কলকাতায় কোভিড চিকিৎসায় হাসপাতালের বেডের কী অবস্থা,জেনে নিন সেই কাহিনি

  • কলকাতায় পাড়ায় পাড়ায় রয়েছে হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোম
  • কলকাতার বুকে রয়েছে বহু বড় মাল্টি স্পেশালিটি হসপিটাল
  • এই তালিকায় যেমন রয়েছে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল
  •  এইসব হাসপাতালে নেই করোনা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত বেড

Asianet News Bangla | Published : Apr 28, 2020 11:42 AM IST / Updated: Apr 28 2020, 05:27 PM IST

কলকাতায় পাড়ায় পাড়ায় রয়েছে হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোম। এছাড়াও কলকাতার বুকে রয়েছে বহু বড় মাল্টি স্পেশালিটি হসপিটাল। এই তালিকায় যেমন রয়েছে সরকারি হাসপাতাল তেমনই বেসরকারি হাসপাতাল। কিন্তু কোভিড ১৯-এর চিকিৎসায় এইসব হাসপাতালে নেই করোনা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত বেড। 

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে আলিপুর এলাকায় সিএমআরআই ও বিএমবিড়লা হাসাপাতাল। এখানে কোভিড ১৯ চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামো নেই। এই হাসপাতালের কাছেই রয়েছে উডল্যান্ড হসপিটাল। সেখানে দুটো মাত্র আইসোলেশন বেড রয়েছে। ফলে এখানে আইসোলেশন সম্ভব হলেও করোনা চিকিৎসা সম্ভব নয়।

কোন ধরনের 'কোভিড রোগী' থাকতে পারবে বাড়িতে, নির্দেশিকা জারি করে জানাল স্বাস্থ্য় ভবন..

এবার দেখা নেওয়া যাওয়া যাক কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল। সেখানে কোভিডের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থাই নেই। অন্য হাসপাতাল থেকে রোগীর লালারস পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু চিকিৎসার কোনও বন্দোবস্ত নেই। একাই অবস্থা এনআরএস-এ সরকারি হাসপাতালের। এই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে মৃত্যু হয়েছিল এক করোনা পজেটিভ রোগীর।  যদিও মৃত্যুর আগে তার শরীরে যে করোনার জীবাণু রয়েছে তা নির্ধারণ  করা যায়নি। তাঁকে করোনা উপসর্গ দেখে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। এখনও যা খবর তাতে এনআরএস-এ সরকারিভাবে আইসোলেশনের কোনও ব্যবস্থা নেই। কোভিড-এর চিকিৎসাও এখানে সম্ভব নয়।

রাজ্য়ের চিকিৎসার ইতিহাস বলছে, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ রাজ্য়ের অন্য়তম বৃহৎ হাসপাতাল। যেখানে প্রায় দিনে লক্ষ মানুষ চিকিৎসা করাতে ভিড় জমান। এহেন হাসপাতালে  একদিকে জুনিয়র ডাক্তার সহ নার্স ও সাফাইকর্মী ও সিনিয়র চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।  বেশকিছু হস্টেলকে সেল্ফ কোয়ারান্টাইন করে দেওয়া হয়েছে। অথচ এই হাসপাতালে কোভিড ১৯ -এর কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। এবার চলুন আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে আইসোলেশনের বন্দোবস্ত আছে। কিন্তু এখানে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে হচ্ছে চিকিৎসার জন্য়।

স্বাস্থ্য় ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে এমআর বাঙ্গুরে ৩৫০ টিরও বেশি বেড রয়েছে, যেখানে করোনার চিকিৎসা হচ্ছে। এখানে  এখনও ১৪০ টি বেড ফাঁকা রয়েছে। বেলেঘাটা আইডিতে রয়েছে ৮২টি বেড। করোনা চিকিৎসায় বেলেঘাটা আইডি সবচেয়ে অগ্রণী হাসপাতাল। সরকারি সূত্রে দাবি,  এখানে ১৬টি বেড খালি রয়েছে। নিউটাউনে খোলা হয়েছে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র।  সিএমসিআই-এতে ৩২৪টি বেড এই মুহূর্তে খালি রয়েছে বলে সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। বলতে গেলে কলকাতা মহানগর এলাকায় ৫৮০টি বেডে খালি রয়েছে। কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, এর অধিকাংশতেই ভিভিআইপি এবং সরকারি সুপারিশের কোটার চাপ রয়েছে।

কোন জোনে আপনার বাড়ি! রেড, গ্রিন না অরেঞ্জ.

