মানুষের মনে যখন কুসংস্কার বাসা বাঁধে তখন সেটা যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার উদাহরণ কেরলের নরবলির ঘটনাটি। ধনসম্পদ বাড়ানোর আশায় দুই মহিলাকে অপহরণ করার পর খুন করে টুকরো টুকরো করে কেটে রান্না করে খাওয়ার অভিযোগ উঠল কেরলের দম্পতির বিরুদ্ধে।
আমরা কি বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে নরবলির কথা ভাবতে পারি? কুসংস্কারের জগতে মানুষ এখনো কতটা নিমজ্জিত হলে ধনসম্পত্তি বাড়ানোর জন্য জলজ্যান্ত মানুষকে বলি দেয়? আমরা কি আদেও মানুষ নাকি মানুষ রূপে পিশাচ? ঠিক এমনই হাড় হিম করা ঘটনা ঘটেছে কেরলে। ধনসম্পত্তি বাড়ানোর জন্য দুই মহিলাকে অপহরণ করে খুন করে তাদের মাংস কেটে রান্না করে খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেরলের এক দম্পতি ভগবল সিং এবং তার স্ত্রী লায়লার বিরুদ্ধে। মৃত দুই মহিলার নাম পদ্মা এবং রোজেলিন।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে চলতি বছরের জুন মাস থেকে অর্থাৎ জুন মাস থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান রোজেলিন অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাস থেকে পদ্মাকেও আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে সূত্রের খবর। রোজেলিন ও পদ্মা উভয়েই লটারি বিক্রি করতেন। তাদের হঠাৎ নিখোঁজ হত্তয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। তদন্ত শুরু করতেই চেক করতে থাকেন মৃত দুইয়ের পাড়ার সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি। তার জেরেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য যা দেখে রীতিমতো অবাক পুলিশেরা। জানা গিয়েছে ম্যাসাজ পার্লারের মালিক ভগবল ও স্ত্রীকে ধনসম্পত্তি বাড়ানোর লোভ দেখিয়ে নরবলি দেওয়ার মদত দেয় মহম্মদ সফি নামক এক ব্যক্তি।
কোচির পুলিশ কমিশনার নাগারাজু চাকিলাম সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন সাফি নামক ওই ব্যক্তি এই ঘটনার পেছনে মূল চক্রান্তকারী। তদন্তের জেরে জানা গিয়েছে মহম্মদ সফি বিকৃত মস্তিষ্কের। সে ভগবন্ত ও তার স্ত্রীকে বড়লোক হওয়ার জন্য নরবলি দিতে আস্কারা দেয়। প্রথম বলি দিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়নি ভগবল ও লায়লা। সফি ওই দম্পতিকে বুঝিয়েছিল যে প্রথম বলিতে তাদের আর্থিক অবস্থার বিশেষ কোনও উন্নতি হয়নি। প্রথমবারের নরবলিতে হয়তো কোনও প্রথায় ভুল হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণেই দ্বিতীয় বলি দিতে হবে। প্রথমে ওই মহিলাদের খুন করে তাদের দেহ টুকরো টুকরো করেন তাঁরা। এরপরই কিছুটা অংশ খান এবং বাকি অংশটি পুঁতে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। নিহত রোজেলিনের দেহাংশ একটি গর্তের মধ্যেই পোঁতা হয়েছিল। অন্যদিকে পদ্মা নামে আরও যে এক মহিলাকে খুন করা হয়েছিল তার দেহ কেটে তিনভাগে ভাগ করে তিনটি গর্তে পুঁতে ফেলেন ওই দম্পতি। ওইসব দেহাংশ উদ্ধার করে ডিএনএ টেস্ট করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। নিহতদের দেহাংশ টুকরো করার পর তা রান্না করা হয়।
পদ্মাকে ছুরি দিয়ে নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় ,তারপর গলা কেটে লাশটি ৫৬ টুকরো করে দাফন করা হয়। রোজলিনকেও তার গোপনাঙ্গে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। মহম্মদ সফি পদ্মাকে যৌন নির্যাতন ও হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। লায়লা সিং রোজালিনকে হত্যা করেছিল, তার গোপনাঙ্গে ছুরি ঢুকিয়ে আঘাতের পর তার গলা কাটে অন্যদিকে ভগবল সিং তার স্তন কেটে ফেলেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, সফি একজন সিরিয়াল কিলার এবং অন্য কেউ ভিকটিম কিনা তাও খতিয়ে দেখছে। তিনি একজন সাইকোপ্যাথ এবং একজন বিকৃত ব্যক্তি যিনি নিষ্ঠুরতায় আনন্দ পান। মৃত পদ্মার ফোন থেকেই লোকেশন ট্র্যাক করে মহম্মদ সফির হদিশ পায় পুলিশ।
পুলিশের দাবি ওই দম্পতিকে নরবলি দিতে প্ররোচনা দেয় সফি নিজেই। এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে দুই মহিলার খুনের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা। পাশাপাশি অভিযুক্তদের জেরা করে দেখা হচ্ছে, এরকম আরও কোনও ঘটনা তার ঘটিয়েছে কিনা এবং অভিযুক্তদের সকলেই রাখা হয়েছে পুলিশি হেফাজতে।
আরও পড়ুন
বান্ধবীর বাড়ির পেছন থেকেই উদ্ধার অয়ন মণ্ডলের মানিব্যাগ, এখনও নাগালের বাইরে নিহতের মোবাইল ফোন
অন্যের সঙ্গে দুর্গা-দর্শন পছন্দ হয়নি প্রেমিকের, ধর্ষণ করে হত্যার চেষ্টা প্রেমিকাকে