
বুধবার তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) কুন্নুরে (Coonoor) হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় (Helicopter Crash) মৃত্যু হয়েছে দেশের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (Chief of Defence Staff) জেনারেল বিপিন রাওয়াতের (Bipin Rawat)। ওই হেলিকপ্টারে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াতও (Madhulika Rawat)। দুর্ঘটনায় তাঁরও মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও আরও ১১ জন সেনা আধিকারিকের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোকের ছায়া গোটা দেশে। তবে মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) শাহদল জেলার সোহাগপুরে (Sohagpur) শোকের ছায়া একটু বেশি করেই পড়েছে। তার কারণ হল মধুলিকা রাওয়াতের প্রয়াণ।
মধুলিকা ছিলেন শাহদল জেলার সোহাগপুরের রাজ পরিবারের মেয়ে। তাঁর বাবার নাম কুঁয়ার মৃগেন্দ্র সিংহ। এই দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরই মধুলিকার ভাই যশবর্ধন সিং ভোপাল থেকে সোজা দিল্লি (Delhi) যান। গত বছর ১ জানুয়ারি চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ নির্বাচিত হয়েছিলেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত। আর তাঁর স্ত্রী ছিলেন আর্মি ওয়াইভস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (Army Wives Welfare Association) প্রেসিডেন্ট। সেনাবাহিনীতে কর্মরত আধিকারিকদের স্ত্রীদের কল্যাণে এই সংগঠন তৈরি করা হয়েছিল। এই সংগঠন সেনা আধিকারিকদের স্ত্রী, সন্তান এবং সেনা আধিকারিকদের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের কল্যাণের জন্য কাজ করে। দেশের জন্য শহিদ সেনার স্ত্রীর দেখভালও করে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন- পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শুক্রবার বিপিন রাওয়াতের শেষকৃত্য
এখানেই শেষ নয় মহিলাদের জন্য অনেক কিছু করেছেম মধুলিকা। বরাবরই সেনা স্ত্রীদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছেন তিনি। তাঁদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন সব সময়। আর তার জন্য টেলারিং, সেলাই, বিউটিশিয়ান কোর্সের মতো ছোট ছোট কাজে সবার পাশে থেকেছেন। তবে মধুলিকা মধ্যপ্রদেশের রাজ পরিবারের মেয়ে হলেও, তাঁর পড়াশোনা সম্পন্ন হয়েছে দিল্লিতে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হয়েছিলেন। একাধিক সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মহিলাদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্যও কাজ করতেন তিনি।
এছাড়া জেনারেল বিপিন রাওয়াতের বাবা লক্ষ্মণ সিং রাওয়াতও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তিনি লেফটেন্যান্ট-জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছিলেন। আর বিপিন রাওয়াতের মা কিষাণ সিং পারমার ছিলেন উত্তরকাশীর বিধায়ক। বিপিন রাওয়াত ও মধুলিকার দুই কন্যা সন্তান রয়েছেন।
আরও পড়ুন- চপার দুর্ঘটনায় নিহত দেশের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াত
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বিপিন রাওয়াত। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সেনাপ্রধান হয়েছিলেন আর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ হন তিনি। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ হওয়ার দু'বছরের মাথাতেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন। বুধবার তামিলনাড়ুর সুলুর থেকে উড়ে ওয়েলিংটন সেনাঘাঁটির দিকে যাচ্ছিলেন সস্ত্রীক বিপিন রাওয়াত। সঙ্গে ছিলেন বায়ুসেনার অন্যান্য আধিকারিকরা। কিন্তু, গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই ১৪ জন আরোহীকে নিয়ে ভেঙে পড়ে চপারটি। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বিপিন রাওয়াত। চপারে থাকা ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেঁচে আছেন গ্রুপ ক্যাপটেন বরুণ সিং। এই মুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।
এর আগে ২০১৫ সালে একবার ভেঙে পড়েছিল বিপিন রাওয়াতের হেলিকপ্টার। নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে চপার ভেঙে পড়েছিল। তখন কোনওভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, বুধবার আর শেষরক্ষা হল না। ৮০ শতাংশ শরীর পুড়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।