মধ্যপ্রদেশে ডুবতে বসেছে কংগ্রেস সরকার। কিন্তু রাহুল গান্ধীর কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। আদৌ কি এদেশে রয়েছেন কংগ্রেসের যুবরাজ। যতদূর খবর তাতে তিনি ভারতেই রয়েছেন এবং দিল্লি-তে নিজের বাংলোর চৌহদ্দি-তে আবদ্ধ রয়েছেন। তাহলে কোনও প্রতিক্রিয়া নেই কেন? তা নিয়ে দিল্লির রাজনৈতিক মহলের অন্দরে জোর গুঞ্জন। এমনকী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া-কে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার যে নির্দেশিকা জারি হয়েছে তাতে আদৌ রাহুলের সম্মতি আছে কি না তা জানা যায়নি।
আরও পড়ুন- জ্যোতিরাদিত্যর দলত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেসের প্রতি সিন্ধিয়া পরিবারের আনুগত্য শেষ
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার ইস্তফাপত্রের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই কংগ্রেস থেকে তড়িঘড়ি পাল্টা 'এক্সপেল'-এর খবর জানিয়ে দেওয়া হয়। এত দ্রুত সিদ্ধান্ত কারা বসে নিল? তা নিয়ে কিছু-ই জানা যায়নি। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো এক হেভিওয়েট এবং কংগ্রেসের নবীন প্রজন্মের অন্যতম মুখ বলে ধরা হয়, তাঁর ক্ষেত্রে এত তড়িঘড়ি দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর হল তা নিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মুখে কুলুপ। কেউ একটি রা করছেন না। কারণ, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার হাত ধরেই মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভোটে জিতে সরকার গড়েছিল কংগ্রেস।
আরও পড়ুন- কেরলে আরও হাফ ডজন, কন্নরভূমে আরও চার, ভারতে হাফ সেঞ্চুরি করোনাভাইরাস-এর
সুতরাং এমন একজন নেতার সঙ্গে একটা সাধারণ কর্মী-কে যেভাবে ছেঁটে ফেলা হয় সেটা কংগ্রেসের নবীন প্রজন্মের উপর প্রভাব যে ফেলবে তাতে সন্দেহ নেই। এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে হয়তো হালটা ধরতে পারতেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু তিনি কোথায়? কেউ জানেন না। যুবরাজের উপস্থিতি শুধু টের পাওয়া যাচ্ছে টুইটার হ্যান্ডলারে। ৪ মার্চ তিনি প্রকাশ্যে দেখা দিয়েছিলেন বটে, সেটা ছিল হিংসা কবলিত দিল্লি-র বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন, কিন্তু এরপর থেকে তাঁর আর দেখা নেই। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া যে নয়াদিল্লির বুকে অমিত শাহের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাড়িতে গিয়েছেন- সেই সব খবর রাহুলের কানেও গিয়েছে, কিন্তু সে সময় তিনি ব্যস্ত হোলি নিয়ে টুইট করতে। এমনকী, গত কয়েকদিন ধরে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের একের পর এক বিধায়কের পদত্যাগ নিয়ে যা হচ্ছিল তাতেও কোনও মন্তব্য করেননি রাহুল। মধ্যপ্রদেশের সঙ্কট মেটানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন দ্বিগবিজয়। তিনি যে ডাহা ফেল করেছেন তা জ্যোতিরাদিত্যের ইস্তফাতেই প্রমাণিত।
আরও পড়ুন- পদত্যাগের কয়েক মিনিট পরই বহিষ্কার, 'জোর কা ঝটকা' কেমনভাবে লাগল কংগ্রেস-এ
মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগঢ় ও রাজস্থানে একসঙ্গে ভোট হয়েছিল ২০১৯ সালে। তিন রাজ্যেই বিজেপি হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস। কিন্তু, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে যেভাবে শচীন পাইলট ও জ্যোতিরাদিত্যকে মুখ্যমন্ত্রী না করে অশোক গেহলট এবং কমলনাথ-কে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল তা নিয়ে ক্ষোভ ছড়ায়। রাহুল গান্ধী স্বয়ং-ও এই বিষয়ে সহমত ছিলেন না। তিনি জ্যোতিরাদিত্য ও শচীন পাইলেটর হয়েই ব্যাট করেছিলেন। জ্যোতিরাদিত্য-কে মুখ্যমন্ত্রী না হতে দেওয়ায় ভোপালে ক্ষোভ ছড়ায়। জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভও হয়েছিল। রাজনৈতিক মহলে রাহুল গান্ধীর বিশ্বস্ত সৈনিক বলেই পরিচিত জ্যোতিরাদিত্য। সেই কারণে গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে ভোট করানোর দায়িত্ব জ্যোতিরাদিত্যের হাতেই সঁপেছিলেন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের খারাপ ফলের দায়ভার ফের রাহুলের ঘাড়েই ফেলে দেয় কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের প্রবীনদের দল। একটা সময় রাহুল নিজেও প্রবীণদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। জানিয়েছিলেন দল যেভাবে চলছে তাতে নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়াতে হবে, দায়িত্ব দিতে হবে। কিন্তু কিছু কংগ্রেসনেতা এই নিয়ে রাহুলকে কৌশলে আক্রমণও করেছিলেন। এরপরই ক্ষিপ্ত রাহুল বলেছিলেন প্রবীণদের দিয়ে দল চালাতে হলে দলটাই তাহলে তুলে দিতে হয়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে- মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকার যে সঙ্কটে সে বার্তা নিশ্চিতভাবে তাঁর কাছে ছিল। তাহলে তিনি কেন প্রকাশ্যে মুখ খুললেন না। জ্যোতিরাদিত্যও রাহুল-কে নিয়ে কোনও মুখ খোলেননি। রাহুলের কিছুটা মুখ রক্ষা করেছেন অধীর চৌধুরী। বহরমপুরের সাংসদ তথা লোকসভায় বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছেন, এটা একটা বড় ক্ষতি, এরপর মধ্যপ্রদেশে সরকার আর টিকবে না। বিজেপি-র যেভাবে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে সরকার ফেলে নতুন করে সরকার গড়ছে বিজেপি- তারও নিন্দা করেছেন অধীর। তার উপরেই সিদ্ধান্তের ভার দিয়েছেন।