- Home
- World News
- International News
- হস্তমৈথুনের ফতোয়া জারি করেছিল বিন লাদেন - অতৃপ্ত যৌন-খিদেই কি হিংস্র করে তোলে জঙ্গিদের, দেখুন
হস্তমৈথুনের ফতোয়া জারি করেছিল বিন লাদেন - অতৃপ্ত যৌন-খিদেই কি হিংস্র করে তোলে জঙ্গিদের, দেখুন
- FB
- TW
- Linkdin
পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদের যে আস্তানায় ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছিল আমেরিকা, সেই বাড়ি থেকে পাওয়া প্রায় সমস্ত নথিই জনসমক্ষে এনেছে আমেরিকা সরকার। এই নথিগুলির মধ্যেই ছিল ২০১২ সালে উত্তর আফ্রিকার এক আল-কায়েদা কমান্ডারকে লেখা বিন লাদেনের একটি চিঠি। সেখানে তৎকালীন আল-কায়েদা প্রধান 'একটি অত্যন্ত বিশেষ এবং গোপনীয় বিষয়'এর উত্থাপন করেছিল সে - ফতোয়া দিয়েছিল আল-কায়েদা সদস্যদের হস্তমৈথুন করার।
চিঠিতে বিন লাদেন বলেছিল, আল-কায়েদা সদস্যদের অদিকাংশের স্ত্রী নেই। তাদের দুর্ভাগ্যজনক ব্রহ্মচর্য পালন করতে হচ্ছে। এই বিষয়ে সে শেখ তথা ডাক্তার আয়মান, পরবর্তী আল-কায়েদা নেতা আল-জাওয়াহিরি এবং শেখ আবু ইয়াহিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করেছিল। ওই পরিস্থিতিতে ডা. আয়মান মত দিয়েছিলেন, আল-কায়েদা সদস্যদের হস্তমৈথুন করার। যেহেতু তাদের অবস্থাকে চরম ঘটনা বলা যেতে পরে। তবে, এক সপ্তাহ, না এক মাস নাকি একদিনের ব্রহ্মচর্যকে 'চরম পরিস্থিতি' ধরা হবে, তা ওই চিঠিতে স্পষ্ট করেনি প্রাক্তন আল-কায়েদা প্রধান।
দলের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে যে নজর থাকত বিন লাদেনের, তা সকলের জানা। কিন্তু, দলের জঙ্গি সদস্যদের টেস্টোস্টেরণের চাপের দিকেও যে তিনি নজর দিতেন, তা এই চিঠি পাওযার আগে কল্পনাও করা যেত না। তবে তার অ্যাবটাবাদের বাড়ি থেকে প্রচুর পর্নোগ্রাফিক পত্রিকা, ভিডিও পাওয়া গিয়েছিল বলে দাবি করেছিল মার্কিন সেনা। তারপরেও এযাবৎকালের সবথেকে দুর্ধর্ষ জঙ্গি নেতা, তার পরের প্রজন্মের আল-কায়েদা প্রধানরা হস্তমৈথুনের মতো বিষয নিয়ে এতটা মাথা ঘামিয়েছে, এটা সত্যিই বিস্ময়কর, একইসঙ্গে মজারও বটে। তবে জিহাদিদের যৌন খিদে মোটেই হাসির বিষয় নয়, এমনকী এটাই তাদের হিংসাত্মক আচরণকে ব্যাখ্যা করে, এমনও মত দিয়েছেন বহু মনোস্তাত্ত্বিক গবেষক।
৯/১১ হামলার পর অনেকেই বলেছিলেন, হামলায় অংশ নেওয়া বিমান অপবরণকারীদের এই কাজে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ন্যায়বিচার পাওয়ার ভাবনা। বিশ্ববিখ্যাত বিবর্তবাদীয় জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স কিন্তু, তা মানেননি, তাঁর দাবি ছিল জঙ্গিদের আত্মবিসর্জনে উদ্বুদ্ধ করেছিল অতৃপ্ত যৌনতা। তিনি দেখিয়েছিলেন, ১৯ জন জঙ্গির অধিকাংশের দেহেই দুরন্ত গতিতে ছুটছিল টেস্টোস্টেরন। কিন্তু, তাদের চেহারা, আচরণ - কোনওটাই কওনো মহিলাকে আকৃষ্ট করতে পরেনি। অন্যদিকে ইসলামি জঙ্গিনেতারা আত্মঘাতি জঙ্গিদের মাথায় ঢুকিয়েছিলেন, জিহাদের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিলে, জন্নতে তাদের জন্য অপেক্ষা করবে ৭২ জন কুমারী মহিলা। ডকিন্স দাবি করেছিলেন, জাগতিক পৃথিবীতে মহিলার সাহচর্য না পাওয়া জঙ্গিরা সেই ৭২ জন কুমারীকে পেতে পরবর্তী জীবনে পা রাখার জন্য মরিয়া ছিল।
ডকিন্স আরো দেখিয়েছিলেন, বিশেষ করে রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে এই অতৃপ্ত যৌনতার চাপ অনেক বেশি থাকে। যা তাদের চরমপন্থীদের সফট টার্গেটে পরিণত করে। মুসলিম বিশ্বে এবং পশ্চিমের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহের বাইরে যৌন কার্যকলাপ সাধারণভাবে নিষিদ্ধ থাকে। বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে বিবাহপূর্ব যৌনতার কলঙ্ক চাপার একটা অতিরিক্ত চাপ থাকে। এই সমস্ত বাধার কারণে নারী-পুরুষের স্বাভাবিক যৌনতার সম্পর্ক ব্যহত হয়। এই না পাওয়া থেকে যে হতাশা তৈরি হয়, তার থেকেই কিছু কিছু পুরুষের মধ্যে হত্যার মতো হিংসাত্মক ভাবনা-চিন্তার জন্ম দেয়।
