১ মাসে ১০ হাজার থেকে ৩.২৫ লক্ষ শিশি, কোন জাদুতে 'রেমডেসিভির সংকট' কাটালো ভারত

গত মার্চ মাঝামাঝি থেকেই দেশে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, এপ্রিলের শুরুতেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। আর তার সপ্তাহ দুয়েক পর অবস্থা পৌঁছেছিল চরমে। দ্বিতীয় তরঙ্গের শুরুতে দেশে দৈনিক মাত্র ১০,০০০ শিশি রেমডেসিভির ওষুধ উত্পাদন হত। গুরুতর সংক্রমিত করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এই ইনজেকশন দেওয়া হয়। ফলে দেশে এই ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছিল। অথচ, তারপর এপ্রিলের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যেই সেই উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দিন প্রতি ৩.২৫ লক্ষ শিশি-তে পৌঁছায়। কোন জাদুতে সম্ভব হল এটা? সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে নেপথ্যের কাহিনি।

 

amartya lahiri | Published : May 12, 2021 12:05 PM IST

17
১ মাসে ১০ হাজার থেকে ৩.২৫ লক্ষ শিশি, কোন জাদুতে 'রেমডেসিভির সংকট' কাটালো ভারত

প্রথম বৈঠক
 
জানা গিয়েছে, রেমডেসিভিরের চাহিদা সামান্য বাড়তেই, ২ এপ্রিল তড়িঘড়ি বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে দেশের রেমডিসিভির-এর উৎপাতদন পর্যালোচনায় বসেছিল কেন্দ্র। সেই বৈঠকে জানা গিয়েছিল, দেশের বেসরকারি ওষুধ সংস্থাগুলি জানিয়েছিল পর্যাপ্ত উত্পাদন ক্ষমতা তাদের রয়েছে, কিন্তু এই ওষুধের চাহিদা এতই কম যে, তাঁরা ক্ষমতার অনেকটাই কম উত্পাদন করে থাকেন। কেন্দ্র তাদের সম্পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করে উত্পাদন শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিল।

 

27

চাহিদা বাড়ল বহুগুণ
 
ফার্মা সংস্থাগুলি তাদের সম্পূর্ণ উত্পাদন ক্ষমতা ব্যবহার করতে শুরু করার পরও ঘাটতি মেটেনি। কারণ, ১০ এপ্রিলের মধ্যেই করোনা সংক্রমণের সংখ্যা এমন দ্রুত হারে বাড়তে শুরু করেছিল, যে রেমডেসিভির-এর চাহিদাও বহুগুণে বেড়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি বিচারে যেসব রাজ্যে রেমডিসিভির উত্পাদন ইউনিটগুলি অবস্থিত, তারা অন্য রাজ্যে এই ওষুধ রফতানি করা বন্ধ করে দিয়েছিল।

 

37

২০টি থেকে ৫ দিনে ৫৮-টি প্ল্যান্ট

ফলে, ফের সভা ডেকেছিল কেন্দ্র। এবার চ্যালেঞ্জ ছিল সরবরাহ পক্ষ এবং চাহিদা পক্ষ - দুই  দিকই সামলানো। চাহিদা বাড়ায় উৎপাদন বাড়াতেই হতো। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন আছে এমন যে কোনও সংস্থাকে অবিলম্বে, রেমডিসিভির উৎপাদনকারী ফার্মা সংস্থাগুলির সঙ্গে অংশিদারীতে রেমডিসিভির উত্পাদনের অনুমোদন দেওয়া হবে। সেইমতো কেন্দ্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংস্থাগুলিকে অনুমোদন দিয়েছিল। সরকারি সূত্রটির দাবি,১০ এপ্রিল যেখানে ভারতের ২০টি প্ল্যান্টে রেমডিসিভির তৈরি হতো, সেখানে ১৫ এপ্রিল প্ল্যান্টের সংখ্যা পৌঁছায় ৫৮-য়।

 

47

সাশ্রয়ী রেমডিসিভির

এর সঙ্গে এই বৈঠকের তৃতীয় লক্ষ্য ছিল সাশ্রয়। এই বিষয়ে, ওষুধ সংস্থাগুলিকে কেন্দ্রে পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার কোনও ওষুধের দাম বেঁধে দেবে না। কারণ, এতে উৎপাদন ব্যহত হতে পারে। তাই সংস্থাগুলিকে নিজেদেরকেই রেমডিসিভিরের দাম কমাতে হবে। আগে যেখানে এই ওষুধের একেকটি শিশির দাম ৬,০০০-৭,৫০০ টাকা ছিল, সেখানে বৈঠকে শিশি প্রতি দাম ৩,৫০০ টাকার নীচে রাখার বিষয়ে সম্মত হয় সব পক্ষ।

 

57

জয়শঙ্করের ভূমিকা

এরপরও অন্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল মোদী সরকারকে। রেমডিসিভির উত্পাদনের জন্য অপরিহার্য বেটেসিওক্লোডেক্সট্রিন। এই প্রয়োজনীয় রাসায়নিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গিলিয়েড (Gilead) সংস্থা থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য কেন্দ্রীয় রসায়ন মন্ত্রক যোগাযোগ করে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে। জয়শঙ্কর মার্কিন বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে একটি সুরাহা বের করেন। গিলিয়েড এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ভারতকে সহায়তা করতে রাজি হয়।

 

67

এখনই তৃতীয় তরঙ্গের ভাবনা

রেমডিসিভির প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি এরপরেও উদ্বেগে ছিল, এত যে উৎপাদন করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত যদি বিপুল মাল পড়ে থাকে, তাহলে কী হবে? এই বিষয়েও তাদের উদ্বেগ দূর  করে কেন্দ্র। সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তাদের উৎপাদনের শেষ ৫০ লক্ষ শিশি রেমডিসিভির, কেন্দ্র কিনে নেবে। এই ওষুধ, করোনার তৃতীয় তরঙ্গের মোকাবিলার কাজে ব্যবহার করা হবে।

77

রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা

আর পর্দার আড়ালে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির ফলেই দৈনিক ১০,০০০ শিশি রেমডিসিভির উত্পাদনের জায়গা থেকে পরের প্রায় এক মাসে দৈনিক ৩.২৫ লক্ষ শিশি উত্পাদনের জায়গায় উন্নীত হয়েছে ভারত। এর সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করে রোগীর অবস্থা কতটা আশঙ্কাজনক হলে, ঠিক কোন অবস্থায় রেমডিসিভির দিতে হবে, সেই বিষয়ে ডাক্তারদের অবগত করার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে।

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos