মৃতার স্বামী তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যাভিচার ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ করেছিল। শুক্রবার মৃতার স্বামী ও তার দুই ভাই মিলে মহিলাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে
পাকিস্তানে আবারও প্রকট হল মধ্যযুগীয় বর্বরতা। ব্যাভিচারের অভিযোগে এক মহিলাকে পাথর ছুঁড়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। রবিবার পুলিশ জানিয়েছেন শুক্রবার লাহোর থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে পঞ্জাবের রাজনপুর জেলায় এই হিংসাত্মক ঘটনাটি ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে মৃত মহিলার স্বামীর বয়স মাত্র ২০ বছর। মৃতার স্বামী তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যাভিচার ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ করেছিল। শুক্রবার মৃতার স্বামী ও তার দুই ভাই মিলে মহিলাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। তারপর তিন জন মিলে একের পর এক পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মহিলাকে হত্যা করে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন প্রতিবেশীও সামিল হয়েছিল। পুলিশ আরও জানিয়েছে মহিলাকে পাথর ছুঁড়ে মারার আগে তিন ভাই মিলে মহিলার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। মহিলার ওপর তিন জন মানসিক নির্যাতন করত বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
পুলিশ জানিয়েছে মূল অপরাধী তিন জনই ঘটনার পর থেকে পলাতক। পঞ্জাব ও বেলুচিস্তান সীমানার কোনও এলাকায় লুকিয়ে রয়েছে বলেও অনুমান পুলিশের। তবে এই দুর্গম এলাকায় তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। মৃতা মহিলার রাজনপুরের আলকানি উপজাতির বাসিন্দা।
পাকিস্তানে প্রতি বছরই পারিবারিক সম্মান রক্ষার নামে বহু নারীকে হত্যা করা হয়। এমন নির্মম ঘটনাও প্রায়ই ঘটে। মানবাধিকার কর্মীদের মতে পাকিস্তানে প্রতিবছর পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে প্রায় এক হাজার মহিলাকে খুন করা হয়। ভুক্তভোগীরা তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করলে বা পরকীয় করলে তা পরিবারের কাছে লজ্জা, অসম্মানের। এই অভিযোগ তুলেই দিনের পর দিন মহিলাদের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। মহিলাদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এজাতীয় হত্যাকাণ্ডের পিছনে থাকে। অনেক সময় পরিবারের মহিলারাও এদাতীয় অপরাধে লিপ্ত হয়।
কয়েক দিন আগেই পঞ্জাবের মিয়ানওয়ালি জেলায় সম্মান রক্ষার্থে গুলি করে খুন করা হয়েছিল এক তরুণী চিকিৎসককে। পুলিশ জানিয়েছে ২৫ বছর বয়সী ডাক্তার সহকর্মী মহিলা চিকিৎসককে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মহিলার বাবা সেই বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল। তারপর প্রায় এক সপ্তাহ পরে ডাক্তারের বাবা মিয়ানওয়ালি শহরে তার ক্লিনিকে আসে। তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। সেই সময়ই ডাক্তারের বাবা মহিলা চিকিৎসকরে খুব কাছ থেকে গুলি করে। গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মহিলা। তারপর তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই ঘটনার পরেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। কয়েক দিনের মধ্যেই কয়েক জন পুরুষ তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করলে এক মহিলাকে প্রকাশ্যে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করল।