আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে হেনস্থা করার ঘটনায় সক্রিয় হলেন রাজ্যরাল জগদীপ ধনখর। সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে রিপোর্ট পাঠাতে হবে মুখ্য সচিবকে।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘরে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও চড় মারার ঘটনার বিষয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে সম্পূর্ণ আপডেট চাইলেন রাজ্যরাল জগদীপ ধনখর। সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে ওই রিপোর্ট পাঠাতে হবে। এই বিষয়ে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি পোস্ট করে, রাজ্যপাল একে রাজ্যের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছেন। এর আগে এই বিষয়ে রাজ্যপাল বলেছিলেন, শিক্ষকরা হলেন গুরু। তাঁদের সঙ্গে এরকম নক্কারজনক আচরণ একেবারেই কাম্য নয়। প্রসঙ্গত, রবিবারই এই কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ছাত্রনেতা গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল-কে গ্রেফতার করেছে টেকনোসিটি থানার পুলিশ।
আরও একটি টুইটে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া মারফৎ তিনি জানতে পেরেছেন, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ গিয়াসউদ্দিন মন্ডলকে গ্রেফতার করেছে। মুখ্য সচিবের কাছ থেকে এই বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানার পর এই বিষয়েই তিনি ফোকাস করতে চান বলে জানিয়েছেন জগদীপ ধনখর। ঘটনাকে 'লজ্জাজনক' বলে দোষীদের 'দৃষ্টান্তমূলক' শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। এমনকী এই কাণ্ডে অভিযুক্তদের তিনি ছাত্র না বলে সরাসরি 'আইন লঙ্ঘনকারী দুর্বৃত্ত' বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার ভিডিওতে তাদের যে ভয়ডরহীন রূপ দেখা গিয়েছে, তা আইন মান্যকারীদের জন্য ভয়ঙ্কর দৃশ্য। তিনি সাফ জানিয়েছেন এই ঘটনার কোনও ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।
শনিবারই, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহম্মদ আলির ঘরে ঢুকে গিয়াসুদ্দিন মণ্ডল ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের তাণ্ডব চালানোর ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছিল। ওই ভিডিওয় উপাচার্যকে চড় মারার হুমকি দিতে দেখা যায় গিয়াসউদ্দিনকে। সেই সঙ্গে লেখার অযোগ্য ভাষায় অকথ্য গালাগাল ও যারপরনাই হেনস্থা করতে শোনা যায়। পুরো সময়, উপাচার্য চুপ করে বসেছিলেন। পরে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেন। ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যে। এই ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করার দাবি জোরালো হতে থাকে। শেষে, রবিবার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে টেকনোসিটি থানার পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তার মোবাইল ফোনও।
কে এই গিয়াসউদ্দিন মন্ডল? জানা গিয়েছে, সে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন ইউনিট সভাপতি। তবে কয়েকদিন আগেই তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আর তারপর থেকেই উপাচার্যের উপর রাগ ছিল তার। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য অবশ্য 'সে দলীয় কর্মী নয়' বলে, তার সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে চেয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষেরও দাবি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, গিয়াসউদ্দিন মন্ডলকে ইতিমধ্যেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র শাখার সঙ্গে তার আর কোনও সম্পর্ক নেই।
বিরোধীদের মুখ অবশ্য এই যুক্তি দিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না। বঙ্গ বিজেপির সভাপতি, সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, তৃণমূলই ক্যাম্পাসে এই সংস্কৃতি ঢুকিয়েছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নেহাত ভদ্রলোক বলে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। তিনি হলে গিয়াসউদ্দিনকে চড় মারতেন। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরে, তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযুক্ত ছাত্রনেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আইওয়াশ করতে চাইছে। কিছুদিন পরেই একই ব্যক্তি পূর্ণ ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসবে।