সংক্ষিপ্ত

বাঙালির সুঠাম চেহারা, কাট-কাট লুক এবং অবশ্যই ফ্যাশনদুরস্ত পোশাকে চোখ ধাঁধানো প্রেজেন্স। এমন কোনও বাঙালিকে নিয়ে বর্তমান সময়ে কথা বলতে হলে অবশ্যই তাতে তারকা টোটা রায়চৌধুরী। ফ্যাশন দুরস্ত পোশাক যেমন পছন্দ টোটার, তেমনি পছন্দ এক ছিপছিপে সুঠাম শরীর। যা বাঙালির গড়পড়তা ফিটনেস ফান্ডাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে। পুজো ফ্যাশন প্লাস পুজোরে ফিজিক নিয়ে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা মুখোমুখি হয়েছিল টোটা রায়চৌধুরীর। 
 

টোটা রায়চৌধুরী, অভিনেতা- পুজো দোরগোড়ায়। আকাশে-বাতাসে উৎসবের আমেজ। এমন পরিবেশে ‘ফেলুদা’ কী করতেন? মন, লক্ষ্য স্থির রেখে রহস্যেই ডুব দিতেন? সত্যজিৎ রায়ের ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ তো তাই-ই বলেছে। আমি কপালজোরে এ বছর শ্যুটিং থেকে ছুটি পেয়েছি। জানুয়ারি মাসে আবার ‘ফেলুদা’র খোলসে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ফেলুদা সিরিজের ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’-এর শ্যুট শুরু হবে নতুন বছরে। এই সুযোগে আমি গুছিয়ে কেনাকাটা সেরে ফেলেছি। ক্যালেন্ডার বলছে, দেবীর আবাহনের আর মোটে ১০ দিন বাকি!

দর্শকদের ভালবাসায় ইদানীং টোটা ‘ফেলুদা’! আমি খুব খুশি। এশিয়ানেট নিউজ তাই মজার ছলেই প্রশ্ন রেখেছিল, পুজোয় ‘ফেলু মিত্তির’ কী করবেন? তাঁর সাজই বা কেমন হবে? আমি জানি, মগজাস্ত্রের কারবারি কী ভাবে নিজেকে পুজোয় সাজাতে ভালবাসেন। আমার তালিকায় তাই রকমারি পোশাক থাকে। সবার প্রথমে পাঞ্জাবি চাই-ই। বাঙালির দুর্গোৎসব পাঞ্জাবি ছাড়া? আমি অন্তত ভাবতে পারি না। তাই অষ্টমীর সকালের অঞ্জলির পাঞ্জাবিটা সবার আগে কিনেছি। সেটা পাজামা দিয়েও পরতে পারি। কিংবা ধুতির মতো দেখতে এক ধরনের প্যান্ট বেরিয়েছে। ধুতিকে পাজামা স্টাইলে পরলে যেমন দেখতে লাগে অনেকটা সেই রকম। ও রকম একটি ধোতি-প্যান্টও কেনা হয়েছে। কারণ, ধুতি আমার পছন্দের। কিন্তু সামলাতে গিয়ে নাকানি-চোবানি খাই। 

সাবেকি পোশাকের পাশাপাশি হালফ্যাশনের জামা-কাপড় না হলে ঠিক মন ভরে না। তাই টি-শার্ট, ক্যাজুয়াল শার্ট, জিন্স, ট্রাউজার, চিনোসও তালিকায় আছে। পুজোয় আড্ডা দিতে, ঘুরতে এই ধরনের পোশাকেই স্বচ্ছন্দ। আর ঘরে যখন নিজের সঙ্গে সময় কাটাই, তখন টি-শার্ট, চিনোসেই আমায় দেখতে পাবেন। এত রকমের পোশাক পরব। তার আগে নিজেকেও তো একটু ফিটফাট হতে হবে। পুজোর নির্দিষ্ট সময় আগে চুলের ছাঁদ ঠিক করে নিই। আর নিয়মিত যোগাভ্যাস তো আছেই। সব মিলিয়ে আমি পুজোর জন্য তৈরি। 

