
সোফিয়া কুরেশি: আজ যখন আমরা নারী সবলীকরণের কথা বলি, তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশির নাম গর্বের সাথে উচ্চারিত হয়। তিনি কেবল সেনাবাহিনীর পোশাকে দেশরক্ষা করছেন না, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। অপারেশন সিন্দুরের মতো আন্তর্জাতিক মিশনে ভারতের মুখপাত্র হিসেবে মিডিয়াকে অবহিত করার পাশাপাশি, ১৮ টি দেশের সেনাবাহিনীর 'এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮' এর নেতৃত্বও দিয়েছেন। জেনে নিন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি মূলত গুজরাটের বাসিন্দা। তিনি বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর করেছেন। ১৯৯৭ সালে Maharaja Sayajirao University থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। একজন সাধারণ মেয়ের মতো তিনি পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু মনে ছিল এক বিশেষ স্বপ্ন, সেনাবাহিনীতে যোগদান করে দেশসেবা করা। আর সেই স্বপ্ন তিনি কেবল দেখেননি, বাস্তবে করে দেখিয়েছেন। আজ তার জন্য গর্বিত গোটা দেশবাসী।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এয়ার স্ট্রাইক করেই শুধু নজির গড়েননি সোফিয়া। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের ঝুলিতে রয়েছে একের পর এক সাফল্য। দেশের এই অগ্নিকন্যা হলেন সেনাবাহিনীর প্রথম সংরক্ষিত শ্রেণির মহিলা অফিসার। অপারেশন সিঁদুর ছাড়াও এর আগে দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই মহিলা অফিসার।
২০১৬ সালে ৪০ সদস্যের ভারতীয় সেনাদলকে মহড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া। মহড়ার লক্ষ্য ছিল শান্তিরক্ষার অভিযান। এই মহড়ায় নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনি নেতৃত্ব অর্জন করেছিলেন। তিনিই ছিলেন একমাত্র মহিলা অফিসার। ১৮টি দেশের সামনে ভারতের সামরিক মহড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে সোফিয়া নিযুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা অভিযানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে। জানা গিয়েছে, শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত কাজে সোফিয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রচুর। ২০০৬ সালে কঙ্গোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা অভিযানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
সেনাবাহিনীর সঙ্গে সোফিয়ার সম্পর্ক বহু প্রজন্মের। তাঁর দাদা এবং বাবা দুজনেই সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ২০০৬ সালে, তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে কঙ্গোতে নিযুক্ত ছিলেন। তারপর সেখান থেকে ভারতীয় সেনার কর্নেল পদে নিযুক্ত এই মহিলা অফিসার।
রিল নয় রিয়েল লাইফের সেনা নায়িকা হলেন এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। যার প্রত্যাঘাতে আজ উচ্ছ্বসিত আসমুদ্র হিমাচল। কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনার সিগন্যাল কর্পের আধিকারিক। তিনিই প্রথম মহিলা অফিসার যিনি বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় ভারতীয় সেনার কন্টিনজেন্টকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এবং গড়েছিলেন ইতিহাস।
আগেই আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। খুব শীঘ্রই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রত্য়াঘাাত হানবে ভারত। সেইমত মঙ্গলবার গভীর রাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ২৪ জায়গায় হামলা চালাল একযোগে তিন বাহিনী। জঙ্গিদের কোমর ভাঙতে দেশের এই ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী হয়ে আরও একবার ইতিহাস গড়লেন সোফিয়া।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসছিল গোটা দেশ। অবশেষে এলো সেই দিন। শত্রুর ঘরে ঢুকেই শত্রুর মুখে ছাই দিলো ভারত। পহেলগাঁওয়ে মহিলাদের সামনে স্বামীদের হত্যা। প্রতিশোধ নিতে মহিলাদের নেতৃত্বেই বদলা নিলো ভারত। পাক জঙ্গি বধের নাম দিলো ‘Operation Sindoor’।