আত্মঘাতী সরকারি চিকিৎসক - কাঠগড়ায় মমতা সরকারের স্বজনপোষণ নীতি, ক্ষোভ বাড়ছে ডাক্তারদের

মৃত্যুই হল বদলির জেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করা বেহালার সরকারি চিকিৎসক ডা. অবন্তিকা ভট্টাচার্য্যের। প্রশ্ন তুলে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সরকারের স্বজনপোষণ নীতি নিয়ে।  
 

amartya lahiri | Published : Aug 31, 2021 12:52 PM IST

মনে একরাশ অশান্তি নিয়েই চলে গেলেন সরকারি চিকিৎসক ডা. অবন্তিকা ভট্টাচার্য্য। কোনওরকম পদোন্নতি না হওয়া এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে বারবার কলকাতায় বদলি চাওয়ার পরও জেলায় বদলি করার প্রতিবাদে, গত ১৬ই অগাস্ট গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তারপর প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে যমে-মানুষে টানাটানির পর সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বছর চল্লিশের এই চিকিৎসক। আর কটি মৃত্যু কাঠগড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছে রাজ্য সরকারকে। প্রশ্ন উঠছে, চিকিৎসকের  এই মর্মান্তিক পরিণতির পিছনে কি সেই তৃণমূল সরকারের স্বজন পোষণই দায়ী? 

চাকরি জীবনের প্রথম ৮ বছর অবন্তিকা, মেদিনীপুরের এক সরকারি হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিনের অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ছিলেন। তাঁর বাড়ি আদপে বেহালায়। স্বামীও পেশায় চিকিৎসক, মুর্শিদাবাদের নামী স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁদের আট বছরের ছোট্ট মেয়েটি আবার অটিজ্ম-এ আক্রান্ত। কাজেই বাড়ির কাছাকাছি কাজ করাটা তাঁর প্রয়োজনের মধ্যে পড়ে। এই কারণ দেখিয়ে অবন্তিকা চেয়েছিলেন, তাঁকে কলকাতার কোনও হাসপাতালে ভর্তি করা হোক। কিন্তু, আট বছর জেলায় পরিষেবা দেওয়ার পর, আবার সরকারি কর্তৃপক্ষ তাঁকে আরেক জেলা শহর ডায়মন্ড হারবারে বদলি করে। 

"

এরপরই চরম অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক মহল থেকে দাবি করা হয়েছে, অবন্তিকা ভট্টাচার্য ইস্তফাও দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর অবসাদের ছাপ রয়েছে তাঁর ফেসবুক পোস্টেও। চরম সিদ্ধান্ত নএওয়ার আগে তিনি ওই ফেসবুক পোস্টে বলেছিলেন, 'কোথায় শান্তি পাব? চাকরি ছেড়ে দিলে? দীর্ঘ আট বছর ধরে জেলায় কাজ করার পর, কোনও পদোন্নতি ছাড়াই আবারও সেই জেলাতেই বদলি করা হল। এভাবে আর পারছি না।

তারপর গত ১৬ অগাস্ট, বেহালার বকুলতলার ডায়মন্ড সিটি ওয়েস্ট আবাসনের ফ্ল্যাটেই গায়ে অ্যালকোহল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন অবন্তিকা ভট্টাচার্য্য। নিজেকে পুড়িয়ে অপমানের জ্বালা মেটাতে চেয়েছিলেন। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে প্রথমে বেহালার স্থানীয় এক নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে, শহরের এক সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। সোমবার রাতে চিকিৎসকদের লড়ই শেষ হয়ে যায়। 
আরও পড়ুন - ইন্টারনেট ছাড়াই কাটাতে হতে পারে বেশ কয়েকটা দিন, আসছে তীব্র সৌরঝড় - সতর্ক করলেন গবেষকরা

আরও পড়ুন - যুদ্ধবিমান-কপ্টার-সাঁজোয়া গাড়ি ফেলে গেল মার্কিনিরা - সবই কি তালিবান দখলে, দেখুন ছবিতে ছবিতে

আরও পড়ুন - পাত্তারি গোটালো আমেরিকা - কাবুলে জুড়ে চলছে গোলাগুলির তালিবানি বিজয়োল্লাস, দেখুন ছবিতে ছবিতে
এদিকে অবন্তিকার এই মৃত্যু চিকিৎসক মহলে দীর্ঘদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বদলি নীতি নিয়ে জমতে থাকা ক্ষোভকে উসকে দিয়েছে। তুলনা টানা হচ্ছে বাম আমলের সঙ্গে। সেই সময়ে, প্রথম কয়েক বছর অন্য জেলায় পরিষেবা দেওয়ার পর বাড়ির কাছাকাছি কওনও জায়গায় বদলি করা হতো। পারিবারিক অসুবিধা থাকলে, বাড়ির কাছে বদলির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হতো। চিকিৎসকদের একাংশ বলচেন, বর্তমান সরকারের সময়ে বদলির ক্ষেত্রে একটাই নীতি, তা হল স্বজনপোষণ। আর এই কারণেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকরা দিনের পর দিন কলকাতা এবং কলকাতা লাগোয়া মেডিক্যাল কলেজগুলি কাজ করে চলেছেন, আর বাকিদের ঘুরিয়ে যাওয়া হচ্চে জেলায়। 

Share this article
click me!