ফুটপাথে পড়ে রয়েছেন এক যুবক। আর তাঁর বুকের উপরে বুট দিয়ে ঠেসে ধরেছেন আরও এক যুবক। তাঁর পরনে রয়েছে সবুজ-রঙা পোশাক। আসলে তিনি সিভিক ভলান্টিয়ার।
রাজ্যে পুলিশের (Police) অত্যাচারের অভিযোগ অনেক শোনা গিয়েছে। কিন্তু, প্রকাশ্য রাস্তায় এক যুবকের উপর সিভিক পুলিশের (Civic Volunteer) অত্যাচারের অমানবিক দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়নি। অন্তত কলকাতায় (Kolkata) এমন দৃশ্য সত্যিই বিরল। আর রবিবার সন্ধ্যায় (Sunday Evening) এমনই এর অমানবিক দৃশ্যের স্বাক্ষী থাকল শহর কলকাতা।
ফুটপাথে পড়ে রয়েছেন এক যুবক (Man)। আর তাঁর বুকের উপরে বুট (Boot) দিয়ে ঠেসে ধরেছেন আরও এক যুবক। তাঁর পরনে রয়েছে সবুজ-রঙা পোশাক (Green Uniform)। আসলে তিনি সিভিক ভলান্টিয়ার। আর মাটিতে পড়ে থাকা যুবক সেই সিভিক ভলান্টিয়ারের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছেন। কিন্তু, কিছুতেই পারছেন না। বরং গায়ের জোরে যুবককে মাটিতে শুইয়ে রেখে বুকে ও পিঠে বুট দিয়ে লাথি মারছেন ওই পুলিশ। নিজেকে ছাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করে চলেছেন বছর কুড়ির যুবটি।
আরও পড়ুন, Municipal Election-কলকাতা-হাওড়া পুরভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত, কবে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে কমিশন
রবীন্দ্র সদনের (Rabindra Sadan) এক্সাইড মোড়ের (Exide More) ঘটনা। এমন এক বিরল দৃশ্য চোখের সামনে দেখে নিজেদের সামলাতে পারেননি শহরবাসী। এই ঘটনা ক্যামেরাবন্দী করেন অনেকেই। তারপর তা ছড়িয়ে দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। পাশাপাশি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় ওঠে নেট দুনিয়ায়। ঘটনাটি চোখ এড়ায়নি কলকাতার পুলিশ কমিশনার (Police Commissioner of Kolkata) সৌমেন মিত্রর। এই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমি ঘটনাটি দেখে বিব্রত। এর জন্য দুঃখিত। রাতেই ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই সময়ে ওখানে ডিউটিতে থাকা ট্রাফিকের সব অফিসারকে সোমবার সকালে অফিসে ডেকে পাঠিয়েছি। তাঁরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কী করে এই ধরনের অমানবিক ঘটনা ঘটল, তা জানতে চাওয়া হবে। অফিসারদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য তদন্ত হবে।"
অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম তন্ময় বিশ্বাস। এই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যেয় এক্সাইড মোড় থেকে হাওড়াগামী (Howrah) একটি চলন্ত বাসে এক মহিলার ব্যাগ ছিনতাই করেছিলেন ওই যুবক। এরপর বাস থেকে নেমে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই সাধারণ মানুষ তাঁকে ধরে মারধর করছিল। তখন তা দেখতে পেয়ে তাঁকে উন্মত্ত জনতার হাত থেকে বাঁচান তন্ময় বিশ্বাস। এরপর পুলিশের হাত থেকেও ওই যুবক পালানোর চেষ্টা করছিলেন। তখনই তাঁকে আটকাতে পা দিয়ে ঠেসে ধরেছিলেন তিনি। তবে এই ধরনের ঘটনা দেখে রীতিমতো শিউরে উঠেছেন কলকাতাবাসী।
পুলিশের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। কিন্তু, তা খাস কলকাতার রাস্তায় এই ধরনের ছবি একেবারেই বিরল। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন সাধারণ মানুষ। অনেকের মতে, ওই যুবক যে অপরাধই করুন না কেন, ধরা পড়ার পরে তাঁকে পা দিয়ে ঠেসে ধরে মারধর করতে হবে কেন? কেন তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হল না? এক্ষেত্রেও অবশ্য নিজের যুক্তি দিয়েছেন তন্ময়। তিনি বলেন, "আসলে ওই যুবক মদ্যপ অবস্থায় ছিল। তাকে সামলানো যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে এই কাজ করতে হয়।" পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ওই যুবকের কাছ থেকে একটি মোবাইল ও ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। যাঁদের থেকে ব্যাগ ও মোবাইল তিনি চুরি করেছিলেন তাঁদের সেগুলি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউই পুলিশে অভিযোগ জানাননি। তবে পুলিশে অভিযোগ না হলেও যুবককে শেক্সপিয়র সরণি থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।