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আরও এক সরকারি হাসপাতাল পার্ক  সার্কাসের  ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ। এখানে করোনা চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামোই নেই। সল্টলেক আমরিতে ২৬টি জেনারেল বেড রয়েছে। যেখানে করোনার চিকিৎসা হচ্ছে।এছাড়াও সেখানে রয়েছে মাল্টি সিসিইউ বেড। এখানেও অন্তত ১৫টি বেড মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ফাঁকা ছিল। একইভাবে ঢাকুরিয়া আমরিতে করোনা চিকিৎসায় ৫টি জেনারেল বেড ও দুটি  সিসিইউ বেড নির্ধারিত করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখানে কোনও বেড ফাঁকা নেই।

ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসে রয়েছে ফোর্টিস হসপিতাল। সেখানে করোনা চিকিৎসায় ৮টি জেনারেল বেড ও ৮টি সিসিইউ বেড রয়েছে। এই সবগুলোই  ভর্তি। মেডিকা সুপার স্পোশালিটি হসপিটালে রয়েছে ১০টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট-এর বেড। কিন্তু এখানে সব বেডই ভর্তি। মুকুন্দপুর আরএন টেগর হাসপাতালে রয়েছে ৫টি সিসিইউ বেড। এখানেও কোনও বেড ফাঁকা নেই। মুকুন্দপুর আমরিতে ৫টি আইসোলেশন বেড রয়েছে। কিন্তু করোনার  চিকিৎসা পরিকাঠামো এখানে নেই। পিয়ারলেস হাসপাতালে ৭টি জেনারেল বেড ও ৩টি সিসিইউ বেড রয়েছে। এখানেও কোনও বেড ফাঁকা নেই। সল্টলেক কলোম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালে দুটি জেনারেল বেড ও দুটি সিসিইউ বেড রয়েছে। যার একটিও খালি নেই। ইএমবাইবাসের কাদাপাড়াতে রয়েছে অ্যাপোলো হসপিটাল  সেখানে ৫টি জেনারেল বেড ও ৮টি সিসিইউ বেডে করোনা চিকিৎসা চলছে। এখানেও সব বেড ভর্তি।

বাড়ি রাখা যাবে না করোনা রোগীকে, মমতার 'উল্টো পথে' স্বাস্থ্য়ভবন.

মধ্য় কলকাতায়  রয়েছে বেলভিউ হাসপাতাল। সেখানে ৪টি আইসোলেশন বেড রয়েছে। এই বেডগুলোতে বাইরের কোনও রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। আইএলএস নাগেরবাজার হাসপাতালে রয়েছে ৪টি জেনারেল বেড। কিন্তু স্যানিটাইজেশনের জন্য় এখানে করোনা  রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। আইএলএস হাওড়া শাখায় ২৮টি সিসিইউ বেড আছে। এই সবকটি  ভর্তি। হাওড়াতে রয়েছে নারায়ণা হাসপাতাল। সেখানে একটিমাত্র বেডে করোনা চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু সেই বেডও খালি  নেই।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, কলকাতার জনসংখ্যার প্রেক্ষিতে করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালে বেডের সংখ্য়া খুবই কম। স্বাভাবিকভাবেই যারা করোনা পজিটিভ হচ্ছেন, তাদের সঙ্গে সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদেরও কোয়ারান্টাইন করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই কোয়ারান্টাইন হচ্ছে সরকারি ব্যবস্থায়। কারণ,পেইড কোয়ারান্টাইনে থাকার মতো সামর্থ অদিকাংশের নেই। এমনকী করোনার চিকিৎসায় ডাক্তার এবং নার্সদেরও অপ্রতুলতা রয়েছে। বহু স্থানেই অন্য় হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক নিয়ে এসে কোভিড ১৯ হাসপাতালে ডিউটি করানো হচ্ছে। এহেন জটিল পরিস্থিতিতে কিছু কোভিড ১৯ পজিটিভ রোগীকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানো গেলে হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে বলেই মনে করচে স্বাস্থ্য় দফতর। 

Share this article
click me!