আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত (Volcanic Eruption) এবং সুনামির (Tsunami Wave) জোড়া ধাক্কায় বিধ্বস্ত টোঙ্গার (Tonga) পাশে দাঁড়ালো ভারত। ২ লক্ষ মার্কিন ডলারের তাৎক্ষণিক সহায়তা ঘোষণা করল মোদী সরকার (Modi Govt)।
গত ১৫ জানুয়ারি প্রশান্ত-মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গার (Tonga) কাছে, হুঙ্গা-টোঙ্গা-হুঙ্গা-হাপাই (Hunga Tonga-Hunga-Ha'apai) নামে একt ডুবো আগ্নেয়গিরিতে এক বিশাল অগ্ন্যুৎপাত (Volcanic Eruption) ঘটেছিল। যা প্রশান্তমহাসাগর জুড়ে বিভিন্ন দ্বীপে সুনামি তরঙ্গের (Tsunami Wave) সৃষ্টি করেছিল। প্লাবিত হয়েছিল জাপান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলরেখাগুলি। অগ্নুৎপাতের ছাই এবং সুনামির ঢেউ-এর জোড়া ধাক্কায় এখন বিধ্বস্ত টোঙ্গা। মঙ্গলবার এই চরম ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপরাষ্ট্রটির পাশে দাঁড়ালো ভারত। সেই দেশের ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং পুনর্গঠন উদ্যোগের জন্য ২ লক্ষ মার্কিন ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দেড় কোটি টাকার তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের কথা ঘোষণা করল মোদী সরকার (Modi Govt)।
এদিন, বিদেশ মন্ত্রক (External Affairs Ministry) এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ সহযোগিতা ফোরাম বা এফআইপিআইসি (FIPIC)-এর এক ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং অংশীদার হিসাবে ভারত সরকার ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং টোঙ্গা রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় সহায়তার জন্য ২ লক্ষ মার্কিন ডলারের তাত্ক্ষণিক ত্রাণ সহায়তা প্রসারিত করেছে। এটা টোঙ্গার জনগণের পাশে আছে ভারত। নজিরবিহীন বিপর্যয়ের কারণে, সেই দেশের ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসের জন্য ভারত সরকার ও টোঙ্গার জনগণের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন - Tonga Tsunami: আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে ভয়াবহ সুনামি, বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন টোঙ্গা
বিদেশ মন্ত্রক আরও বলেছে, ২০১৮ সালে ঘূর্ণিঝড় গীতার (Cyclone Gita) মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে টোঙ্গায় সৃষ্ট সঙ্কটের সময়েও ভারত, সেই দেশের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিল। ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভারতের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগ বা আইপিওআই (IPOI) ঘোষণা করেছিলেন। বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, বিপর্যয়ের ঝুঁকি হ্রাস এবং ব্যবস্থাপনা এই উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
ভূবিজ্ঞানীদের মতে, গত কয়েক দশকের মধ্যে হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই আগ্নেয়গিরির এই অগ্নুৎপাত ছিল অন্যতম বড়। ২৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নিউজিল্যান্ড (New Zealand) থেকেও ওই লাভা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গিয়েছে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উপরে উঠেছিল লাভা-ছাই-গ্যাসের মিশ্রণ। নাসার (NASA) মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War 2) সময় হিরোশিমায় (Hiroshima) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, এই অগ্ন্যুৎপাত তার থেকে শতগুণ বেশি শক্তিশালী ছিল। ওই অগ্নুৎপাতের পরই ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেশ টোঙ্গার অধিকাংশটাই লাভার ছাইয়ে ঢেকে গিয়েছে। তার উপর আসে বিরাট সুনামি তরঙ্গ।
টোঙ্গার জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এই জোড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত। দ্বীপরাষ্ট্রটির পরিকাঠামোরও উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রবিবার টোঙ্গার জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও সুনামিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জন হয়েছে। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত টোঙ্গার রাজধানি নুকুআলোফার উত্তরে একটি আগ্নেয়গিরি দ্বীপকে সম্পূর্ণ মুছে দিয়েছে। সেখানে এখন সমুদ্র বইছে। টোঙ্গা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনসংখ্যার চার-পঞ্চমাংশেরও বেশি সুনামি এবং আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের জোড়া প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।