একটা ব্যাপার সম্পর্কে অনেক ক্রিকেট ভক্তই একমত হবেন। ক্রিকেটের মাঠে বিনোদন হিসাবে ছক্কার চেয়ে ভালো ব্যাপার আর অন্য কিছু হতে পারে না। বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক ক্রিকেট ভক্ত, একটা সুন্দর ছক্কা দেখতে কে না ভালবাসেন। আর যদি ছক্কাটি খেলার বিশেষ কোনও সময়ে আসে তবে তো কথাই নেই। সেই ম্যাচ বা খেলোয়াড়ের সেই ইনিংসকে ভক্তদের মনে ধরে রাখার ক্ষেত্রে সেই ছক্কাগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস ঘাঁটলে এমন অনেক ব্যাটসম্যানকে পাওয়া যাবে যারা ছক্কা মারার ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন। সেলিম দুরানী থেকে শুরু করে কপিল দেব, সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি থেকে শুরু করে হার্দিক পান্ডিয়া প্রত্যেকেই ছক্কা মারায় পারদর্শী। এবার দেখা নেওয়া যাক ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের এমন কিছু ছক্কাগুচ্ছর দিকে, যা ভারতবাসীদের মনে থেকে যাবে।
প্রথমেই ঘুরে আসা যাক ১৯৯০ সালের ইংল্যান্ড থেকে। মহম্মদ আজহারউদ্দিন এবং রবি শাস্ত্রীর শতরান সত্ত্বেও ফলো অনের ভ্রূকুটি দেখা দিয়েছিল ভারতের কপালে। ৪৩০ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় পরে গিয়েছিল ভারত। ক্রিজে ছিলেন ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান নরেন্দ্র হিরওয়ানি এবং অর্ধশতরান করে অপরাজিত থাকা কপিল দেব। যখন সকলে ভারতের ফলো-অন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বলে ধরে নিয়েছে তখনই এক আশ্চর্য কান্ড করেন কপিল। অফস্পিনার এডি হেমিংসের ওভারে চারটি ছক্কা মেরে ফলো-অনের হাত থেকে বাঁচান ভারতকে। যদিও পরে ম্যাচটি ভারত হেরেছিল কিন্তু ওই চারটি ছক্কা ভারতবাসীদের মনে চিরকালের জন্য জায়গা করে নিয়েছে।
আরও পড়ুনঃভারতীয় মহিলা হকি দলের ১৮ দিনের ফিটনেস চ্যালেঞ্জ,যার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে অনুদান
এবার আসি ২০০৩ এর বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। ওই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ভারতের সামনে ২৭৪ রানের লক্ষ্য রাখে পাকিস্তান। সেই রান তাড়া করতে ভারতের হয়ে ওপেন করতে নামে সচিন এবং সেওবাগ। দ্বিতীয় ওভারে সচিন, শোয়েব আখতারের ঘন্টায় ১৫১ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা শর্ট এবং ওয়াইড একটি বলকে আপার কাট করে বিশাল একটি ছক্কা মারেন। ওই শটটাই যেন ভারতের রান তাড়ার ছন্দটা তৈরি করে দিয়েছিল। সচিন ওই ম্যাচে ৯৮ রান করে আউট হন। যুবরাজ সিং এবং রাহুল দ্রাবিড় ভারতকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন। আজও ভারতীয়দের মনে সচিনের ওই ছক্কাটি একটি আলাদা জায়গা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃভারত সেরা মোহনবাগান, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইঙ্গিত দিল ফেডারেশন
এবার আসি ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত বনাম ইংল্যান্ডের ম্যাচে। ভারত টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সেওবাগ এবং গম্ভীর ভালো শুরু করেন ভারতের হয়ে। ১৭ নম্বর ওভারে যখন যুবরাজ ব্যাটিং করতে আসেন তখন ভারত ১৫০ পেরিয়ে গেছে। ব্যাটিং করার সময় ১৮ নম্বর ওভারের শেষে অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান যুবরাজ। যার ফলস্বরূপ পরের ওভারে স্টুয়ার্ট ব্রডের ছটি বলকেই গ্যালারিতে পাঠান। তার অবিশ্বাস্য ইনিংসের দৌলতে ২১৮ রান তোলে ভারত। মাত্র ১২ বলে অর্ধশতরান করেন যুবরাজ যা আজ ১৩ বছর পরেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্রুততম শতরানের রেকর্ড। ওই ম্যাচটি ১৮ রানে জিতেছিল ভারত। যুবরাজের মারা ছক্কাগুলো আজও প্রতিটি ভারতবাসীর মনে গেঁথে আছে।
এখানেই শেষ করা যেত তবে আরও দুজনের নাম উল্লেখ না করলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। তারা দীর্ঘদিন সাফল্যের সাথে ভারতের অধিনায়কত্বের ব্যাটন সামলেছেন। তারা হলেন সৌরভ গাঙ্গুলি এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি। সৌরভের যে সময়ের ছক্কার কথা বলা হচ্ছে তখনও তিনি অধিনায়ক হননি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৮৩ রানের বিধ্বংসী একটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। টনটনে তার মারা কয়েকটি ছক্কা স্টেডিয়াম পেরিয়ে নদীতে গিয়ে পড়েছিল। আজও বিশ্বকাপে কোনও ভারতীয়র করা সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ঐটি। সেই ম্যাচে তার মারা ছক্কাগুলি সত্যিই অসাধারণ ছিল। তারপর আসে ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনির ওয়াংখেড়ের মাঠে মারা ছক্কাটি যা ভারতকে ২৮ বছর পর কাপ এনে দিয়েছিল। যে সময় ছক্কাটি তিনি মেরেছিলেন ততক্ষনে ভারতের হাতে কাপ এসে গিয়েছিল কিন্তু ২০১১ বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ উঠলে আজও প্রতিটি ভারতবাসীর মনে আজও ধোনির মারা ওই ছক্কাটিই চোখের সামনে সর্বাগ্রে ভেসে ওঠে।