হাঁসখালি ও বগটুইকাণ্ডে পুলিশকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এদিন বৈঠকে হাঁসখালি ও বগটুইকাণ্ড নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাঁসখালি ও বগটুইকাণ্ডে পুলিশকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এদিন বৈঠকে হাঁসখালি ও বগটুইকাণ্ড নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আধিকারিকদের গাফিলতিতে দুটি ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এনিয়ে রাণাঘাট ও বীরভূমের পুলিশকে ভর্ৎসনা করেন এদিন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। পুলিশের গাফিলতির দায় সরকার নেবে না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। চোখ-কান খোলা রেখে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
হাঁসখালি গণধর্ষণকাণ্ড কীভাবে ঘটল এদিন নবান্নে বুধবারের জরুরী বৈঠকে সে প্রসঙ্গে রানাঘাটের পুলিশ সুপারকে প্রশ্ন করে মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলে, হাঁসখালির ঘটনা কীভাবে ঘটল। কেন খবর নেওয়া হয়নি, কেন দেরীতে খবর পেল পুলিশ। পুলিশের গাফিলতিতে সরকার কেন ভুগবে। মন্ত্রীদের সোর্স কাজে লাগাতে হবে। হাঁসখালির নির্যাতিতার পরিবার পুলিশকে এক কথা বলছে। আবার সিবিআই-কে আরেক বয়ান দিচ্ছে কেন, এদিন প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।প্রসঙ্গত, ৪ এপ্রিল রাতে জন্মদিনের পার্টিতে ডাকা হয়েছিল ওই নাবালিকাকে। এরপর জন্মদিনে ডেকে তাকে মদ্যপান করায় ব্রজগোপাল। এরপরেই সে এবং তার বন্ধুরা মিলে গণধর্ষণ করে। যৌন নির্যাতন এতটাই হয়েছিল যে, নির্যাতিতার গোপনাঙ্গ থেকে ব্যাপক রক্তপাত ঘটে। রক্তে ভিজে যায় অন্তর্বাস। রাতে এক মহিলাকে দিয়ে নাবালিকা প্রেমিকাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় সে।
অভিযোগ এরপরেই অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করে ওই নাবালিকা। এদিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দেয় ব্রজগোপাল। এরপরেই অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মৃত্যু হয় ওই নাবালিকার।এদিকে নৃশংসঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। অপরাধ ঢাকতে দেহ সৎকারে বাধ্য করে বজ্রগোপাল। তাই মাঝে কয়েকদিন কেউ কিছু জানতে পারেনি। ঘটনার পরেই হাঁসখালি থানায় নাবালিকার পরিবারের তরফে অভিযোগে জানানো হয়। মেয়ের মৃত্যুর পরে বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে জোর করে দাহ করে দেওয়া হয়েছে বলে ভয়াবহ অভিযোগ ওঠে। আর তাতে জড়িত ছিল ব্রজগোপাল এবং তার দলবল। এরপরেই তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে ব্রজগোপালকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও ইতিমধ্যেই হাঁসখালি ধর্ষণকাণ্ডে সিবিআই আধিকারিকরা তদন্ত শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন, অটোয় নাবালিকার গোপানাঙ্গে স্পর্শ, মানিকতলায় শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার খোদ পুলিশই
অপরদিকে রামপুরহাট বগটুইয়ের ঘটনায় পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন এদিন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, 'কোথাও কিছু হলে প্রত্যাঘাত তো হবে। যদি ডিএসপি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যেতে তাহলে এটা হত না। রামপুরহাটে অনেক ভূল হয়েছে, তার খেসারত দিতে হয়েছে সরকারকে।' পাশাপাশি, বগটুই নিয়ে ফের মামলা হয়েছে হাইকোর্টে। 'নিয়ম না মেনেই বগটুইয়ের ঘটনার পর ক্ষতিপূরণ দিয়েছে রাজ্য সরকার। চাকরি দিয়ে আদতে সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো বিষয়টাই বেআইনি।' এমনই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হল জনস্বার্থ মামলা। মামলার প্রেক্ষিতে বগটুইকাণ্ডে রাজ্য়ের তরফ থেকে হলফনামা তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন, ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে তরুণীকে অসংখ্যবার ধর্ষণ, শিউরে উঠেছে কোন্নগরবাসী, ধৃত ৪
প্রসঙ্গত, বগটুইহত্যাকাণ্ডের পর নিজে সেখানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। সেখান থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য আর্থিক সাহায্য এবং ক্ষতিপূরণের কথা বলেন। সম্প্রতি নিহতদের পরিবারের ১০ জনকে চাকরির নিয়োগপত্র দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এর পরেই 'চাকরি দিয়ে আদতে সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে' অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে এদিন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেন, আমি, আমার থেকে চাকরি দিয়েছি, কারও থেকে না। আমাদের দেখে শেখা উচিত। ঘুষ লুকিয়ে দিলে হয়। আমরা লকিয়ে কাউকে কিছু দিইনি', বলে বিরোধীদের তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী।