লড়াই! এই একটা শব্দই যেন শাশ্বত হয়ে গিয়েছে ঐন্দ্রিলার কাছে। জীবন পারাপারে বারবার তাঁকে লড়তে হয়েছে, পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কীভাবে জীবনের লড়াইকে লড়তে হয় তার শিক্ষাও যেন প্রিয় ২ সারমেয়কে দিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর। মাত্র দু’মাস আগের কথা। তখনও ঐন্দ্রিলা শর্মা তরতাজা। দুই সারমেয় সন্তানকে নিয়ে মন্দারমণি গিয়েছিলেন। সাগরের জলে আনন্দে ভাসছিলেন। কোলে দুই পোষ্য। ওদের নিজের হাতে স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটতে শেখাচ্ছিলেন। সেই ছবি দিয়ে মন্তব্যে লিখেছিলেন, ‘আমার দুই সন্তান। এই প্রথম ওরা সমুদ্রে।’ যে মেয়ে নিজের হাতে কাউকে সাঁতার কাটতে শেখায় সেই মেয়েই এখন লড়াই করছে জীবন-মূত্যুর সীমারেখায়! কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়। ভেন্টিলেশনের বাইরে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেননি ঐন্দ্রিলা। তাঁর সুস্থতা কামনায় তাঁর পরিবার এবং প্রিয়জনেরা। চোখের সামনে থেকে অনেকেই দেখেছেন ঐন্দ্রিলার লড়াই। দুবার ক্যানসারকে জয় করে ফিরে এসেছেন। এখনও আশা ঐন্দ্রিলা হয়তো এখন অচৈতন্য, কিন্তু তিনি ফিরবেন বহাল তবিয়তে। ফের শুরু হবে লাইট-সাউন্ড-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়ায় তাঁর পদচারণা।
প্রেমিক সব্যসাচী একাধারে ঐন্দ্রিলার সহকর্মীও। যবে থেকে হাসপাতালের চৌহদ্দিতে ঐন্দ্রিলা, তবে থেকে তিনি হাসপাতালে যেন এক অতন্দ্র প্রহরী। এক সপ্তাহ আগেও সব্যসাচী সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘‘ভালো আছে’ বলতে আমার ভয় লাগে, কিন্তু ঐন্দ্রিলা আছে। প্রচন্ড ভাবে আছে। আমার সামনে শুয়ে থেকেও হয়তো কয়েক সহস্র মাইল দূরে আছে। কিন্তু ঠিক ফিরে আসবে। ওর একা থাকতে বিরক্ত লাগে।'
মন্দারমণি যাওয়ার ঘটনা প্রথম হলে নায়িকার জীবনের দ্বিতীয় খুশির খবর, ওই মাসের ১৫ তারিখ সব্যসাচীর দ্বিতীয় বই ‘ব্যাতায়পুকুরের বেতান্ত’ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই আনন্দে ডগমগ ঐন্দ্রিলা প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে ছবি দিয়েছিলেন। সঙ্গে খুশি খুশি মন্তব্য, ‘আজ আমার খুব আনন্দের একটা দিন। আজ সব্যর দ্বিতীয় বই ‘ব্যাতায়পুকুরের বেতান্ত’ বেরলো। আমার খুব প্রিয় একটা গল্প। পুলু-র গল্প এখন আপনাদের জন্য।’ দু’বার ক্যান্সার তার শরীরে থাবা বসিয়েছিল। এক বার শিরদাঁড়ায়। পরের বার ফুসফুসে। মাত্র ২২-এর মেয়েটি দু’বার সিংহবিক্রমে লড়েছিল। যেন সাক্ষাৎ দেবী দুগ্গা! টলিপাড়ার কথায়, ত্রুটি একটাই। যতটা বিশ্রাম দরকার ছিল ততটা তিনি নাকি নেননি! উল্টে প্রচণ্ড পরিশ্রম শুরু করেছিলেন।
এ বছরের পুজোও প্রাণ ভরে উপভোগ করেছেন ঐন্দ্রিলা। পুজোর আগে দিয়ে দেদার ফটোশ্যুট। চুটিয়ে কাজ করেছেন পোশাকশিল্পী রাইকিশোরী কৃষ্ণকলির সঙ্গে। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সঙ্গে কথায় কথায় রাইয়ের দাবি, ‘বুকে কেমোর দাগ! তাই নিয়ে একটি মেয়ে হইহই করে যাচ্ছে। একটু ক্লান্তি নেই। প্রচণ্ড আন্তরিক। আমার পোশাকে সেজে কী খুশি। বলেছিল, আমায় অনেকে অনেক ভাবে সাজিয়েছেন। কিন্তু তোমার মতো করে গামছা কালেকশনে এত অভিনব ভাবে কেউ সাজাতে পারেননি। তোমায় অনেক ভালবাসা।’ ভাইফোঁটার দিনেও রাইকে নিজে ফোন করেছিলেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন অন্তর থেকে। বলেছিলেন, ‘তোমার সঙ্গে কাজ করে আনন্দ পেয়েছি। আবার পুজোর পরে কাজ করব আমরা।’ সব্যসাচীকে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন রাইয়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবেন বলে।
প্রায় একই অভিজ্ঞতা অভিনেতা গৌরব রায়চৌধুরীরও। ২ নভেম্বর ফেসবুক পোস্টে প্রথম জানিয়েছিলেন, ‘আমি যখন শয্যাশায়ী, হাসপাতালে, অনেক কষ্টে উঠে দাড়িয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলাম... হঠাৎ দরজা খুলে দেখলাম ঐন্দ্রিলাকে।’ ওঁর সঙ্গে আলাপ ছিল না গৌরবের। অভিনেতার অসুস্থতার খবর জেনে নিজেই যেচে আলাপ করেছিলেন। দেখতে এসেছিলেন তাঁকে। সে দিন থেকে ঐন্দ্রিলার উপরে মায়া পড়ে গিয়েছিল অভিনেতার। স্নেহ করতেন অসম্ভব। সেই গৌরব সোমবারে সব্যসাচীর পোস্ট পড়ার পরেই ফের ঐন্দ্রিলাকে সাহস জুগিয়েছিলেন, ‘সুস্থ হয়ে ওঠো। আমরা সবাই আছি।’ এ বার আর গৌরবের ডাকে ফিরে তাকাননি। খিলখিলিয়ে হেসে উঠে হাত নাড়েননি। সহস্র কণ্ঠের ‘ফাইট ঐন্দ্রিলা ফাইট’ মন্ত্র যেন তাঁদের প্রিয় অভিনেত্রীর কানে পৌঁছয় সেই প্রার্থনাতেই এখন সকলে।
আরও পড়ুন
জ্বর-সংক্রমণ রয়েছে, সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন ঐন্দ্রিলা, চিকিৎসক দলের কড়া নজরদারিতে অভিনেত্রী
দিনে তিন বার গল্প করি ঐন্দ্রিলার সঙ্গে, গলা চিনতে পারে, আমার হাত ধরার চেষ্টা করে, জানালেন সব্যসাচী