গাছটির নাম মাঞ্চিনিল (Manchineel tree) হলেও, পরিচিত মৃত্যুর গাছ (Tree of Death) নামেই। কেন জানেন?
জঙ্গলে ঘুরতে গিয়েছেন। হঠাৎ বেশ জোরে বৃষ্টি এল। সঙ্গে ছাতা নেই। জঙ্গলের মধ্যে কোনও বাড়ি নেই, যে সেখানে আশ্রয় নেবেন। এমন কোনও ছাদ নেই, যে তার তলায় দাঁড়িয়ে মাথা বাঁচাবেন। স্বাভাবিকভাবেই বৃষ্টির মধ্যে কোনও গাছের নিচে গিয়েই দাঁড়াবেন। পুরোপুরি জল না আটকালেও, মুষলধারায় তো ভিজতে হবে না। অতএব, একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। তবে সেটাই কিন্তু আপনার শেষ নিঃশ্বাস হয়ে যেতে পারে, যদি সেই গাছটা হয় 'ট্রি অব ডেথ' (Tree of Death)!
বৃষ্টির মধ্যে, সেই গাছের নিচে দাঁড়ানোর পর, দ্রুতই আপনার সারা গায়ে চুলকানি শুরু হবে। অল্প অল্প চুলকানি থেকে শীঘ্রই গোটা গা একেবারে জ্বলে যাবে। মনে হবে যেন সারা শরীরে আগুন জ্বলছে। জঙ্গলে যেটা বেশ একটা আনন্দের বেড়ানো হবে বলে আশা করেছিলেন, সেটা তখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। যদি তারপরও বেঁচে থাকেন, তাহলে ফিরে এসে বেড়ানোর গল্প নয়, আপনাকে এক ভয়ঙ্কর কাহিনি শোনাতে হবে। সাক্ষাৎ মৃত্যুকে চোখের সামনে দেখার কাহিনি।
আরও পড়ুন - পেটে 'গ্যাস'এর সমস্যায় ভুগছেন - শুধু বাতকর্মেই রোজগার হতে পারে লক্ষ লক্ষ টাকা, দেখুন
আরও পড়ুন - স্বীকার করলেন শিম্পাঞ্জির সঙ্গে প্রেম করছেন, চিড়িয়াখানায় প্রবেশই নিষিদ্ধ হল মহিলার
আরও পড়ুন - Viral News - প্রসবের দুদিন পরই ব্যথা, স্তন দিয়ে নয়, বগল দিয়ে দুধ বের হল মহিলার
এর কারণ কী? কারণ ওই মৃত্যুর গাছ। স্প্যানিশরা এর নাম রেখেছিল 'আরবোল দে লা মুয়ের্তে' (Arbol de la muerte), বাংলায় যার আক্ষরিক অর্থ মৃত্যুর গাছ। অন্য নাম 'মাঞ্চিনিল' গাছ (Manchineel tree)। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ (Caribbean Islands) এবং অন্যান্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু অঞ্চলের (Tropical Region) সবথেকে ভয়ঙ্কর গাছ হল এই 'আরবোল দে লা মুয়ের্তে'। কারণ এই গাছটির প্রতিটি অংশই বিষাক্ত, মৃত্যু ডেকে আনে। খেজুর গাছের গা দিয়ে যেমন রস গড়িয়ে পড়, এই গাছেরও পড়ে। তবে সেই রসে প্রচুর পরিমাণে টক্সিন বা বিষ থাকে। উপরন্ত এই রস, জলে দ্রবণীয়, অর্থাৎ জলে গুলে যায়। ফলে, বৃষ্টির সময় এই গাছের নিচে দাঁড়ালে, বারিধারা সঙ্গে মিশে সেই বিষ সহজেই ওই ব্যক্তির গায়ে পড়তে পারে। আর ছটফট করতে হবে বিষের জ্বালায়।
তবে গাছটির শুধু ছাল থেকেই এই বিষাক্ত রস বের হয়, তা নয়। বিষ বের হয় পাতা, এমনকী ফল থেকেও। আরও যেটা ভের বিষয়, তা হল এই গাছটির ফল মিষ্টি গন্ধযুক্ত। দেখতে অনেকটা পেয়ারা বা আপেলের মতো। ফলে, জঙ্গলের মধ্যে গাছে এই ফল ধরে থাকতে দেখে যে কেউই সেটি খাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে। আর একবার কামড় মারলেই, তার জীবনে নেমে আসবে দুঃস্বপ্ন। মুখের মধ্যে তীব্র জ্বলন শুরু হবে। কিছুক্ষণের মধ্যে গলার পেশি শক্ত হয়ে গিয়ে এতটাই ব্যথা শুরু হবে যে ঢোক গিলতেও অসুবিধা হবে। যদি সেই ব্যক্তি দ্রুত পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহায়তা না পায়, তাহলে তার মৃত্যুও হতে পারে।
'ডেথ ট্রি' বা 'মাঞ্চিনিল' গাছটি এতটাই বিষাক্ত যে, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসও (Guinness Book of World Records) এই গাছকেই 'বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক গাছ' (Most dangerous tree in the world) হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই গাছটা যখন এতই ভয়ংকর, তাহলে এই গাছটি পৃথিবী থেকে ধ্বংস করে ফেললেই তো হয়, তাই না? না, সেটা করা যাবে না। কারণ, মানুষের উপর এই গাছের যতই ভয়ঙ্কর প্রভাব থাক না কেন, ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এই গাছের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় ক্রমাগত মাটির ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে ডেথ ট্রি। যা, বিশেষ করে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।