পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে ল কলেজের ৩০ জন হিন্দু ছাত্র হোলি উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে লিখিত অনুমতিও নেওয়া হয়েছে।
হোলি উদযাপন করতে গিয়ে রীতিমত মার খেতে হল হিন্দু ছাত্রদের।একটি ইসলামী সংগঠনের মুসলিম ছাত্ররা হিন্দু ছাত্রদের এই 'অপরাধের' জন্য রীতিমত লাঠিপেটা করল। ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের লাহোর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে। পাকিস্তানি সংবাদ ওয়েবসাইট ডন জানায়, ক্যাম্পাসে হোলি উৎসব উদযাপন নিয়ে বিরোধে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ১৫ জন ছাত্র আহত হয়েছে। হোলি উৎসবের অনুষ্ঠানের আয়োজনকারী সংগঠন সিন্ধ কাউন্সিল দাবি করেছে যে তাদের কাছে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি ছিল। তা সত্ত্বেও ইসলামী জামাত তুলবা নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা তার ওপর হামলা চালায়। এরপর ক্যাম্পাসে হিন্দু ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পাথর ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে মারধর করা হয়। এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে, যা বেশ ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিও দেখে মানুষ পাকিস্তান সরকারের নিন্দা করছে। ঘটনাটি পাকিস্তানি পাঞ্জাব পুলিশকে জানানো হয়েছে, যারা তদন্ত শুরু করেছে।
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে ল কলেজের ৩০ জন হিন্দু ছাত্র হোলি উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে লিখিত অনুমতিও নেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে এই ছাত্ররা উৎসব উদযাপনের জন্য জড়ো হলে হঠাৎ একটি মুসলিম ছাত্র সংগঠন আইজেটি-র সদস্যরা সেখানে পৌঁছে হিন্দু ছাত্রদের বাধা দিতে শুরু করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিও অনুযায়ী, আইজেটি সদস্যরা হিন্দু ছাত্রদের ওপর হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে মৌখিক বিবাদ হয়। এ কারণে সেখানে পদদলিত হয়। তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরাও সেখানে পৌঁছান, যারা হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ছিলেন। হিন্দু ছাত্রদের অভিযোগ, আইজেটি সদস্যদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীরাও হিন্দু ছাত্রদের মারধর শুরু করে। এর জেরে হিন্দু ছাত্ররা সেখান থেকে পালাতে শুরু করে। এরপর দৌড়াতে গিয়েও তাদের মারধর করা হয়।
সিন্ধু পরিষদ পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিল
হিন্দু ছাত্রদের ওপর এই হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন সিন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাশিফ বারোহি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও পরিষদ হোলি উদযাপনের আয়োজন করেছিল। এর আমন্ত্রণটি আইজেটি-এর ফেসবুক পেজেও পোস্ট করেছিলেন এক হিন্দু ছাত্র। এতে আইজেটি সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হট্টগোল ও হুমকি দিতে থাকে।
'আইজেটি গুন্ডাদের হাতে বন্দুক ও লাঠি ছিল'
কাশিফকে উদ্ধৃত করে ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সকালে সিন্ধু পরিষদের ছাত্ররা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পিইউ ল কলেজের বাইরে জড়ো হয়েছিল। হোলি উৎসব উদযাপনের জন্য এই সমাবেশ করা হয়েছিল। কাশিফ বলেন, এরই মধ্যে হাতে বন্দুক ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আইজেটি গুণ্ডারা সেখানে পৌঁছে যায়। তারা আসতেই মারামারি শুরু করে।
১৫ ছাত্র আহত, ঘটনা প্রত্যাহার করতে হয়েছে
বারোহির মতে, হিন্দু সম্প্রদায় এবং সিন্ধু পরিষদের অন্তত ১৫ জন ছাত্র বিশৃঙ্খলায় আহত হয়েছে। এরপর হিন্দু ছাত্রদের হোলি উৎসব না করেই সেখান থেকে ফিরে যেতে হয়। তিনি বলেন, পরে হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যের কার্যালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদেরও লাঠিপেটা করে নিরাপত্তারক্ষীরা।
গোটা ঘটনা অস্বীকার আইজেটির
অন্যদিকে, IJT স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে যে তার সদস্যরা হিন্দু ছাত্রদের উপর হামলা করেছে। ডনের প্রতিবেদনে আইজেটি মুখপাত্র ইব্রাহিম শহীদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে তার সংস্থা হিন্দু সম্প্রদায়কে হোলি উদযাপন থেকে বিরত করেনি। তিনি বলেন, হামলাকারীরা সম্ভবত অন্য কেউ ছিল এবং তারা আইজেটির নাম অপব্যবহার করছিল। তিনি বলেন, নিরাপত্তারক্ষীদের হামলার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই, তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা যাতে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান সমানভাবে পালন করতে পারে তা আমরা নিশ্চিত করব। ইব্রাহিম আরও বলেন যে তিনি ক্যাম্পাসে দর্শ-ই-কুরআনের আয়োজন করেছিলেন এবং বর্তমানে তিনি সেখানে নেই। হামলাকারীদের সঙ্গে আইজেটি সদস্যরা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।