অক্সিজেনের আকাল- মোদীকে দুষছেন মমতা, কিন্তু আসল সত্যটা ঠিক কেমন

  • অক্সিজেন সঙ্কট নিয়ে সামনে এল বেশকিছু তথ্য
  • অক্সিজেন সঙ্কট নিয়ে সমানে সমালোচনা হচ্ছে
  • মোদী সরকারে তীব্র সমালোচনায় মমতা থেকে কেজরিওয়ালরা
  • কেন্দ্রীয় সরকারের পাওয়া একটি রিপোর্ট কিন্তু সামনে এনেছে অন্য সত্য 

Asianet News Bangla | Published : Apr 25, 2021 2:21 PM IST / Updated: Apr 25 2021, 08:01 PM IST

প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নরেন্দ্র মোদীকে দুষছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারবার তিনি অভিযোগ করছেন, অক্সিজেন সঙ্কট চরমে ওঠায় দায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রী মোদী। এমনকী, তিনি এমনও অভিযোগ করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দ অক্সিজেন উত্তর প্রদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সূত্র থেকে পাওয়া খবরে দেখা যাচ্ছে ১৬২ টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির জন্য রাজ্যগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এগুলি সবই ছিল প্রেসার সুইয়িং অ্যাডসোরপশন বা পিএসএ। এর ফলে দেশে চিকিৎসাক্ষেত্রে অক্সিজেনের জোগান ১৫৪.১৯ মেট্রিক টন বেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, শেষমেশ ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৩টি অক্সিজেন প্ল্যান্টকে এখন পর্যন্ত স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মতে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স পশ্চিমবঙ্গ ও  রাজস্থানের। এই দুই রাজ্যে একটিও অক্সিজেন প্ল্যান্ট এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়নি। দিল্লি-তে মাত্র ১টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। অথচ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন না হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। 

 যে ৩৩টি পিএসএ অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে, তারমধ্যে মধ্য-প্রদেশে ৫টা, হিমাচল প্রদেশে ৪টি,  চণ্ডীগড়, গুজরাট এবং উত্তরাখণ্ডে ৩টি করে এবং ২টি করে বিহার, কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানায়, ১টি করে প্ল্যান্ট অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগঢ়, দিল্লি, হরিয়াণা, কেরল, মহারাষ্ট্র, পদুচেরি, পঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশে। সুতরাং দেখাই যাচ্ছে যে এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের নাম নেই। এতে পরিস্কার যে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের আওতায় একটিও অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি হয়নি।  

এই ১৬২টি পিএসএ অক্সিজেন প্ল্যান্টের জন্য প্রথম দফায় ২০১.৫৮ কোটি টাকাও বরাদ্দ করেছিল মোদী সরকার। দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে দিল্লি সরকারকে ৮টি প্ল্যান্টের জন্য পিএম কেয়ার্স থেকে অর্থ মঞ্জুর করা হয়েছিল।  পশ্চিমবঙ্গে ৫টি প্ল্যান্ট বসানোর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পিএম কেয়ার্সে। রাজস্থানেও ৪টি পিএসএ প্ল্যান্ট বসানোর কথা ছিল। 

"

