কংক্রিটের স্তূপে আটকে থেকে ৬০ ঘণ্টার মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই, ১৩ বছরের ওমায়রার মৃত্যু আজও প্রশ্ন চিহ্ন

Published : Jul 14, 2022, 02:26 PM ISTUpdated : Sep 29, 2025, 02:32 PM IST

কলম্বিয়ার ছোট্ট মেয়ে ওমায়রা সানচেজ। যার মৃত্যু এখনও মনে করলে শিহরিত হয় বিশ্বের অনেক মানুষ। ১৯৮৫ সালের আরমেরো ট্র্যাজেডি আর কলম্বিয়া সরকারের নীরবতার বলি এই ছোট্ট মেয়ে। টানা তিন দিন  আগ্নেয়গিরির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে জীবনের লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল।

PREV
110
কংক্রিটের স্তূপে আটকে থেকে ৬০ ঘণ্টার মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই, ১৩  বছরের ওমায়রার মৃত্যু আজও প্রশ্ন চিহ্ন
বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা

আরও পাঁচটা কলম্বিয়ার শিশুর মতই স্বাভাবিক ছিল তাঁর দিনগুলি। ১৯৯৭ সালে জন্ম কলম্বিয়ার নেভাদো জেল রুইজ আগ্নেয়গিরির নিকটবর্তী আরমেরোতে। স্কুল যাওয়া আর বাবা মা কাকা কাকিমার সঙ্গে বাড়ির ছোটখাটো কাজ করাই দিন তাঁর জীবন। তবে ওমায়ার চোখে স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার। কিন্তু প্রকৃতির রোষ তা হতে দিল না। 
 

210
৬৯ বছর শান্ত থাকার পরে জেগে ওঠে

নেভাদো জেল রুইজ অগ্নেয়গিরি ৬৯ বছর শান্ত থাকার পর জেগে উঠেছিল ১৯৮৫ সালের ১৩ নভেম্বর। সেই আগ্নেয়গিরিও চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল ওয়ামায়া সহ আরও অনেককে। কারণ নেভাদো জেল রুইজ আগ্নুপাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি গ্রাম। যারমধ্যে একটি ছিল ওমায়রার। 

310
সতর্কবার্তা ছিল

দুর্যোগের দুই মাস আগে সতর্কবার্তা দিয়েছিল আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে উদাসীন ছিল সেই সময়ের কলম্বিয়া সরকার। এলাকার মানুষদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। তৎকালীন সরকারের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এম-১৯ গেরিলাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। তাই আগ্নগিরি জেগে ওঠার আগে বা পরে তেমন কোনও সাহায্য পায়নি দুর্যোগ গ্রস্তরা। 
 

410
১৩ নভেম্বর রাত ৯টা

১৩ নভেম্বর রাত ৯টা। যখন ক্নান্ত আরমোরো শহর ঘুমাতে যাওয়ার তোড়়জোড় করছে তখনই জেগে উঠেছিল নেভাদো জেল রুইজ  আগ্নেয়গিরি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগ্নেয়গিরি গরম ছাই আর লাভা ঢেকে ফেলেছিল গোটা এলাকা। আগ্নেয়গিরিটি গেজে ওঠায় প্রবল গরমে গলে গিয়েছিল নিকটবর্তী একটি হিমবাহ। তারজল মাটি পাথর ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। শুধুমাত্র আরমোরো শহরের ২৯ হাজার মানুষেক মধ্যে ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তারই মধ্যে একজন ওমায়রা। 

510
মেধাবী ছাত্রী ছিলেন

কলম্বিয়ান ছোট্ট মেয়ে ওমায়রার বাবা আলভারো এনরিক , মা মারিয়া আলেদা। বাবা চাষের কাজ করতেন।  আর মা ছিলেন নার্স। সেদিন মা আরমোরো শহরে ছিলেন না। চাকরি সূত্রে বাইরে গিয়েছিলেন। ওমায়রা মেধাবী ছাত্রী হিসেবেই পরিচিক ছিল।   

610
আগ্নেয়গিরির বিকট আওয়াজ

অন্যান্য দিনের মতই রাত নেমেছিল আরমোরোতে। কিন্তু আগ্নেয়গিরির বিকট আওয়াজ সবকিছু বদলে দিয়েছিল। অনেকেই আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। ওমায়রা তাঁর পরিবারের সঙ্গে ছাদে উঠেছিল। কিন্তু আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাদা জল আর লাভার স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় ওমায়ার বাড়ি। ধ্বংসসূপে আটকে পড়ে ওমায়রা। সেই রাতেই মৃত্যু হয়েছিল তার পরিবারের বাকি সদস্যদের। কিন্তু সে জানতেও পারেনি। 

