Peter Navaro On India: রাশিয়া কম দামে তেল কেনায় গত কয়েক মাস ধরেই চড়ছে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক। শুল্ক সঙ্ঘাতের আবহে এবার আরও একধাপ এগিয়ে রুশ তেল কেনা নিয়ে বলতে গিয়ে ভারত নিয়ে জাতিবৈষম্যের মন্তব্য করে বসলেন খোদ ট্রাম্পের পরামর্শদাতা।
সাংহাই সম্মেলনে ভারত যখন নেতৃত্ব দিচ্ছে ঠিক তখনই কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে আমেরিকায় বসে ভারতের বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে বসলেন ট্রাম্পের বাণিজ্যিক পরামর্শদাতা। জানা গিয়েছে, বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর একটি মন্তব্যে সামনে এসেছে। যেখানে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে 'ব্রাহ্মণদের মুনাফাবাজি' (Brahmins profiteering) নিয়ে কথা বলেছেন। অনেকের মতে, এটি একটি 'হিন্দু-বিরোধী এবং ভারত-বিরোধী মনোভাবের' পরিচায়ক। এই ঘটনাটি আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে বাড়তে থাকা কূটনৈতিক টানাপোড়েনের একটি নতুন লক্ষণ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। শুল্ক বিতর্ক এবং ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা ভেঙে যাওয়ার কারণে দুই দেশের সম্পর্কে যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, নাভারোর এই মন্তব্য তাতে আরও ইন্ধন যোগ করল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
25
ভারতের ওপর শুল্ক চাপিয়েও থামছেন না ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বোমা ফেলার পর থেকেই মার্কিন সরকারি আধিকারিকরা ভারতের ক্রমাগত রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা নিয়ে কড়া মন্তব্য করে চলেছেন। তাদের যুক্তি, এর ফলে পুতিনের ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য অর্থায়ন হচ্ছে। এই যুদ্ধ শেষ করতে ট্রাম্প গত বছর গর্ব করে বলেছিলেন যে তিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ট্রাম্পের এই 'শুল্ক বোমা'র পাশাপাশি ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে আমেরিকার তীব্র মনোভাব বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ভারত তার নিজস্ব জ্বালানি সুরক্ষা এবং কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কী পদক্ষেপ নেয়, তা দেখার বিষয়।
35
নেভারোর মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ ভারত
নেভারোর মন্তব্য ছিল সম্ভবত এযাবৎকালের সবচেয়ে কড়া, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল এবং কংগ্রেসের পবন খেরা ও শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীর মতো বিরোধী নেতারা কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সঞ্জীব সান্যাল নেভারোর মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘’ভারতের জ্বালানি নীতি দেশের স্বার্থ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।'' অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা পবন খেরা এবং শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী নেভারোর বক্তব্যকে ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত বলে অভিহিত করেছেন। বিরোধীরা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের বিদেশ নীতির কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
মোদীর উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল আরও বলেছেন যে, ‘’নেভারোর মন্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারা ভারত সম্পর্কে বয়ান নিয়ন্ত্রণ করে।'' অন্যদিকে প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী নাভারোর মন্তব্যকে সরাসরি ১৯ শতকের ঔপনিবেশিক কটাক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যা জেমস মিলের মতো ঔপনিবেশিকদের সময় থেকে চলে আসছে। তিনি আরও বলেছেন যে ‘’এডওয়ার্ড সাইদের প্রাচ্যবাদ (Orientalism) তত্ত্ব সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে ভারতের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। চতুর্বেদী নেভারোর 'মুনাফাভোগী ব্রাহ্মণ' বিষয়ক মন্তব্যেরও কড়া সমালোচনা করেছেন। তার মতে, এই ধরনের মন্তব্য ভারতের সমাজ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে ঔপনিবেশিক আমলের সংকীর্ণ ধারণার প্রতিফলন। তিনি বলেন যে ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দেশের সার্বভৌমত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, কোনও বিশেষ শ্রেণির স্বার্থে নয়।''
55
মার্কিন জাতিবিদ্বেষ নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রে 'ব্রাহ্মণ' শব্দের ভিন্ন ব্যবহার স্বীকার করে তিনি জানান, সেখানে এটি ধনী অভিজাতদের একটি শ্রেণীকে বোঝায় এবং ভারতে বিদ্যমান জাতিভেদ প্রথার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ সদস্যের এই শব্দ ব্যবহার "উদ্দেশ্যপ্রণোদিত"। কংগ্রেসের পবন খেরা বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন "ভিত্তিহীন মন্তব্য" করতে পারে না।