অক্সিজেনের অভাব নিয়ে দেশে চলা হাহাকারের আসল কারণ

  • দেশে বেড়েই চলেছে করোনার দাপট
  • অক্সিজেনের অভাবে হাহাকারের খবর আসছে
  • মৃত্যুর ঘটনাটাও ঘটেছে
  • আসলে এর পিছনে কারণ কী

Asianet News Bangla | Published : Apr 28, 2021 6:14 AM IST / Updated: Apr 28 2021, 03:14 PM IST

একটু অক্সিজেন হবে। এই কথাটা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় গেলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসছে। অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও শোনা যাচ্ছে প্রায় রোজ। দেশে করোনা রোগীদের অক্সিজেনের জোগান দিতে ময়দানে নামতে হয়েছে খোদ প্রধামন্ত্রীকে। কিন্তু ঠিক কী কারণে দেশে এত বড় সংকট তৈরি হল! বিশেষজ্ঞরা এই নিয়ে তাঁদের মত দিচ্ছে। এই মতামতগুলির মধ্যে 'দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এ গতকাল প্রকাশিত রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে, দেশের কোভিড সংকট ও অক্সিজেনের অভাব নিয়ে নেপথ্য ঘটনা। এস গুরুমূর্তি ২৭ এপ্রিল নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এই নিয়ে একটি প্রতিবেদনও লিখেছেন। সেই প্রতিবেদনের নির্যাস পাঠকদের জন্য এখানে তুলে দেওয়া হল। সেই সঙ্গে দেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়া ও অক্সিজেনের সংকটের নেপথ্য কাহিনি একটা ধারনা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফের অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু, ৮ ঘন্টা ধরে কোভিড আক্রান্তের দেহ বাড়িতে, ভয়ে কাঁপছে লেকটাউনবাসী  

এস গুরুমূর্তি-- 'গত সাতদিনে ভারতের জেলাগুলির এক পাঁচভাগ জেলায় গত সাতদিনে কোনও করোনা সংক্রমণের কেস নেই।' এমন কথাই সেদিন বলেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড: হর্ষ বর্ধন। চলতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি এমন কথাই বলেছিলেন হর্ষ বর্ধন। দু মাস পরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাজেহাল দেশ। গত বছর কোভিডে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ৯০ হাজারে চলে গিয়েছিল। সেখানে দু মাস আগেও করোনা সংক্রমণের দৈনিক সংক্রমণের মাত্রা ৯ হাজারের কমে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু তারপর কেমন যেমন সব উলটপালট হয়ে গেল। মগহারাষ্ট্র, দিল্লি, ছত্তিশগড়, গুজরাট, পঞ্জাব, দেশের একের পর এক রাজ্য থেকে আক্রান্তের সংখ্যা এত বাড়তে থাকল, যে দেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থায় বড় চাপ পড়ল। দিল্লিতে অক্সিজেনের অভাবে হাহাকার পড়ল। মৃত্যুর ঘটনাও ব্যাপকভাবে বেড়ে গেল।  করোনা বিশ্বে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠল ভারত। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোভিডকে কেন্দ্র করে কিছু এমন তথ্য যা হয়তো আমরা হারিয়ে ফেলেছি।

আরও পড়ুন: গুরুতর অসুস্থ, অক্সিজেন সাপোর্টে করোনা আক্রান্ত অভিনেত্রী অনামিকা, বাড়ছে শারীরিক জটিলতা

'লাভজনক' অভিযোগ

কোভিড কালে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর প্রথম ঘটনাটি ঘটে দিল্লির এক কর্পোরেট হাসাপাতালে। গত বছর করোনা কালে যে হাসপাতাল বড় মুনাফা করে। যা নিয়ে ন্যাশানাল হেরাল্ড নামের এক সংবাদপত্রে একটি খবরও প্রকাশিত হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল 'কোভিড কালে লাভ- বেসরকারী হাসপাতগুলিকে কি অধিগ্রহণ করার সময় এসেছে?' রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছিল করোনা রোগীদের জন্য নাকি দু সপ্তাহের মোট খরচের বিল ১২ লক্ষ পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। ঘরে থেকে করোনার চিকিৎসা করালেও ২২ হাজারের কাছাকাছি বল ধরানো হয়েছিল। আদালতে অভিযোগ জানানো পর হেল্থকেয়ার প্রদানকারীদের সং স্থা (AHP)এবং এফআইসিসিআই সদস্যরা একটি  স্বায়ত্তশাসিত নিয়ম চালু করে।