কেন্দ্রীয় সরকারে একটি সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে, কোভিড ১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ-এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নানা ধরনের উদ্যোগ এবং পরিকল্পনাকে কার্যকর করছেন। অথচ, তখন বরাদ্দ হওয়া প্রকল্পকেও বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা দিল্লি সরকরা অথবা রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার। এই মর্মে বিজেপি সূত্র থেকে একটি কর্মপ্রণালিও প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে দেখানো হয়েছে গত এক সপ্তাহে কীভাবে মোদীর নেতৃত্বে একের পর এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দেশে অক্সিজেনের সরবরাহকে চালু রাখতে এবং কোভিডের জেরে তৈরি হওয়া চাহিদার মোকাবিলায়- 
১। জার্মানি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে ২৩টি মোবাইল অক্সিজেন জেনারেশন প্ল্যান্ট। 
২। একইভাবে বায়ুসেনার বিমানে আমিরশাহী থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন অক্সিজেন ট্যাঙ্কার। 
৩। সিঙ্গাপুর থেকেও উড়িয়ে আনা হয়েছে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন অক্সিজেন ট্যাঙ্কার। 
৪। দেশের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে অক্সিজেন ভর্তি ট্যাঙ্কার পৌঁছে দিতে রেল মালবাহী ট্রেন অক্সিজেন এক্সপ্রেস চালাচ্ছে। 
৫। ৩২টি রাজ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৬২টি পিএসএ অক্সিজেন প্ল্যান্ট। যার মধ্যে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৩টি প্ল্যান্ট স্থাপন হয়েছে। এপ্রিলের শেষে আরও ৫৯টি পিএসএ প্ল্যান্ট এবং মে মাসের শেষে আরও ৮০ টি পিএসএ প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। 
৬। এছাড়াও জেলা জুড়ে মোট ৫৫১টি সুলভ অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোরও সিদ্ধান্ত রবিবার ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। 
৭। এমনকী, দেশের বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাইকুন- যেমন আদানি, টাটা, বিড়লা, আম্বানি, জিন্দালদের কাছেও অক্সিজেন চাওয়া হয়েছে, যাতে তারা তাদের কলকারখানায় থাকা অক্সিজেন সিলিন্ডার এই মুহূর্তে দে্ধ্বেশের হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে মানুষের চিকিৎসা সেবায় দিতে পারেন। 
৮। দিল্লিতে ১০০-এর বেশি আইসিইউ বেড তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অক্সিজেনের সরবরাহকে পর্যাপ্ত করা হয়েছে। 
৯। রেমডিসিভরের উৎপাদনকে ৯০ লক্ষ মেট্রিক টন করা হয়েছে প্রতি মাসে, যেখানে আগে মাসে ৪০ লক্ষ রেমডিসিভর উৎপাদন হতো।
১০। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে ডিআরডিও, আইটিবিপি, সেনাবাহিনী মেডিক্যাল বেড থেকে শুরু করে চিকিৎসক এবং আরও নানা ধরনের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। 
১১। শিল্পসংস্থাগুলি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রেকর মঞ্জুরি পেলেই দেশজুড়ে কমিউনিটি সার্ভিস রেন্ডারের আওতায় একাধিক স্বাস্থ্য পরিষেবার কাঠামো তৈরির বিষয়ে অঙ্গিকারবদ্ধ হয়েছে। 
১২। মে মাসের ১ তারিখ থেকেই ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে করোনা টিকাকরণ কর্মসূচি চালু করে দেওয়া হচ্ছে। 
১৩। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি করোনা টিকাকে বিনামূল্যে প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 
১৪। দেশের ৮০ কোটি মানুষকে ২ মাসের জন্য ৫ কিলো করে খাদ্য শস্য বিনামূল্যে প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর জন্য ২৬,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। 

"

-- কেন্দ্রীয় সরকারের এই সূত্রে দাবি করা হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে না পড়তেই এক সপ্তাহে এতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। অথচ, মোদী বিরোধী শক্তিরা শুধুমাত্র সমালোচনা করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। তারা যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অর্থ বরাদ্দ পেয়েও মানবিক প্রকল্পকে রূপায়ণ করছে না সে অভিযোগ করছে তারা। বিজেপি-র এই সূত্র থেকে কংগ্রেসের ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে। অভিযোগ, উত্তরাখণ্ডে যখন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছিল তখন ত্রাণকাজে নেওয়া লরির চালকদের ডিজেল বা পেট্রোলের পয়সাও দেওয়া হয়নি। অথচ, এমন এক অতিমারির মধ্যে কেন্দ্রের মোদী সরকার কোনওভাবেই কোনও জিনিসের ঘাটতি হতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার জন্য এখন পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই কিট, মাস্ক, ভেন্টিলেটরের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। বিজেপি-র এই সূত্রে এমনও দাবি করা হয়েছে যে ১০০ বছর পর ফের এক ভয়ানক অতিমারির সামনে বিশ্ব। আমেরিকা থেকে শুরু করে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ইটালির মতো ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিরাও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। ভারত এই অতিমারির মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে যেমন এক অনবদ্য লড়াই দিচ্ছে, ঠিক তেমনি দেশের তিনি বাহিনী যেমন সেনাবাহিনী, নৌসেনা এবং বায়ুসেনা-ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, এরপরও যেভাবে অতিমারিকে সামনে রেখে শুধুমাত্র রাজনীতির জন্য নরেন্দ্র মোদীকে বদনাম করা হচ্ছে তা দুর্ভাগ্যজনক বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। 

Share this article
click me!