সামনের মানুষটা কি নভেল করোনাভাইরাস সংক্রামিত
আজকের বিশ্বে এর থেকে বড় রহস্য আর নেই
আর সেই রহস্য উদযাটনেই নামলেন ফেলুদা
সিআইএসআর-এ দুই বাঙালি বিজ্ঞানীর অভিনব আবিষ্কার
বয়স হয়েছে ফেলুদার। ১৯৬৫ সালে সন্দেশ পত্রিকায় তাঁর প্রথম আবির্ভাব ঘটেছিল। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ২৭। সেই হিসাবে ধরলে ফেলুদার বয়স এখন ৫৫ বছর পর তাঁর বয়স দাঁড়ায় ৮২। দীর্ঘদিন গোয়েন্দাগিরি করেন না। কিন্তু, করোনাভাইরাস দেশকে যেভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে, যে দীর্ঘদিন বাদে তিনি ফের নামলেন রহস্য উদঘাটনে। আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য, সামনের মানুষটা কি নভেল করোনাভাইরাস সংক্রামিত?
আর ফেলুদা সেই উত্তর কয়েক মিনিটেই দিয়ে দিতে পারবেন বলে দাবি করছেন নয়াদিল্লির কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্জাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজি বা সংক্ষেপে বললে সিএসআইআর-আইজিআইবি'র বিজ্ঞানীরা। এই প্রতিষ্ঠানের দুই বাঙালি বিজ্ঞানী ডাক্তার সৌভিক মাইতি এবং ডাক্তার দেবজ্যোতি চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি গবেষক দল কোভিড-১৯ রোগী সনাক্তের জন্য একটি সহজ 'স্ট্রিপ- টেস্ট' বা স্ট্রিপ পরীক্ষার কিট তৈরি করেছেন। যে স্ট্রিপ বা কাগজের টুকরোর মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যেই কারোর দেহে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস বা নতুন করোনাভাইরাসটি আছে কি না তা জানা যাবে। আর এই স্ট্রিপটিরই নাম রাখা হয়েছে বাঙালির একান্ত ঘরের গোয়েন্দার নামে।
সিএসআইআর-এর প্রধান শেখর সি ম্যান্দে জানিয়েছেন, ফেলুাদা স্ট্রিপ-টি গর্ভাবস্থার পরীক্ষার স্ট্রিপ-এর মতোই। পিসিআর-ভিত্তিক বা অন্যান্য কোভিড-১৯ পরীক্ষাগুলির মতো, এটি ব্যবহারের জন্য কোনও বিশেষ দক্ষতা বা বিশেষ যন্ত্রের প্রয়োজন হবে না। এই স্ট্রিপটি রঙের পরিবর্তনের মাধ্যমেই জানিয়ে দেবে করোনার উপস্থিতি। যে কোনও সাধারণ প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরিতেই এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এর ফল হবে একশো শতাংশ নির্ভুল। কারণ নতুন করোনভাইরাসটির জিনোমিক সিকোয়েন্সগুলি পর্যবেক্ষণ এবং সনাক্ত করতে এই পরীক্ষায় একেবারে অত্যাধুনিক জিন-এডিটিং সরঞ্জাম- ক্রিসপিআর-ক্যাস৯ ব্যবহার করা হয়েছে।
১৯৬৪-তে করোনাভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন এই মহিলা বিজ্ঞানী, কেউ তখন মানেনি তাঁর দাবি
'শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করুন', মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সজল চোখে আর্তি মৃত করোনা-যোদ্ধার স্ত্রীর
করোনা সংকটে জনপ্রিয়তা বাড়ছে প্রায় সব রাষ্ট্রনেতাদের, ব্যতিক্রম শুধু তিনজন
ভারতে বুধবার কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ২০,০০০-এ পৌঁছে গিয়েছে। যত বেশি সম্ভব পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু, প্রথমত, আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে সময় বেশি লাগে এবং বিষয়টি ব্যয়বহুল। লক্ষাধিক টাকার যন্ত্রপাতি প্রয়োজন এবং বেসরকারি পরীক্ষাগারে এইভাবে পরীক্ষা করাতে খরচ পড়ছে ৪,৫০০ টাকা। এরমধ্যে ব়্যাপিড টেস্ট বন্ধ রাখতে হয়েছে। এই অবস্থায় 'ফেলুদা' কোভিড-১৯ লড়াইয়ে বড় ভূমিকা নমিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত কয়েক মিনিটের মধ্যেই বড়জোর একঘন্টা সময়ের মধ্যেই ফেলুদা করোনাকে সনাক্ত করতে পারে, আর এতে খরচ পড়বে মাত্র ৫০০ টাকা।
এই ফেলুদা তৈরির অন্যতম কারিগর বাঙালি বিজ্ঞানী ডাক্তার দেবজ্যোতি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, 'আমরা প্রায় গত দুই বছর ধরে এই সরঞ্জামটি তৈরির কাজ করছিলাম। তবে, (এই বছর) জানুয়ারির শেষের দিকে, যখন এই প্রাদুর্ভাব চিনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, আমরা কোভিড-১৯-এর জন্য এটি কার্যকরী হতে পারে কিনা তা পরীক্ষা করার কাজ শুরু করেছিলাম। সেইসব পরীক্ষার ফলাফলগুলি হাতে আসতে প্রায় মাস দুই সময় লেগেছে'। তিনি আরও জানিয়েছেন, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা এমআইটি-এর মতো প্রতিষ্ঠানেও এইরকম পেপার স্ট্রিপ ভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতির তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু, এই ভারতীয় তথা বাঙালি বিজ্ঞানী জুটিই প্রথম এই ধরণের পদ্ধতি বিকাশে সফল হল। এবার আইসিএমআর করোনাযুদ্ধে 'ফেলুদা'-কে কাজে লাগায় কিনা, সেটাই দেখার।