তার অপরাধ ছিল, না বুঝে রিসর্টে ঢুকে পড়া
সাজা হিসাবে জ্বলন্ত টায়ার জড়িয়ে দেওয়া হল কানে
পুড়ে মৃত্যু হল পূর্ণ বয়স্ক হাতির
মানুষের চরম অমানবিকতার ছবি ধরা পড়ল ক্যামেরায়
আরও একবার চরম লজ্জায় পড়ল মানব সভ্যতা। জীবন্ত অবস্থায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির গায়ে। দহন জ্বালায় ছটফট করতে করতে বনে বাদাড়ে দৌড়ে বেড়ালো বন্য প্রাণীটি। শেষে জঙ্গলের এক জায়গায় রক্তাক্ত অবস্থায় বন বিভাগের রক্ষীরা তাকে পেলেও, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হল তার। আর এই বর্বরোচিত আচরণের ভিডিও ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই নক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ুর মুদুমালাই ফরেস্ট রেঞ্জের মাসিনাগুড়ি-তে। জানা গিয়েছে স্থানীয় এক রিসর্টে ঢুকে পড়েছিল হাতিটি। আর তাকে তাড়াতে কয়েকজন গ্রামবাসী পাশের একটি ছাদ থেকে একটি টায়ার জ্বালিয়ে তার উপর ছুঁড়ে মারে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও-টিতে দেখা গিয়েছে জ্বলন্ত টায়ারটি হাতিটির কানের সঙ্গে আটকে যায়। দহন জ্বালায় আর্তনিনাদ করতে করতে হাতিটি কানের সঙ্গে আটকে থাকা দাউ দাউ করে জ্বলা টায়ারটি নিয়েই বনের মধ্যে পালিয়ে যায়।
বন আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গত ১৯ জানুয়ারি হাতিটিকে তাঁরা গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন। অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় সে বনের মধ্যে ছোটাছুটি করছিল। কুমকি হাতি ব্যবহার করে তাকে ধরা হয়, তারপর তাকে ঘুমপাড়ানি গুলি চালিয়ে গুম পারিয়ে থেপ্পাকাড়ু হস্তি চিকিত্সা শিবিরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু মাঝপথেই হাতিটির মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন - ট্র্যাক্টর মিছিলে ৪ কৃষক নেতাকে খুনের ছক, দিল্লির সিংঘু সীমান্তে ধরা পড়ল মুখোশধারী
আরও পড়ুন - মৃত ব্যক্তির বীর্য নিয়ে শ্বশুর-বউমার টানাটানি, অদ্ভূত মামলায় কী রায় দিল আদালত
আরও পড়ুন - এবার কি 'ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল'এরও নাম বদল, কী সুপারিশ করল মোদীর নেতাজি কমিটি
ময়না তদন্তে, হাতিটির পিঠে ও কানে গুরুতর দহনের ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। ওই ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাতিটির বয়স ছিল ৪০ বছরের মতো। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ধরে তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে ওই টায়ার জ্বালিয়ে হাতিটির দিকে ছুঁড়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ছিল প্রশান্ত, রেমন্ড ডিন ও রিকি রায়ান নামে তিন গ্রামবাসী। তাদের তিনজনের নামেই পশু নির্যাতন (প্রতিরোধ) আইনের ধারায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দু'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তৃতীয় ব্যক্তি পলাতক।
গত বছর কেরলে এক গর্ভবতী হাতিকে আতশবাজি ভরা ফল খাওয়ানো হয়েছিল। বিস্ফোরণের আঘাতে ঝলসে গিয়েছিল তার দেহের অনেকটা অংশ। প্রবল যন্ত্ণা নিয়ে কয়েকদিন কাটানোর পর মৃত্যু হয় তার। সেই ঘটনার পর সারা দেশ, এমনকী বিদেশেও সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। কিন্তু, তারপরেও ভারতে পশু নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনা প্রমাণ করে দিল, ভারত যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়েছে।