ঘটক বাড়ির দুর্গোৎসব, শতাব্দী প্রাচীন নিয়ম মেনে বলি হয় মহামায়ার সামনে
সুদূর বাংলাদেশের ফরিদপুরের বিঝারী গ্রামে প্রায় আড়াইশ বছর আগে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছিলেন ঘটক পরিবারের পূর্বপুরুষেরা। বাংলাদেশ থেকেই এই পরিবারের পুজোর ঐতিহ্য শুরু। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে এপার বাংলায় এসে পৌঁছে এরা বসত শুরু করেন কলিকাতায় । সেখানেও প্রথম থেকেই শুরু হয় দুর্গাপূজা। টানা এই আড়াইশ বছরে কখনো ছেদ পড়েনি পুজোয়।
deblina dey | Published : Sep 16, 2019 4:11 AM IST
শাক্ত মতে সমস্ত আচার অনুষ্ঠান মেনে আজো পুজো হয় ঘটক পরিবারে। এখনো দুই শতাব্দীর প্রাচীন নিয়ম মেনে পুজোর তিন দিনই বলি হয় মহামায়ার সামনে। এবং নিজের হাতে সেই বলিদান দেন পরিবারেরই কোনো সদস্য। শুধু তাই নয় এই ঘটক পরিবারের পুজোয় অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মা দুর্গার বামে থাকেন গণেশ আর কার্তিক এর অবস্থান কলা বউ এর পাশে মায়ের ডান দিকে।
এদের পরিবার বাংলাদেশের বিঝারিতে সংস্কৃত পণ্ডিত পরিবার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পরে এঁরা ঘটক উপাধি পান। এই পরিবারের পূর্বপুরুষ বিধুভূষণ ঘটক ছিলেন মা সারদার প্রত্যক্ষ শিষ্য। এনার ডাকে সাড়া দিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন মা সারদা। উদ্বোধন প্রকাশিত মা সারদার শিষ্যের তালিকায় এনার নাম রয়েছে। বিধূভূষণ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন এমন জানা যায়। ১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে এরা চলে আসেন কলিকাতায় ।
গত ৭০ বছর ধরে এপার বাঙলায় চলে আসছে এই পারিবারিক পুজো। এখনো পরিবারের যাদবপুরের রামগড়ের ঠাকুরদালানে আড়ম্বরের সঙ্গে পুজো হয়ে আসছে। বর্তমান প্রজন্মের পুজোর অন্যতম আয়োজক প্রসেনজিৎ ঘটক জানালেন পুজোর ক'দিন দূর দূর থেকে এমন কি দেশের বিভিন্ন শহর ও বিদেশ থেকেও পরিবারের সদস্যরা এসে হাজির হন রামগড়ের বাড়িতে। সকলেই মেতে ওঠেন আনন্দময়ীর উৎসবে। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় আজও পুজো আয়োজনে অর্থের অভাব ঘটে নি কখনো।
শুধু পূজাই নয় এই কটা দিন অতিথি অভ্যাগত ভিড়ে গমগম করে বাড়ি। যারাই প্রতিমা দর্শনে আসেন সকলেই ভোগ পান। প্রতিদিন দুবেলা দুই থেকে আড়াইশ জনের ভোগ রান্না হয় এ বাড়িতে। মা দুর্গা কে উৎসর্গ করা হয় আমিষ ভোগ। তিন দিনেই মায়ের মাছের পদ অপরিহার্য। এমনই নানা বিশেষত্বে অভিনবত্ব অর্জন করেছে ঘটক বাড়ির পুজো। প্রসেনজিৎ জানান আমরা পরিবারের আড়াইশ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এক কালে এই পুজো শুরু করেছিলেন বর্তমান প্রজন্মের প্রপিতামহের প্রপিতামহ। তিনিও পুজো সংগঠিত করেছেন। সে সময়কার তালপাতার পুঁথি ও ভুর্জ পত্র এবং তাল পাতাতেই লেখা চন্ডী আজো যত্নে রক্ষিত হয়ে আছে এই বাড়িতে। এই পুজোর কূল পুরোহিত বংশ পরম্পরায় মেদিনীপুরের নিকুশিনীর ভট্টাচার্য পরিবার করে আসছেন| পুজোর ক'দিন বাড়ির যাবতীয় ভোগ রান্না করে আসছেন পরিবারের মেয়ে ও বউরাও।
বছর বছর একই শিল্পী পরিবারের সদস্যরা গড়ে আসছেন একচালা প্রতিমা। মেদিনীপুরের নিকুশিনী থেকে বংশানুক্রমিকভাবে পুরোহিত আসছেন| এবার পুজোয় তন্ত্র মতে শাক্ত আরাধনায় ঘটক বাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্য সেই ঐতিহ্য আজও বজায় রাখার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। কলকাতার পারিবারিক পুজোর ঐতিহ্যে ঘটক পরিবারের পুজো উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে।