গোটা বিশ্বের নজর এখন অযোধ্যার দিকে। করোনা আবহে সেখানেই বুধবার হতে চলেছে বহু প্রতিক্ষিত রাম মন্দিরের ভূমি পুজো। কারা কারা এই হাইপ্রফাইল অনুষ্ঠানে থাকছেন সেদিকে দৃষ্টি রয়েছে সকলের। কিন্তু এখনও সেই অনুষ্ঠানে কোনও আমন্ত্রণ পাননি অযোধ্যায় রাম মন্দির আন্দোলনের অগ্রণী নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং মুরলী মনোহর যোশী। যা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে।
অযোধ্যায় শিলান্যাসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বা সাধারণ অভ্যাগত হিসেবে হাজির থাকার জন্য আমন্ত্রণ দূরের কথা, প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাসে দিল্লি থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সে থাকবেন কি না— তাও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। আডবাণীর ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্তও এই বিষয়ে কোনও টেলিফোন আসেনি তাঁদের কাছে।
রবিবার যদিও মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, তাঁদের ই-মেল পাঠানো হয়েছে। ফোনও করা হয়েছে।সোমবারও শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের তরফে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, দিল্লি থেকেই লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলীমনোহর জোশী ভিডিয়ো কনফারেন্সে শিলান্যাসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ট্রাস্টের তরফে আজ চম্পত রাই বলেন, “কোভিড পরিস্থিতির জন্য দূরত্ব-বিধির কথা মাথায় রাখতে হয়েছে। আমন্ত্রণ পাঠানোর পরে ফোনে কথা বলেই আমন্ত্রিতের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। আমরা ফোন করে অনেকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। বয়সটাও বিষয়। এই বয়সে আডবাণীজি কী ভাবে আসবেন? সব বাধ্যবাধকতা মাথায় রেখেই তালিকা হয়েছে।”
বয়সের জন্য আডবাণী-জোশীরা অযোধ্যায় না-ই যেতে পারেন। কিন্তু কেউ কেন তাঁদের বাড়ি গিয়ে বা টেলিফোনে নিমন্ত্রণ জানালেন না, সেই প্রশ্ন ফের উঠেছে।
সোমবার ট্রাস্টের তরফে যে ছাপানো কার্ড আমন্ত্রিতদের কাছে পৌঁছেছে, তা থেকে স্পষ্ট— প্রধানমন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল, সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ও ট্রাস্টের মোহন্ত নৃত্যগোপাল দাস ছাড়া মঞ্চে আর কারও জায়গা হচ্ছে না। আডবাণী, যোশীর মতো রামমন্দির আন্দোলনের নেতৃত্বের নাম নেই। তাঁদের কাছে কার্ডও পৌঁছয়নি। যদিও এতে অযোধ্যার রাম মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক চম্পতের ব্যাখ্যা, ছাপানো কার্ড শুধু অযোধ্যার বাসিন্দাদেরই পাঠানো হয়েছে।
৫ অগস্ট রামমন্দিরের ভূমিপুজোয় দুই প্রবীণ মুখকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার ট্রাস্টের তরফে আমন্ত্রপত্র পাঠান হয় উমা ভারতী এবং উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংকে। সেখানে আজবাণী ও যোশীর নাম না থাকায় জলঘোলা শুরু হয়।
এদিকে রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর জন্য প্রথম আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হল এক মুসলিম ব্যক্তিকে। অযোধ্যা মামলার অন্যতম মামলাকারী ইকবাল আনসারি সোমবারই সেই আমন্ত্রনপত্র পেয়েছেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ইকবাল বলেন, ‘এটা বোধহয় ভগবান রামের ইচ্ছা যে আমি প্রথম এই আমন্ত্রণপত্র পাই। আমি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম।’ তিনি বলেন, অযোধ্যায় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি নিয়েই বাস করে।
ইকবাল আনসারির কথায়, অযোধ্যার কারও মধ্যে কোনও সমস্যা নেই, কষ্ট নেই। অযোধ্যার প্রত্যেকটা কোণায় সব ধর্মের দেব-দেবীর বাসস্থান। অযোধ্যা সাধু-সন্তদের জায়গা। বলেন, ‘রাম মন্দির হচ্ছে বলে আমি খুশি। কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হলে আমি যাব।’