ক্লাব হাউস চ্যাট লিকে এবার ফাঁসলেন কংগ্রেস নেতা দ্বিগবিজয় সিং। লিক হওয়া চ্যাটে দাবি করা হয়েছে, এক পাক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে দ্বিগবিজয় সিং নাকি সাফ জানিয়েছেন ক্ষমতায় এলে জম্মু-কাশ্মীরের বুকে আর্টিকেল ৩৭০ তুলে নেওয়ার বিষয়টিতে তাঁদের বিচার-বিবেচনা থাকবে। দ্বিগবিজয়ের এই মন্তব্যে আগুনে ঘি ফেলার মতো হয়ে গিয়েছে। ক্লাব হাউসের এই চ্যাট প্রকাশ্যে আসার পর কড়া আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। তাদের জাতীয় মুখপাত্র এবং রাজ্যসভায় বিজেপি-র সাংসদ রাজীব চন্দ্রশেখর কড়া ভাষায় দ্বিগবিজয়ের সমালোচনা করেছেন। যদিও, এই অডিও-র সত্যতা বিচার করেনি এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। ইতিমধ্যেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই অডিও।
ক্লাব হাউস হল একটি প্রাইভেট চ্যাট গ্রুপ। সেই চ্যাটের খানিকটা অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হয়েছে বলেই দাবি করছেন নেটিজেনরা। এই ফাঁস হওয়া চ্যাটের অডিওতে দেখা যাচ্ছে দ্বিগবিজয় সিং ছাড়াও সেখানে ছিলেন পাকিস্তানের সাংবাদিক শাহবাজ। সেই সঙ্গে হাজির ছিলেন সমাজের আরও বেশকিছু গণমান্য ব্য়ক্তি। ক্লাব হাউস চ্যাটের যেটুকু অডিও লিক হয়েছে তাতে শোনা যাচ্ছে প্রথমে একজনের গলা। যিনি প্রশ্ন করছেন দ্বিগবিজয়কে। তাঁর সরাসরি প্রশ্ন কোনওভাবে যদি ভারতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা থেকে বিজেপি-কে সরে যেতে হয় এবং মোদীও তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্ব হারায়, বরং সেই জায়গায় কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে, তাহলে জম্মু ও কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০ উঠিয়ে দেওয়ার বিষয়টিতে কংগ্রেস কী ভূমিকা পালন করবে। এই প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেস নেতা দ্বিগবিজয় সিং ওই ব্যক্তিকে শাহবাজ বলে সম্বোধন করেছেন। প্রথমে ধর্মীয় মৌলবাদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন দ্বিগবিজয়। এরপর তিনি জানিয়েছেন যে কোনও ধরনের ধর্মীয় মৌলবাদ জন্ম দেয় ধর্মীয় ঘৃণার। আর হাত ধরেই স্থান পায় হিংসা। দ্বিগবিজয় জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের সংখ্যাধিক্য ছিল মুসলিম জনজাতি, সেখানে রাজা ছিল হিন্দু। এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতরাও সেখানে সরকারি চাকরিতে যাবতীয় সংরক্ষণের ফায়দা তুলেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন যে যে কোনও ধর্মীয় মৌলবাদীদের বুঝতে হবে যে প্রত্যেকের স্ব-স্ব ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি আরও জানান যে, যে ভাবে জম্মু-কাশ্মীরের বুকে আর্টিকেল ৩৭০ তুলে দিয়ে স্পেশাল স্টেটাস কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং রাজ্যের মর্যাদাকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে- তাতে একটা জিনিস স্পষ্ট যে সেখানে কোনও গণতন্ত্র ছিল না। এমনকী তিনি এও বলেন যে এই আর্টিকেল ৩৭০ তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের বুকে যে কোনও মানবতা ছিল না তার প্রমাণ মিলেছে সেখানকার নেতা-নেত্রীদের সমানে কারাগারের পিছনে নিক্ষেপ করার ঘটনায়। সুতরাং ক্ষমতায় এলে কংগ্রেসের কাছে অবশ্যই আর্টিকেল ৩৭০ তোলার বিষয়টি বিচার্য হবে।
দ্বিগবিজয় সিং-এর এই ক্লাব হাউস চ্যাট সামনে আসার পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বিজেপি-র জাতীয় মুখপাত্র রাজীব চন্দ্রশেখর সাফ জানিয়েছেন, যেভাবে দ্বিগবিজয় বারবার দেশের স্বার্থবিরোধী কথা বলছেন এবং নানা সময়ে ওসামা বিন লাদেন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশবিরোধী মন্তব্য করেছেন, তাতে একটা জিনিস স্পষ্ট যে কংগ্রেস নেতারা দেশের থেকে শত্রুদের কাছে বেশি বিশ্বস্ত থাকতে চাইছে। সুতরাং, ভারতবাসীর উচিত কংগ্রেস মুক্ত দেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা।
২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বুক থেকে আর্টিকেল ৩৭০-কে প্রত্যাহার করে। এই আর্টিকেল ৩৭০-এর সুবাদে জম্মু ও কাশ্মীর একটি অঙ্গরাজ্য হয়েও বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করত। যার ফলে আর অন্য সাধারণ অঙ্গরাজ্যের থেকে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অনেকটা বেশি স্বাধীনতা ভোগ করত জম্মু ও কাশ্মীর। ভারত সরকারে মতে জম্মু ও কাশ্মীরের উপরে যখন এই আর্টিকেল ৩৭০ প্রয়োগ করা হয়েছিল তখন সেখানে পরিস্থতি অন্যরকতম ছিল। সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। সুতরাং, আর্টিকেল ৩৭০ জম্মু ও কাশ্মীরের বুকে বজায় রাখার কোনও দরকার নেই।