সম্প্রতি রাজস্থানের সাইনা গ্রামে যে ঘটনা ঘটেছে, তার কাহিনী কোনও সিনেমার জবরদস্ত প্লটের তুলনায় কম কিছু নয়।
বিয়ের মণ্ডপ ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার থ্রিল অনেক মেয়ের জীবনেই ঘটে থাকে। এই দুঃসাহসিক কাজের ঝক্কি পোহানো তো চাট্টিখানি কথা নয়। পৃথিবীর বহু দেশেই এমন উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। কিন্তু, সেই ঘর পালানো মেয়ে যদি আবার ঘরে ফিরে আসে, তাহলে কী হবে? সম্প্রতি রাজস্থানের সাইনা গ্রামে যে ঘটনা ঘটেছে, তার কাহিনী কোনও সিনেমার জবরদস্ত প্লটের তুলনায় কম কিছু নয়।
রাজস্থানের এই গ্রামে নিজের বিয়ের আচার অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগেই মণ্ডপ থেকে গা ঢাকা দিলেন এক তরুণী। তবে, তিনি একা নন, তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর প্রেমিক। সেই প্রেমিকের হাত ধরেই একেবারে সিনেমার ‘বউ পালানো’ গল্পের মতো বিয়ের শাড়ি পরেই পালিয়ে গেলেন তরুণী। ঘটনাটি ঘটেছে এবছর চলতি মাসের ৩ তারিখে।
৩ মে সকালে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল একেবারে তুঙ্গে। গলায় মালা পরে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন বরও। সমস্ত আচার অনুষ্ঠানের আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন বাড়ির সমস্ত মানুষ। কিন্তু, হঠাতই বাধ সাধলেন কনে। বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগেই তিনি বাড়ির সকলকে জানান যে, তাঁর শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। সকলে ‘কী হয়েছে’ জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দেন যে, তাঁর বমি বমি ভাব অনুভূত হচ্ছে এবং পেটে খুব ব্যথা করছে।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত অতিথিরা তাঁকে বাড়ির ভেতরে যাওয়ার পরামর্শ বা অনুমতি দেন এবং ওই কনে তখন বাড়ির ভেতরে ঢুকে যান। বাড়ির অপর প্রান্তে তখন অপেক্ষা করছিলেন তাঁর প্রেমিক। ওই প্রেমিকের সঙ্গেই বিয়ের সাজে পালিয়ে যান তরুণী। অনেকক্ষণ ধরে বিয়ের আসরে বসে থাকেন বর। কিন্তু, কনে কিছুতেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে না আসায় সকলে তাঁকে ভেতরে খুঁজতে যান এবং গিয়ে দেখেন যে, বউ ততক্ষণে হাওয়া হয়ে গিয়েছেন। এরপরেই গোটা বিয়েবাড়িতে চূড়ান্ত শোরগোল পড়ে যায়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’-র দশা হলে অবশ্য বিয়েবাড়িতে সদলবলে ভাঙচুর চালাতে কসুর করত না পাত্রপক্ষ। কিন্তু, এক্ষেত্রে অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এখানে পাত্রটি মোটেই হাল ছাড়ার বান্দা নন। তিনি বিয়ের সময় পরে আসা জামাকাপড়, এমনকি মাথার পাগড়ি পর্যন্ত না খুলে কনের বাড়িতেই জেদ ধরে বসে থাকেন যে, ওই মেয়েকেই তিনি বিয়ে করবেন এবং এই মণ্ডপেই তাঁদের বিয়ে হবে। তাঁর জেদ দেখে কনের বাড়ির লোকেরাও বিয়ের মণ্ডপ খোলেননি। অপরদিকে, পাত্র এবং পাত্রীর বাড়ির লোক মিলে স্থানীয় থানায় খবর দেন, মেয়েকে খুঁজে বের করার জন্য অনুরোধ করেন।
আরেক দিকে আরও একটি কাণ্ড ঘটে যায়। কনে যখন নিজের প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, তখন প্রেমিক এবং প্রেমিকা উভয়েই এই বিষয়টি আবিষ্কার করেন যে, তাঁরা দুজনে দু’জনের দূর-সম্পর্কের ভাইবোন। অর্থাৎ, পারিবারিক সম্পর্কে জড়িত থাকার কারণে তাঁদের মধ্যে কখনওই বিয়ে হওয়া সম্ভব নয়। এদিকে, পুলিশ যখন সেই তরুণীর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে তখন ১৫ মে তারিখে তাঁকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়। সেই দিনই পলাতক কনে আবার নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন।
ওই বাড়িতেই পুরনো বিয়ের মণ্ডপে ১৩ দিন ধরে পাগড়ি পরে অপেক্ষা করে বসেছিলেন নাছোড়বান্দা বর। অবশেষে তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। ১৬ মে তারিখে ধুমধাম করে দুই বাড়ির সম্মতিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন নবদম্পতি। কিন্তু, সেই প্রেমিকা তথা বোন-হারা প্রেমিকের কী অবস্থা হল, তা অবশ্য জানা যায়নি।
আরও পড়ুন-
আরও পরিশ্রম করে যাব: শাসনকালের ৯ বছর পূর্তিতে দেশবাসীকে নরেন্দ্র মোদীর বার্তা
কেন নিম্নবর্গীয় হিন্দু থেকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন অসমের ‘নানকার কিরণ’-রা?