আবহাওয়া দফতর ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করার পরই তৎপর লালবাজার। কারণ গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির জেরে কলকাতার নানা প্রান্ত জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। এবার দুর্যোগের আশঙ্কা আরও প্রবল হওয়ায় আগে থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে তারা।
দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ার যেন নামই নেই। একটা দুর্যোগ কাটতে না কাটতেই চোখ রাঙাচ্ছে আরও একটা। পুজোর (Durga Puja) আগে নাজেহাল অবস্থা দক্ষিণবঙ্গের (Suth Bengal) বাসিন্দাদের। রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস (Cyclone Warning) দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। গভীর নিম্নচাপ (Depression) আজ সন্ধের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলে জানানো হয়েছে। আর এর জেরেই রবিবার থেকে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে (Coastal District) বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণ। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির (Heavy Rain) পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে আজ থেকেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বদলে যেতে পারে আবহাওয়া। ভারী বৃষ্টির ফলে বাড়বে নদীর জলস্তর (River Level)। আর এর জেরে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলি ফের প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গ্রামের পাশাপাশি শহরেও জমতে পারে জল। সোমবার ফের জমা জলে (Water logged) সমস্যায় পড়তে পারেন নিত্যযাত্রীরা। এনিয়ে শনিবার জরুরি বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যসচিব (Chief Secretary) হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।
এদিকে আবহাওয়া দফতর ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করার পরই তৎপর লালবাজার (Lalbazar)। কারণ গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির জেরে কলকাতার নানা প্রান্ত জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। এবার দুর্যোগের আশঙ্কা আরও প্রবল হওয়ায় আগে থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে তারা। কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) তরফে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। এই দলে থাকছেন কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation), পূর্ত দফতর, দমকল ও সিইএসসি-র প্রতিনিধিরা। এছাড়া লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে (Control Room) খোলা হয়েছে ইউনিফায়েড কম্যান্ড সেন্টার। কলকাতা পুলিশের তরফে নোডাল অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায় চৌধুরী।
নিউমার্কেট, পার্কস্ট্রিট, ভবানীপুর, কালীঘাট, আলিপুর, ওয়াটগঞ্জ, একবালপুর, এই পাঁচটি এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ২২টি দলকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এছাড়াও পুলিশ ট্রেনিং স্কুল ও বডিগার্ড লাইনে পাঁচটি বিপর্যয় মোকাবিলা দল তৈরি রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে এনডিআরএফ। এনডিআরএফের ১৫টি দল উপকূলের জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে। দুর্গতদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা, বিপজ্জনক বাড়ির তালিকা প্রস্তুত, ত্রাণ শিবিরের জন্য পোশাক ও খাবার মজুত রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, কলকাতা পুরসভার সহযোগিতায় জল নিকাশি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা নৌকা ও ক্রেন মজুত রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'গুলাব', প্রবল বর্ষণ দক্ষিণবঙ্গে, রেড অ্যালার্ট নবান্নের
ঝড়-বৃষ্টির জেরে এর আগেও কলকাতায় গাছের ডাল ভেঙে বা গাছ পড়ে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। আর সেগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আগে থেকেই তৎপর প্রশাসন। বিপর্যয় মোকাবিলা দলগুলি দড়ি, গামবুট ও গাছকাটার যন্ত্র নিয়ে তৈরি রয়েছে। বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের ইতিমধ্যেই নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে পুলিশের তরফে।
আরও পড়ুন- মনুয়া কাণ্ডের ছায়া বংশীহারীতে, প্রেমিকের সাহায্যে স্বামীকে খুন করে ঝোলালো মহিলা
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ থেকেই দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে পারে। রবিবার থেকে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। শনিবার কলকাতা-সহ দুই ২৪ পরগনা এবং দুই মেদিনীপুরে বৃষ্টি হবে। রবিবার বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে। তার সঙ্গে বৃষ্টি হতে পারে ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, হুগলি, পুরুলিয়ায়। উপকূলবর্তী এলাকায় বইবে ঝোড়ো হাওয়া। সমুদ্র উত্তাল থাকায় আজ থেকে বুধবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।