প্রয়াত কেরলের প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী ওম্মেন চাণ্ডি। বেশকিছুদিন ধরেই কর্কট রোগে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন।
ছাত্র রাজনীতির মধ্যে দিয়েই রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন ওম্মেন চাণ্ডি। সালটা ১৯৭০। সেই সময় তিনি কেরল যুব কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে অবশ্য তিনি কেরল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত।
ওম্মেন চাণ্ডি এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন যে তিনি একই জায়গা থেকে পাঁচ দশক ধরে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পুথুপপল্লি বিধানসভা থেকে ওম্মেন চাণ্ডি ১৯৭০, ১৯৭৭, ১৯৮০, ১৯৮২, ১৯৮৭, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬, ২০১১, ২০১৬ এবং ২০২১ সালে বিধায়ক হয়েছিলেন।
কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর তখতে দুবার বসেছিলেন ওম্মেন চাণ্ডি। প্রথমবার ২০০৪ থেকে ২০০৬ এবং দ্বিতীয়বার ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। ওম্মেন চাণ্ডির জন্ম কেরলের কোট্টায়াম জেলার পুথুপপল্লিতে। সালটা ছিল ১৯৪৩-এর ৩১ অক্টোবর। কোট্টায়ামের সিএমএস কলেজ থেকে প্রি-ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন চাণ্ডি। এরপর অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন চাঙ্গেনাসেরির বার্চম্যান কলেজ থেকে। পরে এর্নাকুলামের সরকারি ল কলেজ থেকে এলএলবি-তে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।
কর্মজীবনের প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে মারিয়াম ওম্মেনকে বিয়ে করেন। তাঁদের বর্তমানে ৩ সন্তান রয়েছে। কেরল সরকারে মোট ৪ বার মন্ত্রীর পদ সামলিয়েছিলেন চাণ্ডি। এগুলো ছিল মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বাইরের মন্ত্রিত্ব। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী কে করুণাকরণের আমলে ১১ এপ্রিল ১৯৭৭ সাল থেকে ২৫ এপ্রিল ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আবার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির নেতৃত্বে সেই শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ২৭ এপ্রিল ১৯৭৭ থেকে ২৭ অক্টোবর ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। এরপর ফের করুণাকরণের আমলে ২৮ ডিসেম্বর ১৯৮১ সাল থেকে ১৭ মার্চ ১৯৮২ সাল পর্যন্ত কেরলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে আসিন ছিলেন চাণ্ডি। ২ জুলাই ১৯৯১ সালে কে করুণাকরণ ফের মুখ্যমন্ত্রী হলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু, করুণাকরণকে কংগ্রেস রাজ্যসভায় প্রার্থী না করায় প্রতিবাদে ২২ জুন ১৯৯৪ সালে ইস্তফা দেন চাণ্ডি।
এহেন চাণ্ডি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৮ জুলাই সকালে বেঙ্গালুরু-র এক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ওম্মেন চাণ্ডির মৃত্যুর খবর প্রথম সামনে আসে ফেসবুক পোস্ট থেকে। ছেলে চাণ্ডি ওম্মেন ফেসবুক পোস্টে বাবার মৃত্যুর খবর শেয়ার করেছিলেন। চাণ্ডির রেখে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মারিয়াম এবং তিন সন্তান- আচু ওম্মেন, মারিয়া ওম্মেন এবং চাণ্ডি ওম্মেন-কে। চাণ্ডির প্রয়াণের খবরে শোক প্রকাশ করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
এক বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী হয়েও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি ওম্মেন চাণ্ডিকে। বেশকিছু দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল চাণ্ডির।
২০১৩ সালের কেরালা সোলার প্যানেল দুর্নীতি
সেই সময় কেরলের প্রধান বিরোধী জোট এলডিএফ এই দুর্নীতি নিয়ে চাণ্ডির মুখ্যমন্ত্রিত্বর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল। এমনকী, ২০১৬ সালে যখন বিধানসভা নির্বাচন হয় তাতেও কেরালা সোলার প্যানেল দুর্নীতিকে চাণ্ডি এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোটে ইস্যু বানিয়েছিল এলডিএফ। ২০১৮ সালে পিনারাই বিজয়নের মুখ্যমন্ত্রিত্বে নিযুক্ত অপরাধ দমন শাখার তদন্তে জানানো হয় যে এই দুর্নীতিতে চাণ্ডির বিরুদ্ধে জড়িত থাকার কোনও প্রমাণই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নিষ্কলঙ্ক হয়ে এই দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়ে যান চাণ্ডি।
ভিঝিনজাম পোর্ট দুর্নীতির অভিযোগ
২০১৬ সালে কেরলের বিধানসভা ভোটে এই দুর্নীতিকে কংগ্রেস এবং চাণ্ডির বিরুদ্ধে হাতিয়া করেছিল সিপিএম। এমনকী, ক্ষমতায় এসে সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এই নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কারন। ২ বছর ধরে তদন্ত চলার পর জানা যায় এমন কোনও দুর্নীতি খোঁজই মেলেনি এবং চাণ্ডির বিরুদ্ধেও কোনও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
পাট্টুর ল্যান্ড স্ক্যাম
২০১৬ সালে এই নিয়েও সরব ছিল কংগ্রেস বিরোধী এলডিএফ। কিন্তু, এই নিয়েও তদন্তে চাণ্ডির বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পাম ওয়েল আমদানিতে দুর্নীতি
১৯৯১ থেকে ৯২ সালে কে করুণাকরণের আমলে এই দুর্নীতির অভিযোগে কেরলের রাজনীতি তোলপাড় হয়েছিল। সেই সময় চাণ্ডি ছিলেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধেও বিরোধীরা আঙুল তুলেছিয়ল। অবশেষে ২০১১ সালে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে জানা যায় পাম ওয়েল আমদানি দুর্নীতির তদন্তে চাণ্ডির বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভিজিল্যান্স জানিয়েছিল পাম ওয়েল আমদানি করতে যে সিঙ্গাপুরের কোনও এক ফার্মের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল তা জানতেন না চাণ্ডি। এক্ষেত্রেও চাণ্ডি ক্লিন চিট পেয়েছিলেন।
আরও খবর---
Oommen Chandy News: প্রয়াত ওমেন চান্ডি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরলোক গমনে শোকস্তব্ধ কেরলের রাজনৈতিক মহল
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে কি বদলে যেতে পারে ইউপিএ-র নাম? কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মিলল জবাব
Chandrayan 3: নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে চন্দ্রযান ৩, বিপদ এড়াতে কী করবে ISRO?