মিশরীয় চিন্তাবিদ সৈয়দ কুতুবের দারুণ প্রভাব ছিল ওসামা বিন লাদেনের উপর। লাদেনের জঙ্গি মতাদর্শ অনেকটাই গড়ে উঠেছিল কুচতুবের ভাবনা-চিন্তার উপর নির্ভর করে। এহেন কুতুব প্রকাশ্যেই যৌনতাকে দারুণ ঘৃণা করতেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছিলেন। বিদেশের সেই দিনগুলোর অভিজ্ঞতা লিখতে গিয়ে তিনি 'মার্কিন মোহময়ীদের', 'অভিব্যক্তিপূর্ণ চোখ', 'তৃষ্ণার্ত ঠোঁট', 'গোলাকার স্তন', 'ভরা নিতম্ব', 'মসৃণ উরু এবং পা' সম্পর্কে তাঁর খারাপ লাগার কথা জানিয়েছেন। মুখে ঘৃণার কথা বললেও, এইসব তিনি কত খুঁটিয়ে লক্ষ্য করতেন, তা তাঁর লেখা থেকেই স্পষ্ট।
একই কথা বলা যায় ৯/১১ হামলার রিংলিডার মহম্মদ আটা সম্পর্কেও। আটার জীবনে কোনও যৌনতা ছিল না। সে মহিলাদের ভয় পেত, মহিলাদের সঙ্গে মিশতে চাইত না, এমনকি দেখা হলে হাত নাড়তেও দ্বিধা করত। এমনকী শেষ ইচ্ছা হিসাবে সে নির্দেশ দিয়েছিল, তার দেহ যেন কোনও 'ভাল মুসলমান' দাফন করে এবং কোন মহিলাকে তার দেহের কাছে যেতে না দেওয়া হয়। কারণ, কুতুবের মতো মহিলারাও আটার কাছে ছিল বিপজ্জনক এবং নোংরা, পাপ এবং আধ্যাত্মিক দূষণের উৎস। এই পৃথিবীতে নারীসঙ্গ না পেয়ে সে স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিল এমন এক অভিযান, যা তার এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন শেষ করে দেবে।
জীবনে যৌনতার অভাব যেমন কোনও মানুষকে হিংসাত্মক করে তোলে, তেমনই এর উল্টোটাও সত্যি। অর্থাৎ, অতিরিক্ত যৌনতাও জীবনের অর্থ গুলিয়ে দিতে পারে। যেমন ফ্রান্সের নিশ শহরে ট্রাক চাপা দিয়ে ৮৬ জনকে হত্যা করা মহম্মদ লাহৌয়াইয়েজ বউহলেল-এর নেশাই ছিল যৌনতা। মারী-পুরুষ কোনও বাছ বিচার ছিল না। সেই যৌন নেশাতুর বউহলেল-এর জীবনই হঠাৎ পাল্টে গিয়েছিল। অতির্কিত ধার্মিক হয়ে পড়ে সে। পরে, আইএস-এর জঙ্গি মতাদর্শকেই বেছে নিয়েছিল সে। মনোস্তাত্ত্বিকরা বলেন, খোলামেলা যৌন জীবন, এক পর্যায়ে সে নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত হয়েছিল। আর সেই থেকেই আমূল পরিবর্তন ঘটে তার।
একই কথা খাটে মহিলা সন্ত্রাসবাদীদের ক্ষেত্রেও। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলা চালানো চেচেন মহিলা জঙ্গিদের দল 'ব্ল্যাক উইডো বম্বার্স'এর অধিকাংশই একসময় ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। যৌন অবক্ষয়ের লজ্জা তাদের মনে একটা স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। অনেক আত্মঘাতি মহিলা জঙ্গিরই ধারণা ছিল, যদি ঈশ্বরের নামে নিজের জীবন উৎসর্গ করা যায়, কিছু কাফেরকে হত্যা করা যায়, তাহলে আগের পাপ ধুয়ে সাফ করে স্বর্গে যাওয়া যাবে। আবার ইউরোপ আমেরিকার যেসব মহিলা ইরাক সিরিয়ায় গিয়ে আইএস বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল, তাদের অনেকেরই লক্ষ্য ছিল অবাধ যৌনতার পথ থেকে নিজেকে দুরে রাখা। যে মুক্ত যৌনতার সমাজের সে ডুবে গিয়েছিল, সেই সমাজ থেকে দূরে থাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌনতা কোনও মানুষের আত্মপরিচয়ের একেবারে মৌলিক অংশ। তাই চরমপন্থীদেরও যৌনতাকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করতেই হবে। তবে এমনটা নয় যে যৌনতাই জিহাদিদের টেনে নিয়ে যায়। তবে যৌনতা যে জিহাদি আন্দোলনে বিরাট অনুঘটক হিসাবে কাজ করে তা স্পষ্ট। ওসামা বিন লাদেন কিন্তু, যৌনতাকে জঙ্গিভাইদের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখতে পেয়েছিল। আর তাই ওই অদ্ভূত ফতোয়া জারি করেছিল আল-কায়েদা প্রধান।