ভারতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। রবিবার এদেশে ৮১ জনের শরীরে নতুন করে সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। যার জেরে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় চারশো ছুঁয়ে ফেলেছে। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে রবিবার জনতা কার্ফুর ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সারা দেশজুড়ে মানুষ তাতে সাড়া দিয়েছেন। সারাদিন কেউ ঘর থেকে বের হননি। কিন্তু লড়াই এখনও অনেকটা বাকি। ইতিমধ্যে রাজ্যে ৭টি করোনা সংক্রমণের ঘটনা পাওয়া গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গোষ্ঠীসংক্রমণ ঠেকাতে ঠেকাতে ‘সার্বিক সুরক্ষা বিধিনিষেধ’ (কমপ্লিট সেফটি রেসট্রিকশন্স) চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কলকাতা পুর এলাকা ছাড়া উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, পশ্চিম বর্ধমানে পুরোপুরি এবং বাছাই করা জেলা শহরে এই ‘লকডাউন’ আজ থেকে শুরু হচ্ছে। সল্টলেক, নিউ টাউন-সহ উত্তর ২৪ পরগনার সমস্ত পুর-শহরেও একই নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
আগামী কয়েকদিন রাস্তাঘাটে সাত জনের বেশি মানুষের জমায়েতের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। বন্ধ থাকবে ট্রেন, মেট্রো, বাস-সহ যাবতীয় গণপরিবহণ এবং অফিস, কারখানা। প্রয়োজন ছাড়া সকলকেই বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে শুধু লকডাউন পদ্ধতি যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'হু' এর বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় একে রুখতে এরই মধ্যে সব দেশেরই বড় শহরগুলো লকডাউন করা হচ্ছে। গণপরিবহন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিমানবন্দর, শপিংমল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রেখে জনসাধারণকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঘরে করতে, কিন্তু এর পরও কোনোভাবেই করোনাকে পরাস্ত করা যাচ্ছে না। যার উদাহরণ পশ্চিম ইউরোপের দেশ ইতালি ও স্পেন। দেশ দুটির রাজধানী রোম ও মাদ্রিদসহ অনেক শহর লকডাউন থাকার পরও হু হু করে সেখানে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এমন অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি পরিস্থিতি বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান জানিয়েছেন, ‘করোনা ঠেকাতে শুধু ‘লকডাউন’ যথেষ্ট নয়। এই ভাইরাস নির্মূল করার জন্য ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে এবং এদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন লোকদের বিচ্ছিন্ন (আইসোলেট) করে রাখতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি আমরা এখনই শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ না করি তাহলে লকডাউনের মতো নির্দেশনাগুলো তুলে নিলে রোগটি আবারো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে।’
নিরাপদ দূরত্বেও আর রক্ষে নেই, এখন বাতাসেও ভাসতে শুরু করেছে মারণ করোনা ভাইরাস
গরম ও আর্দ্রতা কোনও কিছুতেই কাবু হবে না কোভিড-১৯, উদ্বেগ বাড়িয়ে জানিয়ে দিল 'হু'
করোনা আতঙ্কে শুনসান চিড়িয়াখানা, দর্শকের ভূমিকায় পেঙ্গুইন দম্পতি, ভাইরাল হল ভিডিও
চীন, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে তাদের শহরগুলো লকডাউনের পাশাপাশি সন্দেহভাজন রোগীর পরীক্ষা করেছে, ঠিক সেভাবেই অন্য দেশগুলোকে একই তৎপরতা দেখানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বর্তমানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। প্রতি মুহুর্তে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত বিশ্বের কমপক্ষে ১৯২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই মারণ ভাইরাস।