কলকাতার ভূকৈলাস রাজবাড়ির নামটা অনেকেরই জানা। সেই ভূকৈলাস রাজবাড়িতে দুর্গা পুজো হয় বেশ জাঁকজমক করে। এই দুর্গা পুজো শুরু হওয়ার পেছনে আছে এক কাহিনি। সময়টা ছিল ১৭৬১ থেকে ১৭৬৪ সাল। সেই সময় ঘোষাল বংশের আদি পুরুষ কন্দর্প ঘোষালের পুত্র গোকুল চাঁদ ঘোষাল নুনের ব্যবসায় বেশ নাম করেন। তাঁর সেই কাজ তাঁকে ইংরেজদের সুনজরে নিয়ে আসে। এর পরে ইংরেজরা তাঁকে চিটাগং বা চট্টগ্রামের দেওয়ান নিযুক্ত করেন। এর পরেই তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি ক্রমশ বাড়তে থাকে। সেই সময়েই তিনি খিদিরপুর অঞ্চলে প্রচুর জমি কেনেন। পরবর্তীকালে তাঁর ভাই কৃষ্ণচন্দ্রের ছেলে জয়নারায়ণ ঘোষালের আরও অনেকবেশি প্রতিপত্তি হয়। সেই সময় তারা বসবাস করতেন ফোর্ট উইলিয়াম অঞ্চলে। সেই সময় সেখানে তখন ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়াম বানানো শুরু করেছিলেন। যার ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাকে সেখান থেকে সরে যেতে বলে। এর পরেই তারা সেখান থেকে চলে আসে খিদিরপুরে।
আরও পড়ুন- নাম লেখাননি এখনও, দেরি না করে অংশ নিন এশিয়ানেট নিউজ শারদ সম্মান ২০১৯-এ
খিদিরপুরে তাঁরা এসে সেখানে বসত বাড়ি তৈরি করেন। প্রায় দুশো বিঘে জমি জুড়ে গড়ে ওঠে সেই রাজ বাড়ি। তিনি সেখানে বাড়ি সংলগ্ন একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তিনি প্রথমে দুটি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। জয়নারায়ণ ঘোষাল তাঁর মাতা ও পিতার নামে মন্দির দুটোর নামকরণ করেন। কথিত আছে সাধক রামপ্রসাদ সেই মন্দিরে এসে মুগ্ধ হয়ে বলেন কৈলাশ থেকে শিব স্বয়ং নেমে এসেছেন সেখানে। আর তার পর থেকেই এই মন্দির ভূকৈলাস নামে খ্যাত। পরে সেই মন্দিরে তিনি অষ্টধাতু দিয়ে নির্মিত ঘোটকাকৃতি সিংহারূঢ়া মহিষাসুরমর্দিনী দশভুজা মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সেখানে কূল দেবী রূপে প্রতিষ্ঠিত হন। আর সেই পুজো আজও সেখানে হয়ে আসছে। প্রথমে মহারাজা কুলপুরোহিত হিসাবে দায়িত্ব দেন চন্ডীচরণ পাঠককে। আজও তারই বংশধরেরা এই পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন- মা-এর সঙ্গে এখানে আসেন তাঁর দুই সহচরী, ছাতুবাবু ও লাটুবাবুর বাড়ির পুজো আজও ঐতিহ্যময়
আজ সেই মন্দিরের ভগ্ন প্রায় দশা। তবুও সেখানেকার ঐতিহ্য বেঁচে আছে তার ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে। সেখানে আজও বহু মানুষ ভিড় করেন মন্দির দর্শনের উদ্দেশ্য নিয়ে। প্রচীন ঐতিহ্যমন্ডিত পুজো যদি পছন্দের তালিকায় থাকে তবে ভূকৈলাস রাজবাড়ির পুজো একবার গিয়ে দেখে আসতে পারেন।