গত কয়েকদিন ধরেই বাজি ভর্তি আনারস খেয়ে গর্ভবতী হাতির মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে সারা দেশে। কেরল সরকার থেকে দিল্লির বিজেপি সরকার, সবাই বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। নিষ্ঠুর এই ঘটনার তদন্ত করতে ইতিমধ্যে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেরল সরকার। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে পশুপ্রেমীদের আশ্বস্ত করেছে কেরল প্রশাসন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বৃহস্পতিবার দিন জানান, ন্যায়বিচার মিলবে। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসবাণী মেলার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই গর্ভবতী হাতির মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক গ্রামবাসীকে। খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন কেরলের বনমন্ত্রী কে রাজু।
বৃহস্পতিবারই কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়েছিলেন , গর্ভবতী হস্তিনীটির হত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যে ৩ সন্দেহভাজনকে চিহ্নিতও করা হয়েছে। এবার আরও একধাপ এগিয়ে তাদের মধ্যে এক জনকে গ্রেফতার করল কেরল সরকার। কেরলের বন দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, বছর চল্লিশের ধৃত ওই ব্যক্তি বিস্ফোরক সরবরাহ করেছিলো বলে অভিযোগ। ধৃতের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, কীভাবে ওই বাজি ব্যবহার করতে হয় তাও অন্যদের দেখিয়ে দিয়েছিল সে। পুলিশ বাকি সন্দেহভাজনদের সন্ধানেও চিরুণি তল্লাশি চালাচ্ছে।
এদিকে গর্ভবতী হাতিকে বিস্ফোরক ভরা আনারস খাওয়ানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের সন্ধান দিতে পারলে ২ লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কার দেওয়া হবে। ঘোষণা করলেন হায়দরাবাদের এক পশুপ্রেমী।৫৫ বছরের বিটি শ্রীনিবাসন জানিয়েছেন, এই নিষ্ঠুর ঘটনায় দোষীরাযেন চরম শাস্তি পায় সেই বিষয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুন: আরও একবার দৈনিক সংক্রমণে রেকর্ড, দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ২ লক্ষ ২৬ হাজার
জানা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে বুোন হাতিটি পালাক্কড় জেলার সাইলেন্ট ভ্যালির বন ছেড়ে খাবারের সন্ধানে নিকয়স্থ এক গ্রামে গিয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, সেখানেই তাকে বাজি ভর্তি আনারস খেতে দেওয়া হয়। ফলটি খাওয়ার সময় বাজি তার মুখের মধ্যে ফাটতে শুরু করে। এই অবস্থায় তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বেশ কয়েকদিন গ্রামে ঘুরে বেড়াতে থাকে গর্ভবতী হাতিটি। ক্ষতবিক্ষত মুখে কিছু খেতেও পাচ্ছিল না সে। অবশেষে একটি নদীতে শরীরে ডুবিয়ে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত মারা যায় ৬ মাসের সন্তান সম্ভবা হাতিটি। যেভাবে বাজি ভর্তি আনারস খেয়ে ওই গর্ভবতী হাতিটির মৃত্যু হয় তাতে শিউরে ওঠে গোটা দেশ। ঘটনার নিন্দায় মুখর হন একের পর এক সেলেবরাও। রতন টাটা থেকে মানেকা গান্ধী সকলেই এই নৃশংস হত্যার ন্যায় বিচার চান। তার পরই হাতির মৃত্যুর তদন্ত ও এর সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানায় কেরলের প্রশাসন।
হাতি মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারও তদন্ত করবে বলে বৃহস্পতিবারই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। তবে কেরল সহ দক্ষিণের একাধিক রাজ্যে ফসল বাঁচাতে আনারসের মধ্যে বিস্ফোরক ভরে টোপ হিসাবে ব্যবহারের রীতি রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে এরমধ্যেই বিস্ফোরক খেয়ে কেরলে আরও এক হস্তিনীর মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে। সেই ঘটনা ঘটে গত এপ্রিলে কেরলের কোল্লাম জেলায়। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানা যায়, বিস্ফোরক কিছু মুখে ফেটে যাওয়াতেই ওই হাতিটির চোয়াল ভেঙে গিয়েছিল।