আরও পড়ুন: কুম্ভমেলায় শাহি স্নান, হু-হু করে বাড়ছে সংক্রমণ, বুধবার থেকে জারি কারফিউ

সেই নিয়মে AHP নির্ধারিত ভাড়া হয় এরকম-- জেনারেল ও ওয়ার্ডের বেড ভাড়া রাখা হয় ১৫ হাজার টাকা সঙ্গে অক্সিজেনের জন্য আরও ৫ হাজার। এফআইসিসিআই-নির্ধারিত ভাড়া আরও চড়া হয়। এমনকী পিপিই বিক্রিতেও মোটা লাভ রাখে হাসপাতালগুলি। ৩৭৫-৫০০ টাকায় পিপিই কিনে রোগীদের তা দশ গুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলেও হেরাল্ডের সেই রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছিল। এই ধরনের হাসপাতালগুলি অক্সিজেন সরবরাহকরা সাংবিধানিক অধিকার বলে সরকারের কাছে চিঠি লেখে। পরে সেই অক্সিজেন প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা চার্জ করে রোগীদের থেকে। অথচ কিছু টাকা বিনোয়োগ করে এই ধরনের হাসপাতালগুলি অল্প খরচেই অক্সিজেন প্রস্তুত করতে পারে। 

অক্সিজেন বেসরকারীকরণ, নিয়ন্ত্রণহীন

অক্সিজেন প্রস্তুত, ব্যবসা, স্টক করা এবং ব্যবহার বেসরকারীকরণ করা হয়েছে। ভারতে অক্সিজেনের ব্যবসায় সরকারি নিয়ন্ত্রন নেই। যদিও এর দাম নির্ধারণ করে জাতীয় ফার্মা মূল্য নির্ধারক কমিটি বা NPPA। এটি কেন্দ্রীয় রসায়ন ও সার মন্ত্রকের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। অক্সিজেন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি সরাসরি শিল্প-কারাখানা, হাসপাতাল এবং সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা সরবরাহের দায়িত্ব নেয়। হাসপাতালগুলি পরিকল্পনা-হিসেব করে জানায় এমার্জেন্সির জন্য কতটা অক্সিজেন লাগবে। এখানে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল, অক্সিজেন তৈরির জায়গা থেকে হাসপাতালগুলির দূরত্ব। দিল্লির হাসপাতালগলি থেকে অক্সিজেন তৈরির কেন্দ্রগুলি হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে। যাতায়াতেই বেশ কয়েকদিন লেগে যায়। এখানেই তৈরি হয়ে যায় সমস্যা, বিশেষ করে আপৎকালী পরিস্থিতিতে।

জোগানে কমতি নেই
অক্সিজেনের জোগানে কিন্তু কমতি নেই। আমরা দিনে ১ লক্ষ টন অক্সিজেন প্রস্তুত করি। যার মধ্যে গুজরাটের এক কোম্পানি গোটা দেশের পাঁচ ভাগের এক ভাগ প্রস্তুত করে। তবে এই অক্সিজেনের মাত্র একভাগ হয় চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য। তবে করোনা সংকটের কারণে এই অক্সিজেনের জোগান চিকিৎসাক্ষেত্রে বেড়ে ৪-৫% হয়েছে। অক্সিজেনের মূল খরচটা পড়ে সরবারাহে। তরল অবস্থায় থাকা অক্সিজেন যে সুরক্ষিত, ভারী ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে সরবরাহ হয় তাদের দাম ৪৫ লক্ষ টাকার মত। আরও অবাক করা হল, ৩০০ টাকার অক্সিজেন ভরা হয় ১০ হাজার টাকার সিলিন্ডারে। ফলে সিলিন্ডার স্টকিং অনেক সময় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই অতিমারীকালে দিল্লিতে অক্সিজেনের সাপ্লাই চেন ধাক্কা লাগার প্রধান কারণ যেখান থেকে অক্সিজেন  নিয়ে আসা হবে সেটা বেশ কয়েকশো কিলোমিটার দূরে।
 

Share this article
click me!