অগ্রগতি, কাজের খতিয়ান পেশ করলো রেল মন্ত্রক