তরণী তখন মডেল বলে নিজের পরিচয় দিত হবু শ্বশুড়বাড়িতে। এদিকে হবু বর তখন এমসিএ পড়ছে। তরুণী সাবলম্বি, ছাত্রাবস্তায় প্রেমিককে নিয়ে যেত মন্দিরে। সিঁদূর দেখিয়ে বলত' আমায় পরিয়ে দে।' তারপর এহেন সোহাগে, পড়াশোনা কারই বা মাথায় থাকে। এদিকে বাড়ির অমতে তারপর মাঝেমাঝেই বেশী দেরি করে ফিরবে বলে তরুণী তার এমসিএ প্রেমিককে নিয়ে রাতে আর ফিরতই না। তরুণী আর কেউ নয়, ময়দানের একটি ক্লাবের প্রাক্তন কর্মকর্তার পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী। জুনিয়ার খুন হওয়ার পর বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত প্রিয়াঙ্কাকে ফের ব্যারাকপুর আদালতে তোলার কথা।
২০০৯ এর শুরু তখন জুনিয়রকে রাতের এক পার্টিতে নিয়ে যায় প্রিয়াঙ্কা। জুনিয়ারের মা শ্বেতাদেবী জানিয়েছেন, 'রাতেই ফেরার কথা ছিল ওঠে। অনেক রাত হয়ে যেতে ওরা জানায় পরের দিন সকালে ফিরবে ওরা।' পরেরদিন অনেক বেলায় প্রিয়াঙ্কার গাড়িতে ফেরেন ঘরের ছেলে জুনিয়র। শ্বেতা দেবী আরও জানান, 'গাড়ি থেকে নেমে মুন বলে, এই নাও তোমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলাম। আমি বারান্দা থেকে চিৎকার করে বলে সারারাত বাইরে থাকিস তোঁদের বাড়ির লোকেরা কিছু বলে না কেন। মুন আমাকে বলে , ওদের বাড়ির লোকেরা কেউ কিছু কারওর খবর রাখে না। যে যার মতো বাড়ি ফেরে।'
তখন জুনিয়ার মৃধা বেলঘরিয়ার একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। রাতের শহর যে মায়াবি একথা প্রায় সকলেই মেনে নেন। সেই রাতের শহরেই যদি ঘি-আগুন পাশাপাশি থাকে , এবং এসে মেশে উত্তরের হাওয়া। তখন মাথা আর কাজ করে না বোধয়। তেমনই এক সফরে, অনেকদিন পর প্রিয়াঙ্কা আসে জুনিয়ারের বাড়িতে। শ্বেতাদেবী জানান,' তাঁর বান্ধবীর বিয়েতে বাবিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। রাতে ফিরে আসবে প্রমিশ করায় আমি বাবিকে যেতে দিই। রাতের দিকে আবার মুনের ফোন আসে। কাকিমা আমরা একটু আনন্দ করছি। জুনিয়ার কাল সকালে ফিরবে। কিন্তু পরের দিন সকালে ফিরল সে শাঁখ নিয়ে।'
জুনিয়ারের বাবা সমরেশ মৃধা জানিয়েছেন,' আমার ছেলে বা আমরা না হয় জানতাম না। কিন্ত মুন যে বিবাহিত, সে কথা তো ও নিজে জানত। তারপরেও কেন বারবার আমার ছেলেকে ও বিয়ের জন্য প্ররোচিত করল। শ্বেতা দেবী জানিয়েছেন, ছেলে আমার প্রায়ই বলত, জানো মা, মুন আমাকে বিভিন্ন মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বলে, আমাকে বিয়ে কর না। এখানেই সিঁদূর পরিয়ে দে।' তখনও কেউ জানত না মডেল মুন যে আগেই বিবাহিত।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১২ জুলাই রাতে বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেসওয়েতে খুন হয়েছিলেন বছর ২৪-এর তরুণ জুনিয়ার মৃধা। বেসরকারি সংস্থার কর্মী সমরেশ মৃধার ভারি পছন্দের ছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার জুনিয়ার। তাতেই অনুপ্রাণিত হয়ে ছেলের নাম রেখেছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন সাম্বার তালের ছন্দেই হয়তো জীবনে ডালা মেলবে বেলঘড়িয়ার জুনিয়ার। ডানা মেলেছিল জুনিয়ার। কিন্তু সেটা ছিল মৃত্যুর দেশের উদ্দেশে। মৃত্যুর সময় দুহাতটা মেলা ছিল জুনিয়ারের। যেন সে উড়ে যাচ্ছিল এক অজানার দেশে। ঘাড়ের কাছে ছোট্ট ক্ষতটা যদি নজরে না আসতো তাহলে হয়তো কেউ জানতেও পারত না তরুণ ওই আইটি ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু হয়েছিল একটা বুলেটে। উল্লেখ্য,জুনিয়ার খুন হওয়ার পর বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত প্রিয়াঙ্কাকে ফের ব্যারাকপুর আদালতে তোলার কথা।