কোভিড-১৯ শুধুমাত্র শ্বাসকষ্টজনিত সংক্রমণই ঘটায় না
মানব মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবের গ্রে ম্য়াটার-ও কমিয়ে দিচ্ছে
এর ফলে গুরুতর কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে স্নায়বিক সমস্যা
কীভাবে ফিরে পাওয়া যেতে পারে মগজাস্ত্রের জোর
এতদিন ধারণা ছিল কোভিড-১৯ শুধুমাত্র শ্বাসকষ্টজনিত সংক্রমণই ঘটায়। কিন্তু, সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, না, কোভিডের কুপ্রভাব পড়ে মানব মস্তিষ্কের উপরও। নিউরোলজিস্টরা সতর্ক করছেন, কমে টোল যেতে পারে মস্তিষ্কের ফর্ন্টাল লোবের ধূসর পদার্থ বা গ্রে ম্য়াটার (Grey Matter)। আর এই গ্রে ম্যাটার মস্তিষ্কে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলাফেরা থেকে স্মৃতিশক্তি এবং বিভিন্ন আবেগ নিয়ন্ত্রণ - সবই নির্ভর করে এর উপর।
সম্প্রতি জর্জিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই বিষয়ে একটি ছোট্ট গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেইসব গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের শরীরে জ্বর থাকে, চিকিৎসার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তাদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব বা সম্মুখভাগে, ধূসর পদার্থের পরিমাণ কমে গিয়েছে। তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে 'নিউরোবায়োলজি অফ স্ট্রেস জার্নাল'এ। তাদের গবেষণা করা হয়েছে অবশ্য মাত্র ১২০ জন নিউরোলজিকাল রোগীদের সিটি স্ক্যান বিশ্লেষণের ভিত্তিতে। দেখা গিয়েছে, তারমধ্যে গুরুতর কোভিড-১৯ সংক্রামিত ছিলেন ৫৮ জন।
জর্জিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের গবেষণার আকারটি ছোট হলেও ভারতের প্রথমসারির নিউরোলজিস্টরাও বলছেন তাদের অভিজ্ঞতা বলছে, এই গবেষণা সঠিক। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কোভিড-১৯ রোগীদের প্রায় ১৫ শতাংশের ক্ষেত্রে স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। অনিদ্রা, এনসেফালোপ্যাথি, স্ট্রোক, গন্ধ এবং স্বাদ না পাওয়া, পেশী এবং নিউরোপ্যাথিক ব্যথা, এনসেফালাইটিস, মৃগী, গুলেন-ব্যারি সিন্ড্রোম, বিভ্রান্তি এবং মেজাজের আচমকা পরিবর্তনেরর মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের ক্ষেত্রে।
ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকাকে ওখার্ড হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডা. পবন পাই জানিয়েছেন, কোভিড-১৯'এর গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে, যাদের দীর্ঘাদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হচ্ছে এবং অক্সিজেন বা ভেন্টিলেটর সহায়তার প্রয়োজন হচ্ছে, তাদের পরবর্তী ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্নায়বিক উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। পদ্মশ্রী পুরষ্কার প্রাপ্ত তথা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ও নিউরোসায়েন্স প্রতিষ্ঠানের (NIMHNHS) ডিরেক্টর ডা. বিএন গঙ্গাধর বলেছেন, আগে থেকে মস্তিষ্কের ব্যাধি এবং উচ্চ রক্তচাপ বা স্থূলত্বের মতো সহ-অসুস্থতা যাদের আছে তারা কোভিড আক্রান্ত হলে এ জাতীয় পরিণতি দেখা যায়। মেজাজের আচমকা পরিবর্তন, উদ্বেগজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পর, রোগীদের মধ্যে এরকম 'অস্বাভাবিক লক্ষণ' দেখা দিলে উপযুক্ত চিকিত্সার জন্য ডাক্তার দেখাতে হবে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, এই অবস্থা থেকে মুক্তিরও পথ রয়েছে। নিউরোলজিস্টরা বলছেন, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পর প্রতি রাতে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। একইসঙ্গে প্রোটিন জাতীয় খাবার, এবং প্রচুর পপরিমাণে ফল, শাকসবজি, স্বাস্থ্যকর চর্বি খেতে হবে। সেইসঙ্গে মানসিক চাপ কমাতে হবে, শারীরিক কসরত করতে হবে, ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। আর মস্তিষ্কের শক্তি জোরদার করতে নিয়মিত করতে হবে ধাঁধা-র সমাধান।