কালী পুজো ও দিওয়ালিতে কোনও দরনের বাজিই ফাটানো যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। আজ ছিল সেই মামলার শুনানি।
বাজি নিয়ে হাইকোর্টের (Kolkata High Court) রায় খারিজ হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। কালীপুজোতে (Kali Puja) সব ধরনের বাজি পোড়ানোর (Firecrackers Ban) উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন গৌতম রায় ও সুদীপ ভৌমিক নামে দুই ব্যক্তি। আজ শুনানির সময় হাইকোর্টের দেওয়া সেই নির্দেশ খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, পরিবেশ বান্ধব বাজি (ECO friendly Crackers) বিক্রি করা হোক। তবে সেক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব বাজিই বিক্রি হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। আর সব বাজি নিষিদ্ধ, এমনটা কখনও হতে পারে না।
সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল, পরিবেশ অনুকূল থাকলে পরিবেশ বান্ধব বাজির ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকবে না। সেই নির্দেশ সব রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। ফলে সেই নির্দেশ মানতে হবে পশ্চিমবঙ্গকেও। এদিকে বাজি পোড়ানো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট আলাদা রায় দেওয়ায় অখুশি সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মানলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন- 'মমতাদি চ্যাম্পিয়ন, তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন', রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে মুখ খুললেন লিয়েন্ডার
শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়, পরিবেশ বান্ধব বাজি পোড়ানো হোক। বাতাসের মান যেখানে খারাপ, সেখানে পরিবেশ বান্ধব বাজি পোড়ানো যাবে না। তার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে। কিন্তু, বাজি একেবারে নিষিদ্ধ করা যাবে না। ফলে এর পর পরিবেশ বান্ধব বাজি কেনা বা বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও বাধা রইল না রাজ্যে।
এদিকে শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যে পরিবেশ বান্ধব বাজি তৈরির কোনও কারখানা নেই। ফলে বাইরে থেকে সেই বাজি আমদানি করতে হয়। এরপর আদালতে বাজি প্রস্তুতকারীদের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই সেই সব বাজি রাজ্যে এসে গিয়েছে। সেগুলির মানও খতিয়ে দেখা হয়েছে। ফলে সেগুলি বিক্রি করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, পরিবেশবান্ধব বাজি (ECO friendly Crackers) পোড়ানোর উপরে ছাড় দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (WB Pollution Control board)। জানানো হয়েছিল, কালীপুজোর দিন রাত ৮ থেকে ১০ টার মধ্যে পরিবেশবান্ধব বাজি পোড়ানো যাবে। তবে শুধু কালীপুজোই নয়, ছটপুজো এবং বর্ষণবরণেও একইভাবে শর্তসাপেক্ষে বাজি পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন। তার জন্য নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ছটপুজোর দিন সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বাজি পোড়ানো যাবে। তবে কোনও রকম শব্দবাজি এবং পরিবেশ দূষক বাজি পোড়ানো যাবে না। বড়দিন এবং বর্ষবরণেও বাজি পোড়ানোয় সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল পর্ষদ। ২৫ ডিসেম্বর এবং ৩১ ডিসেম্বর রাতে ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব বাজি পোড়ানো যাবে বলে জানানো হয়েছিল। মূলত ক্রমবর্ধমান বেড়ে চলা দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন- বাড়ছে সংক্রমণ, রাশ টানতে এই এলাকায় কালীপুজোর আগে ৩দিন বন্ধ দোকান-বাজার
এদিকে বাজি পোড়ানো ও বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার শুনানি হয় ছিল বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানির সময় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেন, "করোনার তৃতীয় ঢেউ (Corona Third Wave) আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় বাজি পোড়ানো, বিক্রি করার অনুমতি দেব কীভাবে? বৃহত্তর মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্রেতা, বিক্রেতা, প্রস্তুতকারী সংস্থা সবার কথা ভাবতে হবে।" তারপরই সব ধরনের বাজি বিক্রি ও ব্যহারের উপর নিষেদ্ধাজ্ঞা করে ডিভিশন বেঞ্চ। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল, যে কোনও ধরনের বাজির ব্যবহার, প্রদর্শন, ফাটানো বন্ধ করার বিষয়টি রাজ্যকে নিশ্চিত করতে হবে। আসন্ন কালীপুজো ও দিওয়ালির পাশাপাশি ছট পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, গুরু নানকের জন্মদিন, খ্রীষ্টমাস, নতুন বছর উদযাপনের সময় এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে। সেই সময় কেবলমাত্র মোম অথব তেল নির্ভর প্রদীপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এদিকে বিচারপতিদের বেঞ্চ এনিয়ে পুলিশকে কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি বায়ুদূষণ হয় এমন যেকোনও বাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও আদালত নির্দেশ দিয়েছিল।