হাক্কানি বনাম বরাদর - তালিবানদের নিজেদের মধ্যেই চলছে ক্ষমতার দখলের লড়াই। কাবুলে ফের শুরু হতে পারে গোলাগুলির লড়াই।
পরপর দুইদিন সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিয়েও পিছিয়ে এসেছে তালিবান। প্রথমে শুক্রবার, তারপর শনিবার। গত ১৫ অগাস্ট কাবুল দখল করেছিল তালিবান বাহিনী। ৩০ অগাস্ট মধ্য রাতে আফগানিস্তান ছেড়ে গিয়েছে শেষ মার্কিন সেনা। তারপর ৫টা দিন কেটে গেলেও, এখনও তালিবানি দখলে থাকা আফগানিস্তান, সরকারবিহীন। আসলে, কাবুলে এখন তালিবানদের নিজেদের মধ্যেই চলছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। যা শেষ পর্যন্ত আরও েক গোলাগুলির যুদ্ধে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞরা।
একদিকে রয়েছে তালিবান গোষ্ঠীর সহ প্রতিষ্ঠাতা তথা বর্তমান রাজনৈতিক প্রধান মোল্লা আব্দুল ঘানি বরাদর এবং তার অনুগামীরা। অন্যদিকে, ভয়ঙ্কর জঙ্গিগোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা তথা তালিবান গোষ্ঠীর উপপ্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এবং তার অনুগামীরা। বরাদর পক্ষই দোহায় আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়েছিল। তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অন্তর্বর্তী কালীন সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। বর্তমানে তারা চাইছে শুধু তালিবান বা পস্তুন নয়, নবগঠিত সরকারে সকল আফগান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করতে। নাহলে আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতি মিলবে না। আসবে না কোনও আন্তর্জাতিক সাহায্য। যা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এবং তার সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী কারও সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে নারাজ। তাদের সঙ্গে রয়েছে তাদের জন্মদাতা তথা উপদেষ্টা পাকিস্তান। সেই দৃঢ় সমর্থনের উপর ভর করে হাক্কানিরা চাইছে মধ্যযুগীয় স্বৈরতান্ত্রিক বিশুদ্ধ তালিবান সরকার। তাদের সাফ কথা, কাবুল তাদের অস্ত্রের জোরে দখল করতে হয়েছে, কেউ হাতে তুলে দেয়নি। তাই আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতাও কারোর সঙ্গে ভাগাভাগি করা হবে না। চিন-পাকিস্তান তাদের সঙ্গে আছে। তাই আর কোনও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেতে তারা আগ্রহী নয়।
আর এখানেই মধ্যস্থতা করতে নেমে পড়েছে পাকিস্তানি ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই-এর ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ। তিনি এখন কাবুলে রয়েছেন এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের পক্ষে সওয়াল করে যুযুধান দুই তালিবান গোষ্ঠীর মধ্যে মিটমাট করার চেষ্টা করছেন। কাবুলের মসনদে হাক্কানিরা তাকলে পাকিস্তানের থেকে লাভবান কেউ হবে না। এর আগে আইএসআই কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালানোর জন্য এই সুন্নি-পশতুন বাহিনীকে ব্যবহার করেছে।
আরও পড়ুন- এবার তালিবানি ধর্ষণের শিকার পুরুষও - দেশ ছাড়ার টোপ দিয়ে তৈরি ফাঁদ, দেখুন ছবিতে ছবিতে
আরও পড়ুন - ২০ বছর পর সামনে এল আল-কায়েদার গোপন ষড়যন্ত্র - ৯/১১-র পরই ছিল আরও বড় হামলার ছক, দেখুন
কাবুল দখল করেছিল হাক্কানিরাই। তার উপর আফগান রাজধানীতে এই গোষ্ঠীরই প্রভাব সবথেকে বেশি। আর তার জোরেই বরাদর গোষ্ঠীকে সোজা পিছু হঠার নির্দেশ দিয়েছে হাক্কানিরা। তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর-এর পুত্র মোল্লা ইয়াকুব এখনও কান্দাহারেই আছে। এই অবস্থায় হাক্কানি-বরাদর দ্বন্দ্বের অবসান আলোচনায় ঘটবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কাবুলে ক্ষমতার লড়াইটা শেষ পর্যন্ত আবার বন্দুকের দিকেই যাবে, এমনটাই বলছেন আফগান বিশেষজ্ঞরা।