কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু, মানুষ ব্যবহারের সুবিধার জন্য কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার বেশি করে করছে। যদিও, এই কাপড়ের মাস্ক আদৌ কোভিড ১৯-এর ভাইরাসকে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরের ভিতরে না যেতে দিতে কতটা কার্যকরি তার কোনও প্রমাণ মেলেনি।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের (Omicron Variant) আক্রান্তের সংখ্যা উত্তোরত্তোর বেড়েই চলেছে। এহেন পরিস্থিতিতে জরুরি হয়ে উঠেছে মাস্ক-এর ব্যবহার নিয়ে কথা বলার (Proper Use Of Mask)। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে আলোচনা চলছে তা হল কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার (Use of Cloth Mask)। প্রশ্ন উঠেছে আদৌ কি কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের হাত থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম (Cloth Mask is Helpful Against Omicron Variant?)? কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার নিয়ে কোভিড ১৯ (COVID 19) অতিমারির শুরুতে চর্চা হয়েছিল। সে সময় বিশেষজ্ঞরা কাপড়ের মাস্ককে কোনওভাবেই ছাড়পত্র দেননি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার নিয়ে এবার একবার ফের সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, কাপড়ের মাস্ক কোনওভাবেই ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম নয়। বরং তাঁরা এন ৯৫ মাস্ক (N95 Mask) এবং কেএন ৯৫ মাস্ক (KN95 Mask) ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কাপড়ের মাস্কে কটনের মধ্যে যে ফাঁক থাকে তা দিয়ে অনায়সেই গলে যেতে পারে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন-কে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি-র মিলকেন ইনস্টিটিউট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডক্টর লিনা ওয়েন জানান, 'কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার আসলে মুখের ফ্যাশন ছাড়া আর কিছুই নয়। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে আটকানোর মতো সেখানে কিছুই নেই। বিজ্ঞানীরা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই কথাটা মাসের পর মাস বলে আসছে।'
ডক্টর ওয়েন-এর মতে কেএন ৯৫ এবং এন ৯৫ মাস্ক ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সবচেয়ে বেশি সক্ষম। কারণ এই দুটো মাস্ক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষুদ্র ভাইরাসকে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ভিতরে না ঢোকার জন্য প্রতিহত করতে পারে। যার ফলে এই দুই ধরনের মাস্কের কোনও একটা পরা থাকলে নাকের ছিদ্র বা মুখ দিয়ে কোনওভাবেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশ করতে পারে না। তবে ওয়েনের মতে, কাপড়ের মাস্ক যে ব্যবহার করা যাবে না এমনটাও নয়, কিন্তু সে ক্ষেত্রে ডাবল মাস্কিং থাকতে হবে। মানে কাপড়ের মাস্কের নিচে সার্জিকাল মাস্ক থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাপড়ের মাস্ক সাধারণত একটা লেয়ারে তৈরি হয়। এখানে কোনও ডাবল লেয়ার থাকে না। এমনকী এই একটা লেয়ার দিতে করোনাভাইরাসের মতো অতি ক্ষুদ্র কণাকে নাক বা মুখের ভিতরে প্রবেশের গতিরোধ করা যায় না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। কেএন ৯৫-এর মতো মাস্ক সাধারণত ৯৫ শতাংশ জিনিসকে ফিল্টার করতে সক্ষম। এর মানে করোনাভাইরাসের মতো অতি ক্ষুদ্র কণাকে নাক ও মুখের ভিতরে প্রবেশ রোধে ৯৫ শতাংশ সফল এই কেএন ৯৫ মাস্ক।
যদিও, বিশেষজ্ঞরা মাস্ক ব্যবহারে আরও কিছু প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন এবং তাঁদের মতে এই বিষয়গুলো অধিকাংশ মানুষই মনে রাখেন না। ফলে, মাস্ক পরলেও অনেক সময় তা ঠিকমতো স্থানে না রাখায় কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ হয়। তাই মাস্ক পরার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়গুলোতে নজর দেওয়াটা জরুরি।
মাস্ক ফিট করেছে কি না তা খতিয়ে দেখা- মাস্ক পরার সময় তা নাসারন্ধ্রকে যাতে ঠিকমতো ঢেকে রাখে তা দেখে রাখা। কোনওভাবে নাসারন্ধ্র মাস্কের নিচ থেকে বেরিয়ে এলে সুরক্ষা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে বাধ্য। তাই মাস্ক পরার সময় নাকের উপর তা যেমন চেপে বসতে হবে তেমনে থুতনির নিচে মাস্কের নিচের অংশ থাকতে হবে। কেউ ডাবল মাস্কিং করলে দেখতে হবে নিচে মাস্ক যেন সঠিকভাবে নাক ও মুখের উপরে চেপে থাকে। এবং উপরের মাস্কও যেন সঠিকভাবে নাক ও মুখের উপরে থাকে।
মাস্ক পরার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস সঠিকভাবে নিতে পারছেন কি না তা খতিয়ে দেখুন- যখন ডাবল মাস্কিং করবেন তখন দেখবেন যাতে নিশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে। না হলে দমবন্ধ হয়ে আসতে পারে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে কিছু দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
মাস্ক পরার সময় কোনওভাবে যেন চোখের দৃষ্টি বিঘ্নিত না হয়--- মাস্ক পরার সময় তা যদি চোখের উপরে চলে আসে তাহলে দৃষ্টি বিঘ্নিত হতে পারে। তাই এমনটা যাতে না হয় তা খেয়াল রাখুন।
চারপাশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ডাবল মাস্ক পরুন- অনেক সময় দেখা যায় যে আমরা ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি অথবা আমরা একটা স্থানে রয়েছি যেখানে ভিড় তেমন নেই, একজন মানুষের থেকে আর এক জন মানুষের দূরত্ব অনেকটাই। এহেন পরিস্থিতিতে সিঙ্গল মাস্কিং ঠিক আছে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের পক্ষে ভালো। কিন্তু, ডাবল মাস্কিং হল যে কোনও পরিস্থিতিতে আদর্শ।
আরও পড়ুন-
Christmas 2021: উৎসবে আনন্দ যেন বিপদ না ডেকে আনে, মাথায় রাখুন এই কয়টি জিনিস
ওমিক্রন রুখতে কাপড়ের মাস্ক কতটা কার্যকর, সতর্ক করে কী বললেন বিশেষজ্ঞরা
Corona Infection-শয়ে শয়ে লোকের জমায়েতে মুখে মাস্ক নেই কারোর, রমরমিয়ে চলছে হাট