'কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বাবা-কাকার মৃত্যু! একার দায়িত্বে সংসার ধরে রেখেছিলেন মা'- শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

মায়ের অনুপ্রেরণায় অভিনয় দুনিয়ায় শিবপ্রসাদ। বলছেন, 'সব কিছু ক্যামেরাবন্দি খুব দরকার? আমি আর মা মিলে ‘কর্ণকুন্তি সংবাদ’ পাঠ করি তো! সে সব না মন-ক্যামেরাতেই বন্দি থাক।' আমার দুর্গা নিয়ে কলম ধরলেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।  
 

Web Desk - ANB | / Updated: Sep 26 2022, 08:00 AM IST

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজক- দেবী দুর্গা সবার মা। আমার মা যেন তাঁর পার্থিব রূপ! হয়ত এটুকু পড়েই অনেকে বলবেন, সবাই তাঁর মায়ের মধ্যে দেবীর রূপ খুঁজে পান। বিশেষ করে মা যে ভাবে তাঁর সন্তান, সংসার আগলান। আমার মা তার থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে। একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন। ‘গোত্র’ ছবির মুক্তিদেবী আমার মায়ের প্রতিনিধি। বাস্তব জীবনেও আমার মা জাতপাত মানেন না। আমাদের বাড়িতে সব ধর্মের মানুষের অনায়াস যাতায়াত। শুধু ‘গোত্র’ নয়, উইনডোজ প্রযোজনা সংস্থার সব ছবিতেই কোনও না কোনও চরিত্রেই যেন মায়ের ছায়া।

মাকে নিয়ে কম স্মৃতি? যেমন অসংখ্য মজার ঘটনা। বেশ কিছু মনকেমন করাও। আমি তখনও ২১ ছুঁইনি। দাদা আর একটু বড়। আচমকা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আমার বাবা আর কাকা ‘শেষ’! তখনও কেউ নিজের পায়ে দাঁড়াইনি। পরিবারের দু’টি স্তম্ভ ভেঙে গেল। আমরা কেউ, কিচ্ছু বুঝতেই পারলাম না। সব কিছু আগের মতোই গোছানো। কোনও দিন অভাব টের পেলাম না। এটা একজন মা-ই পারেন। আমাদের চার ভাই-বোনকে মা একা হাতে সামলাতেন। সংসার চালাতে মা বাড়িতে পড়াতেনও। সঙ্গে নাটক লেখা। নিজে পড়াশোনা করা। আমাদের লেখাপড়ার দিকে কড়া নজর। একে আপনারা দশ হাতে দশ দিক সামলানো বলবেন না? 

প্রতি বছর তাই দুর্গা প্রতিমার গায়ের মাটির সোঁদা গন্ধ, শিউলি ফুলের গন্ধ আর মায়ের গায়ের গন্ধ যেন এক। খুব মনে পড়ে, ছোটবেলায় পুজো মানেই ক্যাপ-বন্দুকের নেশা। আর মায়ের হাতের লুচি, তরকারি, চাটনি। আমার ঘরোয়া মা এক থালায় দুই ভাইকে বেড়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিতেন। এর পিছনেও মায়ের যুক্তি ছিল। এক থালায় দুই ভাই খেলে সম্পর্কের বাঁধন আরও পোক্ত হবে। তার পর নতুন জামা পরিয়ে সাজিয়ে দিতেন। আমাদের জন্য একটি বাঁধা রিক্সা ছিল। সেই রিক্সায় চেপে দাদা আর আমি ঠাকুর দেখতে যেতাম। 

পুজোর ছুটিই বলুন বা যে কোনও অবসরে, মা আমাদের সবচেয়ে বড় খেলার সঙ্গী। মায়ের সঙ্গে খেলতে বসা মানেই চূড়ান্ত চোট্টামি। লুডো হোক বা ক্যারম, বোর্ডের উপরে শাড়ির আঁচল পড়বেই। সেই আঁচলের তলা দিয়ে নিমেষে গুটি হাওয়া। মা হাসতে হাসতে জিতে যেতেন। কিন্তু কিছুতেই স্বীকার করবেন না, চোট্টামো করে জিতেছেন! দেখতে দেখতে যে যার মতো বড়। দাদা-দিদিরা পড়াশোনা, পড়ানো বেছে নিলেন। আমি সৃষ্টিছাড়া। পরিবারের কোনও প্রজন্ম বিনোদন দুনিয়ায় নেই। মূর্তিমান ব্যতিক্রম আমি। সেটাও কিন্তু মায়ের দৌলতেই। আমার মা খুব ভাল আবৃত্তি, অভিনয় করতে পারেন। সেই গুণ রক্ত দিয়ে আমার শিরায়-উপশিরায় বইছে। আমিও তো অভিনেতা হতেই চেয়েছিলাম। 

নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরে যে যার মতো থিতু। মায়ের কাজ কিন্তু কমেনি। আমার ৮৭ বছরের মা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। পাঁচটা খবরের কাগজ পড়েন। বাছাই খবর নিয়ে সবার সঙ্গে রীতিমতো তর্ক জোড়েন। বেলুড় মঠের জন্য নাটক লেখেন। স্বামীজির উপরে বই প্রকাশিত হয়েছে গত বইমেলায়। এবং কোনও পার্টিতে গেলে খেয়ে ফেরার উপায় নেই! মা ঠিক খাবার সাজিয়ে বসে থাকবেন। অনেক সাংবাদিক জানতে চেয়েছেন, মাকে কোনও দিন পরিচালনা করব না? তাঁদের সবাইকে বলছি, সব কিছু ক্যামেরাবন্দি খুব দরকার? আমি আর মা মিলে ‘কর্ণকুন্তি সংবাদ’ পাঠ করি তো! সে সব মন-ক্যামেরাতেই বন্দি থাক। 

অনুলিখন- উপালি মুখোপাধ্যায়, সাক্ষাৎকার সংগ্রাহক প্রতিনিধি- উপালি মুখোপাধ্যায়
আরও পড়ুন- 
'পুজোর আগে গুনতে বসতাম, ক’টা হল, কবে কোনটা পরব, কোন জামার সঙ্গে কোন প্যান্টটা মানাবে'- টোটা রায়চৌধুরী 
শপিং মল ও অনলাইনে কেনা কাটার ঝোঁক তরুণ প্রজন্মের, ব্যস্ততা হারিয়ে মন ভার দর্জিদের 
'মহেশবাবুর জামা, ‘দিদি’র দেওয়া পাঞ্জাবি, কাশ্মীরি আতরের খোশবাই! আর কী চাই?'- ভাস্বর

Read more Articles on
Share this article
click me!