710
কাদাজলে দাঁড়িয়ে ছিল

প্রকৃতির তাণ্ডবের পর শান্ত হয়েছিল আরমোরো। এসেছিল উদ্ধারকারীদল, রেডক্রস। তন্নতন্ন করে খুঁজেছিল প্রাণ। সেইসময়ই একগলা কাদা জলে দাঁড়িয়ে বাঁচার আর্তি জানিয়েছিল ওমায়রা। আর আওয়াপ কানে যাওয়ার পর নজর পড়েছিল উদ্ধারকারীদের। সেখানে জড়ো হয়েছিল উদ্ধারকারী দলের বাকি সদস্যরা। কিন্তু কাদাজল ঠেলে ওমায়রাকে উদ্ধারকরা সম্ভব হয়নি। একবার পা কেটে বার করে আনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ওময়ারার নারকীয় যন্ত্রনা আর গ্যাংগিং হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় তাতে সায় দেয়নি চিকিৎসক। মৃত্যুর জন্যই অপেক্ষা করেছিল।

810
বাঁচার মরিয়ে চেষ্টা

উদ্ধারকারী দল ওমায়ার কাছে গিয়ে বুঝতে পারে মেয়েটি বাঁচতে চাইছে। কিন্তু তাকে উদ্ধার করা সহজ নয়। বুক পর্যন্ত ডুবে রয়েছে ছোট্ট মেয়েটি। প্রথমে টানাটানি করতেই ওমায়ারা পায়ের তলায় প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে বলে উদ্ধারকারীদের জানিয়েছিল। তারপরই ডুবুরি তলব করা হয়। সেই ডুবুরি কাদাজল ঠেলে নেমে দেখে মেয়েটির পা কংক্রিটে আটকে রয়েছে। এক মহিলা পা আঁকড়ে ধরে রয়েছে। মহিলার মৃত্যু আগে হওয়ায়  রীতিমত শক্ত হয়ে গেছে বাঁধন। তাই কংক্রিটের স্তূপ থেকে ওমায়রাকে উদ্ধারের জন্য ক্রেনে ও কাটার চেয়েছিল উদ্ধারকারী দল। কিন্তু তা দিতে অস্বীকার করে কলম্বিয়া সরকার। 

910
আটকে থেকেই সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন

ওমায়রাকে যখন উদ্ধারের কাজ চলছে তখন সেখানে পৌঁছে ছিলেন জার্মান সাংবাদিক সান্তা মারিয়া বারাগান। তিনি ওমায়রার সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি শেষ সময় তার সব চাহিদাই মিটিয়েছিলেন। শুধু ওমায়রার বাঁচার উচ্ছে পুরণ করতে পারেননি। ওমায়রা তাঁর কাছে নিজের জীবনের কথা, গ্রামের কথা  তুলে ধরেছিল । বলেছিল স্কুলের কথাও। বারবার বাঁচার আর্তি জানিয়েছিল। খেয়েছিল লজেন্স. কোল্ডড্রিংস। নিজেকে মৃত্যুর হাত থেকে দূরে রাখতে সব চেষ্টা করেছিল। ওমায়ার মৃত্যুর কিছু আগেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছিলেন ফোটোগ্রাফার ফ্রাঙ্ক ফোর্নিয়ার। তাঁর তোলা ছবি পুরষ্কার পায়। পাশাপাশি কলম্বিয়া সরকারের ব্যার্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেয়। 

1010
নেতিয়ে পড়ে ওমায়রা

ঘণ্টা মিনিট সেকেন্ডের কাঁটা পেরিয় সময় যত বয়ে যায় ততই ঝিমিয়ে আসে ওমায়রা। নেতিয়ে পড়ে। কাদা জলে দাঁড়িয়ে হাতের আঙুল সাদা হয়ে গিয়েছিল। প্রথমে রক্ত জমে চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল। পরে সেই চোখই কালো হয়ে যায়। ভুল বকতে শুরু করেছিল ওমায়রা। নির্মম সেই দৃশ্য নিজের ক্যামেরা বন্দি করেছিলেন  জার্মান সাংবাদিক। আর শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গিয়েছিলেন ছোট্ট মেয়েটিকে সাহায্য করতে। ঘটনার প্রায় তিন দিন পর অর্থাৎ ১৬ নভেম্বর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওমায়রা। ৬০ ঘণ্টা জলের তলায় আটকে গ্যংগ্রিন ও হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১৩ বছরের মেয়েটি। 

Read more Photos on
click me!

Recommended Stories