ছোট্ট ছাত্রীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন এপিজে আব্দুল কালাম, তাঁদের দিয়েছিলেন ভবিষ্যতে বড় হওয়ার পরামর্শ। ২০১২ সালের এশিয়ানেট নিউজ এডুফেস্টে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সেই মূল্যবান পরামর্শগুলি ফিরে দেখা আরও একবার।
২০১২ সালের এশিয়ানেট নিউজ এডুফেস্টে ভবিষ্যত জীবনের কেরিয়ার গড়ে তোলার আলোচনায় ছাত্রছাত্রীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’ ও বিশিষ্ট বিজ্ঞানী তথা গবেষক ডক্টর এপিজে আবদুল কালাম। তিনিই ছিলেন স্বাধীন ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি।
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রথম প্রশ্ন করেন দশম শ্রেণির গায়ত্রী মোহন, ভবিষ্যৎ জীবনে যাঁর লক্ষ্য একজন মহাকাশ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওঠা। রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামকে তিনি বলেন, সমুদ্র তীরবর্তী জন্মস্থান রামেশ্বরম থেকে নিউ দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত তাঁর যাত্রা এক বিশাল প্রাপ্তি। তিনি রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেন পরবর্তী প্রজন্মকে সফল হওয়ার জন্য বিশেষ কিছু উপদেশ দিতে। এই প্রশ্নে ডক্টর এপিজে আবদুল কালাম ৪টি প্রধান টিপস দেন। প্রথমটি হল, জীবনে মহান লক্ষ্য স্থির করা, দ্বিতীয়টি হল, ক্রগামত জ্ঞান অর্জন করতে থাকা। তৃতীয় উপদেশ, কঠোর পরিশ্রম। চতুর্থ হল, জীবনে কঠিন অধ্যবসায় এবং সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়া।
এরপর সমস্ত ভারতের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেন সপ্তম শ্রেণির জোভিন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি এবং সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কী কী? ছোট্ট জোভিনের এই প্রশ্নে বেশ খুশি হয়ে রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম জবাব দেন, “তোমরাই ভারতের সবথেকে বড় শক্তি। এই দেশের ৬ শ’ মিলিয়ন নবীন ছেলেমেয়েরাই দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি”। দেশের দুর্বলতার কথা বলতে গিয়ে তাঁর গলায় আক্ষেপের সুর। তিনি বলেন, “একটা জাতি সঠিক দৃষ্টি ছাড়াই শেষ হয়ে যায়”।
“মহাকাশ বিজ্ঞানী, নাকি, রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠা, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?”, ছাত্রছাত্রীদের এই প্রশ্নে ডক্টর কালাম জবাব দেন, “সবচেয়ে আগে আমি একজন শিক্ষক। যখন আমার ছাত্ররা পিএইচডি করেন, তখন সেটা আমার কাছে সবথেকে বড় আনন্দের বিষয়।” জীবনে আইএএস হতে চাওয়া পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রকে তিনি শপথ করান, আইএএস হবার পর দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার। ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং কৃতজ্ঞতা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য ছিল, ভালোবাসার কোনও দাম হতে পারে না। বাবা মায়ের থেকে আসে এই ভালোবাসা। প্রতিজ্ঞা করো, জীবনে নিজের মাকে গর্বিত করে তোলার। সেটাই হবে তোমার মায়ের ভালোবাসার প্রতি তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। দুটি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন বাচ্চা যখন এয়ারক্রাফটে প্রবেশ করে, তখন তাদের সঙ্গে সমস্ত সদস্যরা ভালো ব্যবহার করেন, সেটাই সহানুভূতি।
স্কুল জীবনে অত্যন্ত সাধারণ মানের ছাত্র থেকে বুদ্ধিদীপ্ত মেধা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিমান প্রযুক্তি বা এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিঙে ভারতবর্ষের মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক বিকাশ এনে দিয়েছিলেন ডক্টর এপিজে আবদুল কালাম। রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠার চেয়েও দেশ তথা সারা পৃথিবীর নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি এক উজ্জ্বল দীশা এবং সফলতায় হাল না ছেড়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণা।
আরও পড়ুন-
টাকায় এবার রবীন্দ্রনাথ-আব্দুল কালামের ছবি? কবে হাতে মিলবে নতুন নোট, জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
APJ Abdul Kalam: মৃত্যুবার্ষিকীতে ফিরে দেখা আবদুল কালামের বৈচিত্র্যময় জীবনের কোলাজ
'মিসাইল ম্যান' এবার সিনেপর্দায়, টুইটারে ফাঁস প্রথম লুক