২৩ দিন ধরে গণধর্ষণ, তবু দমেননি, ফুলনদেবী-র বিদ্রোহ ছিল পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ

  • ডাকাতরানি ফুলনদেবীর কাহিনি শরীরে কাঁটা তোলে
  • চম্বলের মতো এক ভয়ঙ্কর এলাকায় ফুলনদেবী ছিল ত্রাস
  • যদিও ডাকাতরানি হওয়ার আগে অনেক মূল্য চোকাতে হয়েছিল তাঁকে
  • তবে, ফুলনদেবীর উত্থান ছিল পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উপরে চপাটাঘাত
     

Tapan Malik | Published : Aug 10, 2020 5:41 AM IST / Updated: Aug 10 2020, 11:19 AM IST

ঘুরা কা পুরয়াতের নিচু ঘরের মেয়ে হয়েও ঠাকুরদের গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন কয়েকবার। তারপরও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। বদলা নিতে গিয়ে এক রাতে বেহমাই গ্রামের ২২ ঠাকুরকে নিজের হাতে খুন করেন সেই মেয়ে। ১১ বছর জেল খেটে ফিরে সেই মেয়েই দু’বার সাংসদ হন কিভাবে?  

আরও পড়ুন- পরকে ভালো রাখতে সুখের কৃচ্ছসাধন, সঞ্চয়ের ১ কোটি বিলিয়ে দিলেন মহামানবী চিত্রলেখা
উত্তর প্রদেশের ছোট্ট গ্রাম ঘুরা কা পুরয়াতের আশপাশের গ্রামের ঠাকুর বংশের জমিদারদের লোকেরা প্রায়ই ফসল লুটে নিয়ে যেত। ফুলন প্রতিবাদ জানিয়ে দখলদারদের নেতা মায়াদীনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ঠাকুররা প্রতিশোধ নিতে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে ২৩ দিন যাবত ধর্ষণ করে ফুলনকে। একদিন মৃত ভেবে ফেলে রেখে গেলে পালিয়ে যান ফুলন। 
এরপর মায়াদীন চুরির অভিযোগে ফুলনকে গ্রেফতার করালে তিন দিনের জেল হয় ফুলনের। সেখানেও নিস্তার নেই তাঁর। আইনরক্ষকরাও ধর্ষণ করে তাঁকে। গ্রামে ফিরলে পরিবার ও গ্রামবাসী  থেকে বিতাড়িত হন তিনি।

আরও পড়ুন- ২০ বছরে ৪০ বার বদলি শুধুমাত্র গাছ লাগানোর জন্য, তবু দমানো যায়নি যোগানাথনকে


একটা কথা এখানে বলতেই হয়, ফুলন দেবী কিন্তু কখনো নিজের মুখে এই গণধর্ষণের কথা সরাসরি স্বীকার করেননি। তার আত্মজীবনীর লেখিকা মালা সেনকে পর্যন্ত বলেছেন, ‘ওরা আমার সঙ্গে অনেক অন্যায়-অত্যাচার করেছে’। এই একটি কথাই অবশ্য বলে দেয় যে ঠাকুর বা জমিদারা তার সঙ্গে কি ধরণের অন্যায় অত্যাচার করেছিল। 


পাশাপাশি এটাও ধরে নিতে হয় যে, বাইরে থেকে দস্যুরানি ফুলন যতই দুর্ধর্ষ হন না কেন; লোকলজ্জার ভয়কে তিনি নিজের জীবনেও উপেক্ষা করতে পারেননি। 
কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন দস্যুরানি ফুলন? বর্ণবাদ? যে সমাজে তিনি জন্মেছিলেন সেই নিচু জাত মাল্লা বা মাঝি, যাদের মাঠের ফসল কেটে নিয়ে যেত পাশের গ্রামের উঁচু জাতের ঠাকুর বা জমিদাররা। ফুলন প্রতিবাদ করায় তার মাশুল গুনতে হয়। 
১১ বছর বয়সী ফুলনের বিয়ে দেওয়া হয় ৩০ বছর বয়সী পুট্টিলাল নামে একটি লোকের সঙ্গে। ফুলন তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, পুট্টিলাল একজন অসৎ লোক। শ্বশুরবাড়িতে ১১ বছরের ফুলনের সঙ্গে সে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করতে নিয়মিত নির্যাতন চালাত। ফুলন তাঁর বাবার বাড়িতে ফিরে এলে মাল্লা সমাজ স্বামী পরিত্যাগ করা মেয়েকে চরিত্রহীন বলে কুনজরে দেখতো। ফুলনকে নিয়ে কুৎসা রটত গ্রামময়। 


ফুলন তাঁর প্রথম স্বামী পুট্টিলালের গ্রামে গিয়ে জনসমক্ষে তাকে গাধার পিঠে উল্টো করে বসিয়ে গ্রাম ঘোরায়। যাতে কোনো বয়স্ক পুরুষ অল্পবয়সী কোনো মেয়েকে আর বিয়ে না করে, ফুলনের ওপর যেমন নির্যাতন করা হয়েছিল তেমনটা না করতে পারে।  

আরও পড়ুন- 'পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ', অতীত আর ভবিষ্য়তের মাঝে দাঁড়িয়ে সে খুঁজে চলেছে তার জীবনকে
তবে আইনের চোখে ফুলন অপরাধী। ৪৮টি অপরাধের মধ্যে ৩০টি ডাকাতি এবং অপহরণের অভিযোগ, প্রায় দু’বছর পুলিশকে নাস্তানাবুদ করে অবশেষে কিছু শর্তসাপেক্ষে পুলিশে কাছে ধরা দেয় ফুলন দেবী। যদিও নিচু জাতের মাল্লাদের কাছে ফুলন ত্রাণকর্তা। ডাকু সর্দারনীর সমস্ত ক্ষোভ ছিল কেবলমাত্র ঠাকুরদের ওপর। শহরগুলোতে দুর্গার বেশে ফুলন মূর্তি বেচাকেনাও করেছে গোঁড়ায়। এ যেন সত্যিকারের এক রবিনহুডের গল্প।


জীবন বদলে ফেললেও ফেলে আসা দিনগুলো তাঁকে তাড়া করে ফিরত। পিতৃতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য নিজেই অনেক শত্রুর জন্ম দিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালের বেহমাই হত্যাকাণ্ডের জেরে ফুলন দেবীকে ২০০১ সালের ২৫ জুলাই পার্লামেন্ট থেকে ফেরার পথে শের সিংয়ের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়।  

Share this article
click me!