ভারতকে মুসলিম রাষ্ট্র বানানোর লক্ষ্যে জম্মু-কাশ্মীরে গড় হয়েছে আইএসআইএস মডিউল। সোমবার ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ল দুই সঙ্গী-সহ এই মডিউলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
জম্মু ও কাশ্মীরে ঘাঁটি গত বছরের এপ্রিল থেকে ঘাঁটি গেঁড়েছিল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএসআইএস (ISIS)-এর জঙ্গিরা। কাশ্মীরি যুবকদের জঙ্গি গোষ্ঠীতে নিযুক্ত করার পাশপাশি, তারা ভারতে একটি মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নিয়ে পত্রিকাও প্রকাশ করছিল। সোমবার, এই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কাসিম খোরাসানি ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। অন্য দুজন হলেন তনভির আহমেদ ভাট ও রামিজ লোন লোন। তিনজনেরই বয়স ৩৫ বছরের নিচে বলে জানা গিয়েছে।
নিউজ১৮-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছর ধরেই কিন্তু নিরলসভাবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এই জঙ্গিদের উপরর নজর রাখছিলেন। টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপেই ভারতীয় গোয়েন্দারা সনাক্ত করেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরে আইসিস মডিউলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ওমর নিসার ভাট ওরফে কাসিম খোরাসানিকে। সেটা ২০২০ সালের এপ্রিল মাস। প্রথমে গোয়েন্দারা মনে করেছিলেন আফগানিস্তানের খোরসান থেকেই সে বার্তা পাঠাচ্ছে। পরে কয়েকটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জানা যায়, অনন্তনাগ জেলার ছোট্ট শহর আচাবল-এ গা ঢাকা দিয়ে আছে সে।
কী আলোচনা হত সেই টেলিগ্রামে গ্রুপে? নিউজ-১৮'এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাসিম খোরাসানি সোয়াত আল-হিন্দ অর্থাৎ ভারতের কন্ঠ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের বিষয়ে গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। এই পত্রিকা উইলাত আল-হিন্দ বা ভারতীয় ইসলামিক দেশ গঠনের ধারণা প্রচার করবে। ২০১৯ সালের মে মাসেই ভারতের এই ইসলামিক স্টেট মডিউলটি তৈরি হয়েছিল। শুধুমাত্র ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর জন্যই এই শাখাটির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোয়াত আল-হিন্দ বা ভারতের কন্ঠ নামে পত্রিকাটি চালু হয়। এখনও পর্যন্ত এর ১৭ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।
প্রথম সংখ্যায় বলা হয়েছিল 'জাতীয়তাবাদ একটা ব্যধী'। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ-র কড়া সমালোচনা করা হয়েছিল। এর জন্য নিশানা করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। ভারতীয় মুসলমানদের নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করা ছাড়াও এই পত্রিকায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও কাশ্মীরে নৃশংসতার প্রতিশোধ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
এছাড়া, এই পত্রিকায় খোরাসান, সিরিয়া ও ইরাকে যেসব ভারতীয়রা ইসলামিক স্টেটের হয়ে যুদ্ধ করছে এবং যেসব ভারতীয় মুজাহিদিনরা ভারতে আক্রমণ চালাচ্ছে - তাদের উচ্চ প্রশংসা করা হয়েছে। একইসঙ্গে গাজওয়া-ই-হিন্দ অর্থাৎ 'ভারতের বিরুদ্ধে পবিত্র যুদ্ধ'-এরও আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজওয়া-ই-হিন্দ'এর পরিকল্পনা অনুসারে, কালো পতাকা হাতে সিরিয়া থেকে আইএস বাহিনী ভারতে এসে হামলা চালাবে এবং জিতে ভারতকে একটি ইসলামী দেশে রূপান্তরিত করবে।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল-মুসালিমিন বা এআইমিম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এবং জেএনইউ-এর প্রাক্তন ছাত্রনেতা তথা সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমার-এর বিরুদ্ধে ভারতীয় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ জানানো হয়েছে। সমালোচনা করা হয়েছে ভারতীয় মুসলিম পণ্ডিত মাহমুদ মাদানী এবং মৌলানা আর্শাদ মাদানীরও। অন্যদিকে বহু ভারতীয় যুবককে জঙ্গি বানানোর কারিগর পাক নাগরিক হুজেইফ আল-বাকিস্তানির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে পত্রিকাটিতে। আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছিল বাকিস্তানি।