কোট-প্যান্ট ছেড়ে খাটো ধুতি, কীভাবে বদলেছিল গান্ধীর পোশাক, জেনে নিন নেপথ্য কাহিনি

  • গান্ধীর সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে তাঁর আইকনিক খাটো ধুতির পোশাক
  • যা দেখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল তাঁকে 'অর্ধনগ্ন ফকির' বলেছিলেন
  • বরাবরই এরকম পোশাক পড়তেন না মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী
  • তাঁর এই ফকিরি পোশাকের পিছনে অবদান রয়েছে মাদুরাই শহরের

 

amartya lahiri | Published : Oct 2, 2019 11:41 AM IST / Updated: Oct 02 2019, 05:23 PM IST

মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর আইকনিক খাটো ধুতি। মহাত্মার কথা বলতেই তাঁর যে ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে তা হল তাঁর খাটো ধুতি ও শাল জড়ানো ছবি। যা দেখে সেই সময়কার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ক্ষেপে গিয়ে তাঁকে 'অর্ধনগ্ন ফকির' বলেছিলেন। কিন্তু বরাবরই এরকম পোশাক পড়তেন না মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

প্রথম জীবনে আইন ব্যবসা করা সময় তাঁর পোশাক ছিল একেবারে খাঁটি সাহেবদের মতোই। অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকেই তাঁর পোশাক পাল্টে গিয়েছিল। কিন্তু তখনও কিন্তু তিনি খাটো ধুতি ও শাল পরা শুরু করেননি। সেই সময় তিনি খাদির সাদারণ ধুতি-পাঞ্জাবি ও মাথায় 'গান্ধী টুপি' পরতেন। এই পোশাকও পরে পাল্টে গিয়েছিল। আর এর পিছনে বড় অবদান ছিল মাদুরাই শহরের।

সময়টা ১৯২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস। মাদ্রাজ (এখনকার চেন্নাই) থেকে ট্রেনে মাদুরাই যাচ্ছিলেন মহাত্মা। বিদেশী পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। বিদেশী কাপড় ছেড়ে দেশী খাদি পরার আহ্বান করেছিলেন দেশবাসীর কাছে। কিন্তু গান্ধীর নিজের লেখা থেকেই পাওয়া যায়, ট্রেনের বগিতে তিনি দেখেছিলেন বিদেশী পণ্য বর্জনের বিষয়ে কামড়ার লোকদের বিশেষ হেলদোল নেই। অধিকাংশই বিদেশী কাপড়ই পরেছিলেন।

স্বাভাবিকভাবেই গান্ধী তাদের সঙ্গে কথা বলেন। খাদির পরার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু যে উত্তর তিনি পেয়েছিলেন, তা তাঁকে গভীর চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। গান্ধীজির খাদির আহ্বানের জবাবে তারা মাথা নেড়ে বলেছিল, খাদি কেনার মতো অর্থ তাঁদের কাছে নেই।

আরও পড়ুন - সার্ধশতবর্ষে মহাত্মা গান্ধী দেখে নিন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাঁর বিখ্যাত ২০টি মূর্তি

আরও পড়ুন - রইল গান্ধীর সেরা কিছু উক্তি যা আজও সকলকে অনুপ্রাণিত করে

https://bangla.asianetnews.com/sports/mahatma-gandhi-a-football-lover-pyqmnp

গান্ধী তাদের কোনও উত্তর দিতে পারেননি। বদলে তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছিল সেই মন্তব্য। গান্ধী বুঝেছিলেন, খাদির উৎপাদন বাড়াতে হবে। খাটো ধুতি ও শাল হলে তা তৈরি করার সময় ও খরচা দুই কমে। মাথায় ঘুরছিল, দেশবাসীর সঙ্গে আরও কীভাবে নিজেকে সম্পর্কিত করে তোলা যায়। এইসব চিন্তা নিয়েই তিনি মাদুরাই পৌঁছেছিলেন।

১৯২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বরই ছিল সেই ঐতিহাসিক দিন। নিজের স্বাভাবিক পোশাক ধুটি-শার্ট-টুপি ছেড়ে তিনি প্রথমবার খাটো ধুতি পরা শুরু করেন। চম্পারণ সত্যাগ্রহের সময়ই দেশের মানুষের দারিদ্র তাঁকে চিন্তায় ফেলেছিল। কিন্তু মাদুরাই-য়ে এসে সেখানকার দরীদ্র বাসিন্দাদের জীবন ও জীবিকার জন্য সংগ্রামই তাঁকে চরম কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। একই সঙ্গে তিনি মনে করেছিলেন খাটো ধুতি আর সালের সেই পোশাকই তাঁর অন্তরের বিদ্রোহকে বাইরে সবচেয়ে ভালভাবে প্রকাশ করবে। সেই যে গায়ে তুলেছিলেন, শেষ দিন পর্যন্ত ওই খাটো ধুতি আর শালই তাঁর পরিচায়ক পোশাক হয়ে দাঁড়ায়।   

গান্ধী অবশ্য তাঁর সঙ্গীসাথীদের কখনই ওই পোশাক দারণে উদ্বূদ্ধ করেননি। তাঁর বক্তব্য ছিল, এর পিছনের ভাবনাটি বুঝলেই হবে।

 

Share this article
click me!