সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি ছবি
প্রতিবাদী কৃষকের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে এক পুলিশ কর্মী
আর প্রবীণ কৃষকের হাতে রয়েছে লাঠি ও ইট
সত্যিই কি এতটা নির্মম হল সরকার
রাজ্যসভায় বিরোধী দলগুলির তীব্র বিরোধিতার মধ্যেই সোমবার ধ্বণি ভোটের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্র সংক্রান্ত দুটি বিল পাস হয়েছে। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিই নয়, পঞ্জাব, হরিয়ানা সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই কৃষি পণ্য সংক্রান্ত বিলগুলির বিরোধিতা করেছে। এরমধ্যেই কিছু দিন আগে এই বিলের বিরোধিতা করার কারণে হরিয়ানায় কৃষকদের উপর লাঠিচার্জ করা হয়েছিল। এরপরই একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন প্রবীণ ব্যক্তি এক হাতে একটি লাঠি ও অপর হাতে একটি ইট নিয়ে সুরক্ষা বাহিনীর এক জওয়ানের দিকে তাক করে রয়েছেন। অন্যদিকে সেই জওয়ানের এক হাতে লাঠি, অন্য হাতে সে ওই ব্যক্তির দিকে বন্দুক উঁচিয়ে রয়েছে।
এই ছবিটি ইন্টারনেটে দারুণ আলোড়ন ফেলেছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন এই ছবিটি কি আসল না নকল? সত্যিই কি আন্দোলনরত কৃষকদের দিকে বন্দুক তাক করেছে হরিয়ানা সরকারের পুলিশ? ছবিটি পোস্ট করে অনেকেই সঙ্গের ক্যাপশনে লিখেছেন 'আমাকে গুলি করে মারবেন না, আমি ইতিমধ্যে একজন হতভাগ্য মানুষ, আমার মৃত্যুর কারণ আমি পেশায় কৃষক। সঙ্গে 'কিষানবিরোধী নরেন্দ্রমোদী' হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকী, দিল্লি ও মুম্বই-এর যুব কংগ্রেসের টুইটার অ্যাকাউন্টেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে এই ছবি শেয়ার করা হয়েছে।
তবে এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে ছবিটির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে ছবিটির সঙ্গে চলমান কৃষক বিক্ষোভের কোনও সম্পর্ক নেই। বস্তুত ভাইরাল ছবিটি অন্তত সাত বছরের পুরনো। গুগল সার্চ ইঞ্জিনে ছবিটি ধরে বিপরীত তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেইসব প্রতিবেদন অনুযায়ী ছবিটি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উত্তরপ্রদেশের মীরাটের খেরা গ্রামে তোলা হয়েছিল।
সেইসময় মুজাফ্ফরনগর দাঙ্গার মামলায় তৎকালীন বিধায়ক সংগীত সোম-কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে জাতীয় সুরক্ষা আইনে মামলা করা হয়েছিল। সেই গ্রেফতারির প্রতিবাদে খেরা গ্রামে বিপুল সংখ্যক লোক জড়ো হয়েছিল। তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছিল। উন্মত্ত জনতার ছোঁড়া পাথরের আঘাতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছিলেন। সেইসময় কেন্দ্রে ছিল ইউপিএ সরকার আর রাজ্যে সমাজবাদি পার্টির সরকার।
কাজেই ভাইরাল হওয়া ছবিটির সঙ্গে যে দাবিটি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে তা সত্যি নয়। ছবিটির সঙ্গে চলমান কৃষক বিক্ষোভের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে কৃষকদের কন্ঠ রোধ করতে হরিয়ানায় যে তাদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছিল, সেই অভিযোগ সত্যি।