
Pakistan army chief Asim Munir News: পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই চরমে ভারত-পাক উত্তেজনা। হামলা, পাল্টা হামলায় সম্মুখ সমরে নেমেছে দুই দেশই। শনিবার বিকেলে আমেরিকার হস্তক্ষেপে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতির কথা ঘোষণা করলেও সংঘর্ষ বিরতি বজায় রাখল না পাকিস্তান (Pakistan News)। এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের মন্ত্রী রাজনৈতিক নেতারা ভারতের বিরুদ্ধে ক্রমাগত উত্তেজক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। ফাঁকা হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন।
তবে পাকিস্তানে এখন আর সরাসরি স্বৈরাচারী শাসন না থাকলেও, দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নন, বরং সেনাপ্রধানকেই ধরা হয়। বর্তমানে এই বিধ্বংসী ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনির।
জানেন কে এই অসিম মুনির? (Asim Munir Profile Update):-
সেনাপ্রধান হিসেবে মুনিরের কর্মজীবন প্রায় দুবছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। জেনারেল অসিম মুনির পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের পদ গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি অত্যন্ত কম প্রচারের মধ্যে থেকেও সেনাবাহিনীর ওপর তার নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করেছেন। তার বিরুদ্ধে শুধু সেনাবাহিনীর ওপর নয়, বরং বিচার বিভাগীয় এবং রাজনৈতিক নীতিতেও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগগুলি পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে এবং আন্তর্জাতিক স্তরেও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেনাপ্রধান মুনিরের উত্থান: এক সাধারণ পরিবারের সন্তান থেকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক পদে:-
পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনির কোনো অভিজাত সামরিক পরিবারের সদস্য নন। তার বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক, এবং তার পরিবার ভারত বিভাজনের পর ভারত থেকে পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হয়েছিল। সাধারণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে ধীরে ধীরে তিনি উচ্চ পদে উন্নীত হন, যা তার কর্মজীবনের এক উল্লেখযোগ্য দিক।
২০১৬ সালে মুনির সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৮ সালে তাকে পাকিস্তানের অন্যতম প্রভাবশালী পদ আইএসআই (ISI)-এর মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তবে ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সংঘাতের কারণে তাকে আইএসআই প্রধানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। অভিযোগ ওঠে, তিনি খানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য দিয়েছিলেন, যা এই বিবাদের জন্ম দেয়। তবে এই ঘটনার পরও জেনারেল মুনিরের পদোন্নতি অব্যাহত থাকে। অবশেষে, ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তাকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন, যা দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে তার অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করে তোলে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় সেনাপ্রধান মুনিরের ভূমিকা: পাল্টা আঘাতের অপেক্ষায় ইসলামাবাদ!
পহেলগাঁওয়ে নিরীহ পর্যটকদের উপর হামলার পর থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কারণ, কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের উপর হামলার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান এই হামলাকে "যুদ্ধের পদক্ষেপ" আখ্যা দিয়ে কড়া জবাব দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। জানা গিয়েছে, এই পুরো প্রক্রিয়ার মূলে রয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনির। কারণ, পাক সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এবং মুনিরের নেতৃত্বেই পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে এক পাক ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা আধিকারিক জানিয়েছেন, “মুনির সঠিক মুহূর্তের অপেক্ষায় আছেন এবং সেই মুহূর্তে তীব্র আঘাত হানবেন।”
কঠোর নীতি ও জাতীয়তাবাদের উত্থান:
জেনারেল মুনিরের ভারত সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা কঠোর এবং কট্টর বলেই পরিচিত। সম্প্রতি তিনি এক বিবৃতিতে "আমাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, চিন্তা ও লক্ষ্য ভিন্ন" বলে ভারতবিরোধী অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কারণ, পাকিস্তানে এই মুহূর্তে জাতীয়তাবাদী আবেগ প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে এবং "আমরা আমাদের সেনাবাহিনীর পাশে আছি" স্লোগান শোনা যাচ্ছে। কিছু বিশ্লেষকের বিশ্বাস, এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মুনির তার হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বিশেষ করে ইমরান খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং নির্বাচনে কথিত কারচুপির কারণে তার ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হয়েছিল, তা এই পরিস্থিতিতে পুনরুদ্ধার হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সমীকরণ এবং ভবিষ্যতের পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা ও মুনিরের সিদ্ধান্ত:-
এদিকে ভারত-পাক সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে আন্তর্জাতিক সমীকরণগুলো নতুন মাত্রা পেয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে, চীন সরবরাহকৃত PL-15 ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভারতীয় জেটের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এর মাধ্যমে চীন কেবল পাকিস্তানকে সাহায্যই করছে না, বরং ভারতের বিরুদ্ধে অস্ত্র পরীক্ষার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ব্যবহার করছে। তবে এই সংঘাতের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হল, পারমাণবিক যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি। বিশ্লেষক সুজা নওয়াজ সতর্ক করে বলেছেন, "পাকিস্তানের 'ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপনস' (কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র) ব্যবহারের ভয় সবচেয়ে বেশি, এবং একবার যদি তেমন পরিস্থিতি আসে, তাহলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।"
উল্লেখ্য, বর্তমান অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে জেনারেল অসিম মুনির শুধু পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতিই নন, বরং দেশটির ভবিষ্যতের মূল স্থপতিও হয়ে উঠেছেন। তার নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপরই দক্ষিণ এশিয়ায় আগামীতে কী ঘটবে, তা নির্ভর করবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে এখন দেখার ভারত-পাক ইস্যুতে কোন দিকে গড়ায় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমীকরণের জল।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।