তবে আপনাদের সতর্ক করছি। হাতেগোনা কয়েক দিনে রোগা হওয়া যায় না। দুম করে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতে শুরু করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কৌতুকশিল্পী রাজু শ্রীবাস্তব টাটকা উদাহরণ। জিম করতে গিয়েই বেঘোরে প্রাণ হারালেন। বদলে যোগাভ্যাস অনেক নিরাপদ। হালকা কিছু স্ট্রেচিং করতে পারেন। সঙ্গে কয়েকটি আসন। সূর্য নমস্কার খুব ভাল আসন। ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন। এতেই শরীর ঝরঝরে লাগবে। তবে সব করবেন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে। খাওয়া-দাওয়ায় বদল আনুন। বেশি করে জল খান। সকালে ভরপেট খান। দুপুরে তুলনায় হাল্কা। বিকেলে আরও একটু কম খাবার। রাতে খিদে রেখে খাবেন। এ ভাবে খেলে লিভার বিশ্রাম পাবে। আপনি সুস্থ থাকবেন। পুজোতে জমিয়ে পেটপুজো করতে পারবেন।  

বেশ কিছু ব্যাপারে আমি এখনও সেকেলে। যেমন, অফলাইনে কেনাকাটা। দোকানে যাব। দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে জিনিস দেখব। স্পর্শ দিয়ে বুঝব, কতটা আরামদায়ক সেটা। ট্রায়াল দেব। দরদাম করে তার পর যাবতীয় জিনিস ব্যাগবন্দি করা। এর মধ্যে কিন্তু এক ধরনের মজা আছে। ওই যে দোকানদারের সঙ্গে টুকরো আড্ডা হয়। বেশ লাগে। মোবাইলের গুঁতোয় আর অনলাইনে কেনাকাটার দৌলতে আমরা তো মানুষের সঙ্গে মিশতে, কথা বলতেই ভুলে গিয়েছি! পুজো হোক বা যে কোনও উৎসব, আমি ঝকঝকে ক্রিস্টাল কালারে। হালকা হলুদ, সবুজ, সাদা, ঘিয়ে— যে রংগুলো চোখের আরাম দেয় সে গুলোই আমার পছন্দ। দিনে বাইরে বেরোলে ‘ফেলুদা’র মতোই আমিও চোখ ঢাকি রোদচশমায়। কখনও এভিয়েটর ফ্রেমে। কখনও হয়তো চৌকো। এই ব্যাপারেও যথেষ্ট খুঁতখুঁতামি আছে। ইউভিএ, ইউভিবি— দুটো রশ্মি যে রোদচশমা ঢাকে আমি একমাত্র সেটাই বেছে নিই। সাজ শেষ সুগন্ধিতে। 

বাকি উপহারের পালা। পরিবারের সবাইকে হাত ভরে দিতে ভালবাসি। কাছের, দূরের কিছু মানুষ, বন্ধুদেরও এই সুযোগে কিছু না কিছু দেবই। এই দায়িত্ব যদিও আমার স্ত্রী শর্মিলি সামলায়। আগে নিজের পছন্দমতো জিনিস দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলাম। পরে বুঝেছি, অন্যের পছন্দ জেনে নিলে উপহার দেওয়াটা আরও সহজ। এখন সেটাই করি। আমি জেনে নিই। শর্মিলি গুছিয়ে সে সব কিনে আনে। বাড়ির এক্কেবারে ছোটদের এখনও জামা-কাপড়ই দিই। ঠিক আমার ছোটবেলায় যেমন হত। সবাই জামা দিতেন। আর সে সব নিয়ে পুজোর আগে গুনতে বসতাম, ক’টা হল। কবে কোনটা পরব। কোন জামার সঙ্গে কোন প্যান্টটা মানাবে...! জানি, ছোটদের দুনিয়ায় আজও জামা-প্যান্ট নিয়ে অলিখিত প্রতিযোগিতাটা আজও আছে। আমি তাকে উস্কে দিই। গোপনে নিজের ছোটবেলাকেই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি।

মগজাস্ত্রে শান দেওয়ার বদলে স্মৃতিতে শান দিই। সবার অগোচরে পৌঁছে যাই ছেলেবেলার দিকশূন্যপুরে।   


অনুলিখন- উপালি মুখোপাধ্যায়, সাক্ষাৎকার সংগ্রাহক প্রতিনিধি- উপালি মুখোপাধ্যায় 
আরও পড়ুন- 

ষষ্ঠীর ক্যাজুয়াল লুক থেকে অষ্টমীর সাবেকিয়ানী, পুজোর ট্রেন্ডি ফ্যাশনে বাজিমাত অর্কজার 
পোশাক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করেন মনামী, একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন অভিনেত্রী 
'মহেশবাবুর জামা, ‘দিদি’র দেওয়া পাঞ্জাবি, কাশ্মীরি আতরের খোশবাই! আর কী চাই?'- ভাস্বর