রাতঘড়িতে তখন পৌনে বারোটা। হাসতে হাসতে জবাব দিল, ‘বেশ ছিলাম। একটা ছবিতেই এত কিছু ঘটে গেল! আমিই কি ছাই আগে বুঝেছি?’
গত ক’দিন ধরেই ‘শিশুদিবস’-এর সকালের জন্য স্কুলপড়ুয়াদের হা-পিত্যেশ অপেক্ষা। বহু যুগ পরে ‘সোনালি অতীত’ ফিরছে। তখন বিশেষ দিনে পর্দা টাঙিয়ে ছোটদের তাদের উপযুক্ত কোনও ছায়াছবি দেখানো হত। কাট টু ২০২২-এর ১৪ নভেম্বর। ব্যারাকপুর, কল্যাণী, ২৪ পরগণা আর খোদ কলকাতার পড়ুয়াদের এ দিন অলিখিত ‘ছুটি ছুটি’! সকাল সকাল স্কুল ব্যাগ, জলের বোতল নিয়ে স্কুলের পোশাক পরে বেরোতে হবে বটে। তবে ‘দোস্তজী’ দেখতে। সারা দিন ধরে বড় পর্দায় ছোট-বড় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বন্ধুত্বের উদযাপন চলবে। এশিয়ানেট নিউজ বাংলাকে ছবির পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমার ছবি নিয়ে এ ভাবে শিশুদিবস উদযাপিত হবে, এ যেন কল্পনার অতীত! মুক্তির দিন থেকেই শহরের একাধিক স্কুল এসেছে নন্দন-সহ শহরের একাধিক প্রেক্ষাগৃহে। ১৪ নভেম্বর পড়ুয়াদের ঢল নামবে। বহু যুগ আগে যেমন ভাল ছবি এলে স্কুল থেকে বাচ্চাদের নিয়ে গিয়ে দেখানো হত।’ আপ্লুত প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি পরিচালককে জানিয়েছেন, তাঁর ছোট বেলায় এ রকম দেখেছেন। তার পর বছরের পর বছর কেটে গিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পড়ুয়াদের প্রেক্ষাগৃহে সম্ভবত নিয়ে আসেননি!
প্রসূনের ছবির অভিনেতারা কেউ তারকা নন। ১১ নভেম্বর ছবি-মুক্তির দিন তথাকথিত তারকাদের ভিড়ও ছিল না নন্দনে। তার পরেও ওপেনিং ডে ওপেনিং শো হাইজফুল! প্রসূনের কথায়, ‘প্রিমিয়ারের তিন আমাদের তিনটে শো হাইজফুল ছিল। শনিবার পাঁচটা শো হাউজফুল। রবিবার সেই সংখ্যা এক লাফে বেড়ে ১৪! আইনক্স আগাম বুকিংয়েই হাউজফুল। নন্দন ১-এ দর্শক আসন ১১০০। অ্যাডভান্স বুকিং হাউজফুল। ভাবতেই পারছি না।’ প্রসূনের আশা, সোমবার সপ্তাহের প্রথম কেজো দিন হলেও ছবি দেখার ভিড় অব্যাহত থাকবে। রবিবার ছবির নিবেদক প্রসেনজিৎ খোদ উপস্থিত ছিলেন নন্দনে। এ দিন রাতে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ১৪ নভেম্বর এই প্রজন্মের ছোটদের ‘দোস্তজী’ দেখার অনুরোধ জানান। তাঁর বার্তা, ‘আগামীকাল ১৪ নভেম্বর শিশুদিবস। কলকাতা, শহরতলি এবং মফসসলের প্রচুর স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ‘দোস্তজী’র শো চলবে। আপনারাও আপনার বাড়ির ছোটদের নিয়ে ‘দোস্তজী’ দেখুন। শিশুদিবসে ছোটদের বন্ধুত্বের উদযাপন হোক।’
এই প্রজন্ম এ ভাবেই ভালবাসছে পর্দার পলাশ, শফিকুলকে। বদলে বিশেষ দিনে টিম ‘দোস্তজী’ কী উপহার দিচ্ছে? পরিচালক জানিয়েছেন, স্কুল পড়ুয়াদের জন্য এ দিন টিকিটের মূল্যে উপরে ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। মাল্টিপ্লেক্সে যে টিকিটের দাম আড়াইশো টাকা সেটি এ দিন স্কুল পড়ুয়াদের জন্য ১১৫ টাকা। প্রসূন উচ্ছ্বসিত আরও একটি কারণে। তাঁর ছবি-মুক্তির দিনে মুক্তি পেয়েছে অমিতাভ বচ্চনের উঁচাই। সেই ছবিও দুর্দান্ত ব্যবসা করছে। তাঁর কথায়, ‘আমার দুই খুদে তারকা অমিতাভ বচ্চন বলতে অজ্ঞান! তিনি টুইট করে আমাদের ছবির জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একই দিনে দুটো ছবি-মুক্তি। এবং ভাল ফলাফল। এত খুশি সামলাতে পারছি না।’ নন্দনে প্রিমিয়ার শো ফুরোতেই প্রেক্ষাগৃহের বাইরে স্কুলছাত্রীরা উত্তেজনায় টগবগিয়ে ফুটছিল। একটা সেলফি তুলবে সুপুরুষ নব্য পরিচালকের সঙ্গে। প্রসূনের কথায়, তাঁর হাত ধরে রীতিমতো টানাটানি করেছে সবাই। পারলে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দেয়! প্রথম ছবিতেই তুলকালাম করে নিজেই কি অজান্তে চাপ নিয়ে ফেললেন? রাতঘড়িতে তখন পৌনে বারোটা। ক্লান্তি নেই প্রসূনের গলায়। হাসতে হাসতে জবাব দিল, ‘বেশ ছিলাম। একটা ছবিতেই এত কিছু ঘটে গেল! আমিই কি ছাই আগে বুঝেছি?’
আরও পড়ুন
প্রসেনজিতের পর অমিতাভ, ‘দোস্তজী’র ট্রেলার দেখে উচ্ছ্বসিত বলিউড 'শাহেনশা'
নানা কারণে প্রচুর সমঝোতা করেছি, প্রসূন তুমি আমার মতো সমঝোতা করো না: প্রসেনজিৎ
‘৩৫০-র উপর ছবি করেও গোল্ডেন শিখা পেলাম না!’, ‘দোস্তজি’ নিবেদন করে প্রসূনের পাশে প্রসেনজিৎ