তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কৃষ্ণ কল্যাণী। পাশাপাশি প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমোকে।
এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর ঠিক সেই সময়ই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন উত্তরবঙ্গেরই আরও এক বিধায়ক। সব জল্পনাকে সত্যি করে আজ তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) হাত থেকে ঘাসফুলের পতাকা নিজের হাতে তুলে নেন রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী (Krishna Kalyani)। বুধবার দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হোটেলে অনুষ্ঠিত হওয়া এই যোগদানপর্বে ছিলেন তৃণমূলের হিন্দিভাষী সেলের সভাপতি তথা জোড়াসাঁকোর বিধায়ক বিবেক গুপ্ত। এর ফলে বিজেপিতে বিধায়কের (BJP MLA) সংখ্যা আরও কমল।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। সাংসদ অর্জুন সিং (Arjun Singh) ও দেবশ্রী চৌধুরীর (Debasree Chaudhuri) হাত থেকে গেরুয়া পতাকা তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর বিজেপির টিকিটে জিতে বিধায়কও হন। তারপর কয়েকটা মাস ভালোই কেটেছিল। কিন্তু, এরপর থেকেই দলের সঙ্গে তাঁর সমস্যা তৈরি হয়। একের পর এক দল বিরোধী মন্তব্য করতে শুরু করেন তিনি। জেলা বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে জেলা নেতৃত্ব ও দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। এমনকী, দলীয় কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। তারপর সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকেই নিজের দফতরের মধ্যে থাকা দেবশ্রী চৌধুরীর ছবিও ঢেকে দিয়েছিলেন। এর কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছিলেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র (Conspiracy) করা হচ্ছে। কোনও ষড়যন্ত্রকারীর ছবি তিনি নিজের কার্যালয়ে রাখবেন না।
এরপর ১ অক্টোবর দলবিরোধী কাজের অভিযোগে কৃষ্ণ কল্যাণীকে শোকজ করেছিল বিজেপি। শোকজের সিদ্ধান্ত জানার পরেই দলত্যাগের কথা ঘোষণাও করেছিলেন তিনি। সেদিনই বিজেপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করেন। আর এবার নিজের পুরনো দলে ফিরে গেলেন তিনি। তাঁকে নিয়ে মোট পাঁচজন বিজেপি বিধায়ক যোগ দিলেন তৃণমূলে।
আরও পড়ুন- আপনার অজান্তেই কি আধার কার্ড কোথাও ব্যবহার হয়েছে, জেনে নিন খুব সহজেই
এদিকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কৃষ্ণ কল্যাণী। পাশাপাশি প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমোকে। তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা কথা দেন, তা করে দেখান। ভোটের আগে উনি যা যা বলেছিলেন, ক্ষমতায় ফিরে সব করে দেখিয়েছেন। আমি তা দেখে অভিভূত। ধন্যবাদ জানাই মমতাদি এবং অভিষেকদাকে। কেন্দ্র মানুষের জন্য কাজ করছে না। তাই দলবদলের সিদ্ধান্ত।" আর বিজেপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বিজেপি-তে ভাল কাজের কোনও মূল্যায়ন নেই। যা আছে তা শুধুই ষড়ষন্ত্র। এভাবে কোনওদিনও ভাল কাজ করা যায় না। ছ’মাস আগে ভুল করেছিলাম। এ বার তা শুধরে নিচ্ছি।" এছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতেও বিজেপি-র সমালোচনা করেছেন তিনি। তাঁর দলবদল প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "এটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। অনেকদিন ধরেই দলের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ ছিল না।"
আরও পড়ুন- 'কেউ বাঁচাতে পারবে না', আলাপন বন্দ্য়োপাধ্যায়কে খুনের হুমকি, তদন্তে গোয়েন্দা
বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই কৃষ্ণ কল্যাণীর দলবদল নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। কারণ যখন বাবুলের সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করেছিলেন বাকি বিজেপি নেতারা ঠিক তখনই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কৃষ্ণ। অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ তিনি যোগ দেন ঘাসফুল শিবিরে।
সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। তখনই তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে সব ছক কষা হয়ে গিয়েছিল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আজ শুধু তা বাস্তবায়িত হল মাত্র।