আশঙ্কা করলেন অ্য়াপলো গ্লিনেগেলস হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ইনটারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, ডক্টর বিকাশ মজুমদার।
দেখুন হার্টের রোগে যাঁরা ভুগছেন ওষুধ চালিয়ে যাওয়া তাঁদের খুব জরুরি। ধরুন যাঁদের স্টেন বসানো রয়েছে হার্টে তাঁদের ক্ষেত্রে তো ওষুধ অত্য়াবশ্য়ক। তাই লকডাউনের সময়ে ওষুধের সংকট দেখা দিলে খুবই মুশকিল। তবে আমার কী মনে হয় জানেন, আমরা একটু বেশিই ভয় পাচ্ছি। একসঙ্গে বেশি ওষুধ কিনে ফেলছি। সেটাও এই সংকটের একটা কারণ। যদিও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করার ব্য়বস্থা সরকার করছে।
তা, যাই হোক। এই সময়ে হার্টের রোগী যাঁরা বাড়িতে রয়েছেন, যাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে, রুটিন ভিজিটের জন্য় তাঁদের এখন আর হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই। মানে ধরুন, এই তিনমাস হয়ে গিয়েছে, এবার একবার ডাক্তারকে দেখিয়ে নেওয়া দরকার, এর কিন্তু কোনও দরকার নেই এখন। সে হাসপাতাল হলেও নয়, চেম্বার হলেও নয়। তেমন কিছু জানার থাকলে আপনার ডাক্তারকে ফোন করুন নির্দ্ধিদায়।
আমরা এখন আমাদের হাসপাতালের তরফ থেকে অনলাইন কনসালটেশনের উদ্য়োগ নিয়েছি। বিশেষ করে যাঁরা পুরনো রোগী, যাঁদের আমরা চিনি জানি তাঁদেরকে। সেক্ষেত্রে মেডিকেল কাউনসিল অব ইন্ডিয়া বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করেছে। একটা পোর্টাল থাকবে, সেখানে ভিডিয়ো কলের মাধ্য়মে কনসালটেশন চলবে। তবে সেখানে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার থাকবে যে, আমরা যেহেতু রোগীকে সরাসরি পরীক্ষা করতে পারছি না, তার একটা ঝুঁকি থাকবে। আর দুপক্ষকেই সেই ঝুঁকি মেনে নিতে হবে।
তবে কাউর যদি এমার্জেন্সি কোনও পরিস্থিতি দেখা দেয়, তখন কিন্তু এই ব্য়বস্থা চলবে না। সেক্ষেত্রে বাড়িতে বসে থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। করোনার প্রকোপ চলছে বলে যে হার্ট অ্য়াটাক হবে না তার তো কোনও মানে নেই। তাই আমরা যা বলে থাকি-- বুকে ব্য়থা যদি দশমিনিটের বেশি থাকে, আর বুকের মাঝখানে চাপ ধরে থাকে, জিভের নিচে সরবিট্রেট দেওয়ার পরও যদি তা না-কমে, তাহলে সবচেয়ে কাছের কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে দেরি না-করে।
যদিও লকডাউনের মরশুমে প্য়ানিক থেকে হার্টের সমস্য়া দেখা গিয়েছে, এমন কোনও অভিজ্ঞতা অবশ্য় আমার হয়নি। আমি সবাইকে একটা কথাই বলছি, বাড়িতে থাকুন, ওষুধ গুলো চালিয়ে যান। আর সেরকম কোনও কিছু হলে অবশ্য়ই এমার্জেন্সিতে আসুন।
তবে এক জায়গায় আমার একটা ভাবনা রয়েছে। বলা ভালো দুশ্চিন্তা। অনেক হার্ট ফেলিওরের রোগী আছেন। যাঁদের শ্বাসকষ্ট থাকে, হার্টের পাম্পিং কম। তাঁদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু অন্য়দের থেকে বেশি। তাঁরা যখন শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভরতি হন, তখন বোঝা মুশকিল হয়ে যায়, করোনার সংক্রমণের জন্য় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে নাকি হার্ট ফেলিওরের কারণে হচ্ছে। এই একটা জায়গায় আমাদের চিন্তা রয়েছে। অন্য়ান্য় হার্টের রোগীদের নিয়ে এই সমস্য়া নেই। সেক্ষেত্রে অবশ্য় দুটোর মধ্য়ে ফারাক করা সহজ হয়। কিন্তু হার্ট ফেলিওরের রোগীদের ক্ষেত্রেই এই ধন্দটা কাজ করে। আমরা আশঙ্কা করছি, আগামী কিছুদিনের মধ্য়ে হয়তো হার্ট ফেলিওরের রোগীদের সংখ্য়া বেড়ে যেতে পারে ভাইরাল ইনফেকশনের জন্য়। কারণ, যদি রোগীর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয় তাহলে হার্ট ফেলিওয়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আর যাঁদের হার্ট ফেলিওরের রোগ নেই, তাঁদেরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের জন্য় পাম্পিং এবিলিটি কমতে পারে। ভাইরাল মায়োকার্ডাইটিস বলে একটা কনডিশন রয়েছে। যার থেকে জটিলতা বাড়তে পারে। আর হার্ট ফেলিওর একটা ক্রনিক কনডিশন বা রোগ, যা নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই রোগীদের সমস্য়া আরও বেড়ে যায়। এবার করোনাভাইরাস কতটা হামলা করবে আগামিদিনে, তার ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করবে।