সোমবার পর্ণশ্রীর সেনপল্লি এলাকায় একটি বহুতলে সুস্মিতা মণ্ডল (৪০) ও তমোজিতের গলা নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়। সুস্মিতা পেশায় একজন শিক্ষিকা। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সময় সুস্মিতা ও তমোজিত্ ঘরে ছিলেন।
অনলাইনে ক্লাস চলছিল। সেই কারণেই পরনে ছিল স্কুলের ইউনিফর্ম। টাইও বাঁধা ছিল গলায়। আর ওই অবস্থাতেই বিছানায় পড়ে ছিল তমোজিৎ মণ্ডলের (১২) নিথর দেহ। ক্লাস চলাকালীনই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। বেহালার পর্ণশ্রীতে মা ও ছেলেকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় দানা বাঁধছে রহস্য। বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে তাঁদের দু'জনের রক্তাক্ত মৃতদেহ।
সোমবার পর্ণশ্রীর সেনপল্লি এলাকায় একটি বহুতলে সুস্মিতা মণ্ডল (৪০) ও তমোজিতের গলা নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়। সুস্মিতা পেশায় একজন শিক্ষিকা। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সময় সুস্মিতা ও তমোজিত্ ঘরে ছিলেন। বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরত হওয়ায় ওই সময় বাড়ি ছিলেন না সুস্মিতার স্বামী তপন মণ্ডল।
প্রতিদিনের মতো ওইদিনও বিকেলের দিকে তমোজিৎকে পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, দরজা বন্ধ থাকায় একাধিকবার ডাকাডাকি করেন। কিন্তু, কেউ দরজা খোলেনি। তারপর বাধ্য হয়ে তিনি চলে যান। এরপর প্রতিদিনের মতো সোমবার সন্ধেয় ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ি ফেরেন তপন। ঘরে ঢুকে দেখেন বিছানা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আলাদা আলাদা ঘরে বিছানার উপর পড়ে রয়েছে স্ত্রী ও ছেলের মৃতদেহ। তপনের বয়ান অনুযায়ী, তিনি যখন বাড়িতে ফিরেছিলেন তখন ফ্ল্যাটের দরজা খোলাই ছিল। অথচ গৃহশিক্ষকের বয়ান অনুযায়ী বিকেলে ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ ছিল। এই দু'জনের বয়ানকে কেন্দ্র করে ধোঁয়াশা বাড়তে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন- রাজ্যে ডেল্টা প্লাসে আক্রান্ত আরও এক, পুজোর আগে বাড়ছে উদ্বেগ
প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, চপার দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে মা ও ছেলেকে। দুটি আলাদা ঘর থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ফ্ল্যাটের মধ্যে জোর করে প্রবেশ করার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আততায়ী মৃতদের পরিচিত ছিল বলে অনুমান পুলিশের। এমনকী, এত বড় ঘটনার পরও কোনও চিৎকার শুনতে পাননি প্রতিবেশীরা। ফলে একাধিক আততায়ী ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া তমোজিৎ যে ফোন দিয়ে অনলাইন ক্লাস করছিল সেই ফোনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারে পুলিশ। কারণ যিনি সেই সময় ক্লাস নিচ্ছিলেন তিনি কোনও কিছু দেখেছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।
আরও পড়ুন- নিম্নচাপের জেরে আজ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গে, মৎসজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুস্মিতা অত্যন্ত সতর্ক থাকতেন। আইহোল দিয়ে না দেখে কখনও তিনি দরজা খুলতেন না। এখানেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে তদন্তকারীদের মনে, তাহলে কি এই ঘটনার সঙ্গে পরিচিত কেউ যুক্ত রয়েছেন? সেই কারণে আইহোল দিয়ে দেখার পর পরিচিতকে দেখেই সুস্মিতা দরজা খুলে দিয়েছিলেন। ফলে খুব সহজেই ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করেছিল আততায়ী।
আরও পড়ুন- কাটমানি না দেওয়ায় মেলেনি আবাস যোজনার ঘর, পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ ব্যক্তির
ঘর থেকে কিছু সোনার গয়না, মোবাইল ফোন ও চাবি খোয়া গেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তপনকে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি গৃহশিক্ষককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ফ্ল্যাটের বাকি আবাসিকদের ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এই ঘটনায় পরিচিতদের মধ্যে কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।